প্রকল্প বাতিলে সিলেট নগরে উন্নয়ন নেই
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৯ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরুঃ
বরাদ্দ নেই। কাজও নেই সিলেট নগরে। বিগত সরকারের আমলে নেয়া অনেক প্রকল্পই বাতিল। গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনাগুলোও ঝুলে আছে। মন্ত্রণালয়ে নড়ছে না ফাইল। সবই রুটিন ওয়ার্ক। এ কারণে সিলেট নগরের উন্নয়ন কাজ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বর্ষা এলেই ডুবে সিলেট নগর। এ নিয়ে নানা সময় পরিকল্পনা গ্রহণ করে প্রস্তাবনা পাঠানো হলেও সেই প্রকল্প অনুমোদনই হয়নি। এ নিয়ে চিন্তায় সংশ্লিষ্টরা। তবে তারা বলছেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নির্ভর প্রতিষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড কমই হয়। এবারো তাই হচ্ছে। এ প্রথা ভেঙে সরকারের তরফ থেকে বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন বলে জানান তারা। গেল বছর পরপর দু’দফা বন্যার কবলে পড়েছিল সিলেট নগরের মানুষ। নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো প্রায় ১৫ দিন পানির নিচে তলিয়ে ছিল। অভিজাত এলাকা বলে নগরের উপশহরও ডুবন্ত ছিল। এর আগে ২০২২ সালে সিলেট নগরে প্রায় ৪০ ভাগ এলাকা ডুবে গিয়েছিল। পাহাড়ি ঢলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল সিলেট। সিলেট নগরে পূর্বের ২৭টি ওয়ার্ড ছিল। প্রায় আড়াই বছর আগে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এলাকা বর্ধিত করে ৪২টি ওয়ার্ডে পরিণত করেছেন। নগরের আয়তন এখন অনেক বড়। নতুন করে ১৫টি ওয়ার্ডে শতাধিক এলাকাকে সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত করা হয়।
এরইমধ্যে ২০২৩ সালে সিটি নির্বাচনে ভোটও দিয়েছেন নতুন অন্তর্ভুুক্ত হওয়া এলাকার ভোটাররা। এখনো তারা পাননি নাগরিক সুবিধা। ৫ই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর সিলেট থেকে পালিয়েছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। মাঠে ছিলেন অধিকাংশ সিটি কাউন্সিলর। কর্মকর্তাদের নিয়ে তারা পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। সরকারি আদেশে মেয়রের সঙ্গে কাউন্সিলরদের বরখাস্ত করায় অভিভাবকশূন্য হয় নগর। এখন নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের দায়িত্বে রয়েছেন সিটি করপোরেশন ও প্রশাসনের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। তবে তাদের অনুপস্থিতির কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। নাগরিক সুবিধাও শূন্যের কোটায়। সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান প্রশাসক সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী। তিনি সিটি করপোরেশনে খুবই কম আসেন। ফলে তাকে নিয়েও কর্মকর্তা, কর্মচারীদের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে। কয়েক মাস আগে তার অনুপস্থিতির কারণে ঠিকাদারদের কাজের প্রায় ৩০ কোটি টাকা বিলও আটকে ছিল। পরে ঠিকাদারদের আল্টিমেটামের মুখে বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, সিলেট সিটি করপোরেশনের উন্নয়নের জন্য আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি প্রস্তাবনা বিগত পরিষদের সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। সেটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ। নাগরিক সুবিধার জন্য স্বল্প ও মধ্যম মেয়াদে এই কাজগুলো করার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই প্রকল্প বাতিল করে দেয়া হয়। এই অবস্থায় সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা প্রকল্প ছাড় করিয়ে নিয়ে আসতে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর দ্বারস্থ হয়েছিল। সাবেক মেয়র লবিং করার পর আপাতত ৫০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জরুরি ভিত্তিতে প্রদানে সংশ্লিষ্টদের তরফ থেকে মৌখিক অনুমতি পেয়েছিলেন। পরে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ গত ১০ই মার্চ ৫০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু সেই প্রকল্প প্রস্তাবনা এখনো পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি। বন্যার ছোবল থেকে রক্ষা পেতে নগরের জন্য একটি প্রস্তাবনা সাবেক দুই মেয়রের সময় চিন্তাভাবনা করে গ্রহণ করা হয়েছিল। এই প্রকল্পে ছিল- ৩১০০ কোটি টাকার একটি প্রস্তাবনা। এতে ছিল সুরমা খনন, বেড়িবাঁধ নির্মাণ, ছড়া উদ্ধারসহ নানা কাজ।
৫ই আগস্টের আগে ও পরে এই প্রস্তাবনা বারবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এবার চলে আসছে বর্ষা মৌসুম। কোনো প্রকল্পই ছাড় না পাওয়ায় পূর্বের মতো শঙ্কা রয়েই গেছে। নগরের প্রায় আড়াই বছর আগে নতুন অন্তর্ভুুক্ত হওয়া ১৫টি ওয়ার্ডে ১২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প ছিল। সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে কিছু কিছু কাজে হাত দেয়া হয়েছিল। সেই কাজগুলোও অর্থের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ছে। প্রকৌশল শাখা জানায়, নতুন অন্তর্ভুুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোতে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ প্রয়োজন। রাস্তাঘাট, স্যানেটারি, ড্রেনেজ ব্যবস্থা পূর্বের মতো রয়েছে। অথচ টাকার অভাবে এসব ওয়ার্ডে কাজ করা যায়নি। সাবেক কাউন্সিলররা রাস্তাঘাট ও ড্রেনের কিছু কিছু কাজ শুরু করেছিলেন। সেসব প্রকল্প এখন থেমে যাচ্ছে। এ ওয়ার্ডগুলোতে প্রায় ৪০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। গত বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রাস্তাঘাট এখনো পুরোপুরি সংস্কার হয়নি। কোভিডে পাওয়া ৩৯ কোটি টাকার তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া অর্ধেক এলাকায় কিছু কিছু সড়ক মেরামত করা সম্ভব হয়েছে। তবে, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সড়কের কাজে হাত দেয়া সম্ভব হয়নি। নগরের উপশহরে পুরোপুরি কাজ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, বিগত সরকারের সময় চট্টগ্রাম শহরে ফ্লাইওভার সহ নানা কাজ হয়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে সিলেট নগরে কোনো কাজই হয়নি। উন্নয়নের ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও সিলেটের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিশেষ করে বন্যায় বিপর্যস্ত হয় সিলেট। এজন্য সিলেটকে প্রয়োজনীয় কাজের জন্য যে প্রকল্প প্রস্তাবনাগুলো পাঠানো হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি বাতিল করা হয়েছে। আবার বড় প্রকল্প অনুমোদিতই হয়নি। এ কারণে উন্নয়নের অর্থকষ্ট কাটছে না। এজন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিশেষ দৃষ্টি সিলেটের প্রতি থাকা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।