সিলেটে ১০ মাসের বেতন-ভাতা না পেয়ে অন্তঃসত্ত্বার করুণ মৃত্যু
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ মে ২০২৫, ৪:০২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
টানা ১০ মাস বেতন-ভাতা না পেয়ে অর্থাভাবে অর্ধাহারে-অনাহারে থাকার পর অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন খোদ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেলের এক অন্তঃসত্ত্বা নারী কর্মী। তিনি হাসপাতাল শিশু বিকাশ কেন্দ্রের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছিলেন।
বুধবার ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই তিনি মারা যান। মারা যাওয়া কর্মীর নাম মেহেরজান বেগম মেরি (২৮)। তিনি চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ শিশু বিকাশ কেন্দ্রের শিশু মনোবিজ্ঞানী সাদিয়া আরিফিন রুনা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মেহেরজানের সহকর্মীরা জানান, ২০০৯ সালে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু বিকাশ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই মেহেরজান বেগম কর্মরত। বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নে। তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। ছেলেটির কগনিটিভ ডিলে বা বুদ্ধিগত জটিলতা রয়েছে। ছয় মাস আগে তার একটি কন্যা সন্তান হয়েছে। মৃত্যুকালে তিনি অন্তঃসত্ত্বাও ছিলেন। টানা গত ১০ মাস ধরে বেতন বন্ধ থাকায় তিনি চরম অভাব-অনটনে ছিলেন। প্রতিদিন বাড়ি থেকে শিশু বিকাশ কেন্দ্রের গাড়ি ভাড়া প্রতিদিন ১শ দেড়শ টাকা লাগত। এই ভাড়া জোগান দিতে না পেরে প্রতিদিন সহকর্মীদের কাছ থেকে চেয়ে নিতেন। বলতেন, বেতন হলেই দিয়ে দেব। প্রায় সাত মাস ধরে স্বামী অসুস্থ হওয়ায় সংসারের দায়ভারও পুরোটাই ছিল মেহেরজানের ওপর।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, মেহেরজান বেগম গত চার-পাঁচ দিন যাবত জ্বরে ভুগছিলেন। চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্তও ছিলেন। মঙ্গলবার সহকর্মীরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরদিন বুধবার তিনি মারা যান।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ শিশু বিকাশ কেন্দ্রের শিশু মনোবিজ্ঞানী সাদিয়া আরিফিন রুনা জানান, আমাদের কাছ থেকে প্রায় সময়ই টাকা নিতেন মেহেরুন। চাকরির বেতনই ছিল তার পরিবার চলার একমাত্র অবলম্বন। এমনকি দ্বিতীয় শিশু হওয়ার সময় গর্ভাবস্থায়ও কাজ করেছেন। টানা ১০ মাস বেতন বন্ধের পর প্রায়ই জিজ্ঞাসা করতেন, কবে বেতন হবে?
উল্লেখ্য, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় টানা ১০ মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না শিশু বিকাশ কেন্দ্রের চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চাকরি আছে কী নেই- এ বিষয়েও স্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের।