ওসমানীনগরে নদী দখলে জৌলুস হারাচ্ছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বারুনী মেলা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২২ অপরাহ্ণ
জিতু আহমদ:
ঐতিহ্যের বুড়ি নদী অবৈধ দখল ও দূর্ষণের ফলে সিলেটের ওসমানীনগরে শত বছরেরও অধিক পুরনো বারুনী মেলা জৌলুস হারাচ্ছে । প্রতিবছরের ন্যায়ে সোমবার দিনব্যাপী উপজেলার তাজপুর বাজারে অনুষ্টিত হয় ঐতিহ্যের এই মেলা। মেলা ঘুরে দেখা যায় হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি দোকান বসেছে, লোক সমাগম অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম , একটা সময় মেলায় আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত থাকতো এই মেলা,নারী, শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়সের সকল ধর্মের মানুষ বারুনী মেলাতে উৎসাহ ভরে অংশ নিতেন। কিন্তু আজ যেন এসব কিছুই অতীত।
জানা যায়, সনাতন ধর্মালম্বী প্রতি বছর দোল পুর্ণিমা তিথিতে শত বছর আগে বুড়ি-বরাক নদীতে পুণ্যস্নান করতেন। আর নদীর তীরে বসতো মেলা, কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বুড়ি নদী দখলের কারণে নদীতে স্নান আর হয় না। মেলাও ছোট পরিসরে বসে বাজারের অলিগলিতে।
কয়েক বছর আগেও গোয়ালাবাজার, তাজপুর, বোয়ালজুর, বুরুঙ্গা প্রভৃতি মোহনায় হাজার হাজার মানুষ স্নান করতে আসতেন বুড়ি নদীতে । আর তখন তাজপুর বাজারে সবচেয়ে বেশী লোক সমাগম ঘটতো। ঢাকা দক্ষিন মহাপ্রভূর মেলা আর তাজপুরের বারুনী মেলা হচ্ছে সিলেটের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী মেলা। বর্তমানে বুড়ি বরাক নদী ইতিহাস থেকে প্রায় হারিয়ে গেলেও ইতিহাসের পথ ধরে সে মেলা এখনো অনুষ্ঠিত হয়। তবে আগে মেলা একটানা ৭দিন ধরে চললেও বর্তমানে তা সীমিত আকারে (১ দিনে) এসে ঠেকেছে।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, মাটি, প্লাস্টিক, বেত থেকে শুরু করে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর পসার সাজিয়েছেন দোকানীরা। মেলার পরিসর ছোট হলেও এর মধ্যেই শতাধিক দোকানের এ মেলায় হাজারো মানুষের উপচে পড়া ভীড় প্রত্যক্ষ করা যায়। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা ব্যস্ত হয়ে উঠে খেলনা ও খাদ্য সামগ্রী কিনতে।
মেলা দেখতে আসা জাহেদ আহমদ বলেন,এখনও যে মেলা হয় সেটা দেখে ভালোও লাগছে। নদীতে তো হারিয়ে গেছে আস্তে আস্তে মেলাও নি হারিয়ে যায়। আগে আগে অনেক দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ এসে বুড়ি-বরাক নদীতে গোসল করে মেলা দেখে বিভিন্ন জিনিস কিনে বাড়ি ফিরত।এখন আর নদীও নেই তাই গোসল ও কেউ করে না।
মেলায় আগত বিক্রেতারা জানান, গত বছেরের চেয়েও এবছর বেচা-কেনা অনেকটা খুব কম। আগের মত মেলা জমছেনা। পূর্বে মেলাগুলোতে প্রচুর লোকসমাগম ঘটতো। বেচা-কেনাও নপশি হতো। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় মেলায় বিক্রেতাদের যত্রতত্র বসতে হয়।
তাজপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কবির আহমদ বলেন, গত কয়েক বছর আগেই এই বারুনী মেলায় প্রচুর লোকসমাগম হতো। কিন্তু দিন দিন মেলার আনন্দ যেনো কমে যাচ্ছে। মেলা আরো প্রানবন্ত করতে আমরা এ বছর ভিন্ন একটি উদ্যোগ নিয়ে ছিলাম। মানুষের মধ্যে উৎসাহ বাড়াতে র্যাফেল ড্র এর মাধ্যমে ৫০ জন বিজয়ীকে পুরস্কার দেয়া হয়। যার মধে প্রথম পুরুস্কার ছিল একটি ১০০ সিসির মোটরসাইকেল। আপনারা সবাই দোয়া করবেন আগামীতে আরো বড় পরিসরে মেলার উদ্যোগ নেওয়া হবে।