সিলেটে একপক্ষ ভাঙচুর করে, আরেক গ্রুপ লুটে
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
সিলেটে ভাঙচুর করে এক গ্রুপ আর লুটপাটে নামে আরেক গ্রুপ। সেটি অনেকটা পরিকল্পিত। তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন নগরবাসী। ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত। এমন ঘটনা সিলেটে অতীতে কখনো হয়নি। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে বিভিন্ন সময় ভাঙচুর হয়েছে। যারা করেছে তারা সবাই পরিচিত ছিল। কয়েক বছর আগে নগরের আল-হামরা শপিং সিটিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল স্বেচ্ছাসেবক লীগ ক্যাডার পীযূষ কান্তি দে’র নেতৃত্বে। কিন্তু আচমকা হামলা ও লুটপাটের ঘটনা এবার বিরল। যা ভাবিয়ে তুলেছে নগরের মানুষকে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সিলেটে যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে সেটি পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে। ৫ই আগস্টের পর থেকে এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে। এতে সিলেটকে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সোমবার সিলেটে অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়। এতে করে গোটা নগরেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। তারা বলেন, প্রথমে ২০-২৫ জনের একদল যুবক মুখে কাপড় বেঁধে আসে। তারা স্লোগান দিয়ে দোকানে ভাঙচুর চালায়। প্রায় ১০-১৫ মিনিটব্যাপী তাণ্ডব চালিয়ে তারা চলে যায়। এই যুবকরা যাওয়ার পর প্রতিটি জায়গায় আলাদা আলাদাভাবে কিশোর গ্রুপের সদস্যরা লুটে নামে। তারাও মিছিল সহকারে আসে। এরা সবাই অপরিচিত। তাদেরকে সিলেটের রাজপথে অতীতে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি। ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন করেন, প্রথমে যারা উস্কানিমূলক ভাঙচুর করে তাদের সঙ্গে লুটপাটকারীদের যোগাযোগ রয়েছে। তা না হলে দোকানের বাইরে থেকে ভাঙচুর করার পর অপর পক্ষ এলো কিভাবে। পাশাপাশি একেক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে একেকটি দোকানে ভাঙচুর করা হয়। এতে মনে করা হচ্ছে কয়েকশ’ তরুণ এই লুটপাটে জড়িত। সেনাবাহিনীর সদস্যরা আসার পর তারা পালিয়ে যায়।
সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের মহাসচিব আব্দুর রহমান রিপন জানিয়েছেন, সিলেটে কারা ভাঙচুর করছে সে প্রশ্ন সবার। পুলিশ প্রশাসনকে এ প্রশ্নের সমাধান দিতে হবে। আমরাও পুলিশের কাছে এ তথ্য জানতে চেয়েছি। তার মতে, সিলেটে পরিকল্পিতভাবে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর করা হচ্ছে। এই ভাঙচুর ও হামলা পরিকল্পিত মনে করার যৌক্তিক কারণও রয়েছে। একটি পক্ষ বা গোষ্ঠী সিলেটকে অস্থিতিশীল করতে এই কাজ করছে বলে জানান তিনি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি যেভাবে সহিংস হচ্ছে এতে ব্যবসায়ীরা নিজেরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। নতুবা সিলেটে ব্যবসা করা দায় হয়ে যাবে। সোমবারের ঘটনার পর থেকে সিলেটে ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক জেঁকে বসেছে বলে জানান তারা। একই কায়দায় ৫ই আগস্ট সিলেটে লুটপাট করা হয়েছিল। কিন্তু ওই লুটপাটের কোনো বিচার না হওয়ায় ওই গোষ্ঠী একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে বলে জানান তারা।
এদিকে, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) মোহা. সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ৭ই এপ্রিল চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বিভিন্ন পয়েন্টসহ আশপাশ এলাকা থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ছাত্র-জনতা প্রতিবাদ সমাবেশসহ বিক্ষোভ মিছিল করে। বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে উচ্ছৃঙ্খল দুষ্কৃতিকারীরা ইসরাইলের পণ্য বিক্রেতাদের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলাসহ ভাঙচুর এবং লুটপাট হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মীরবক্সটুলাস্থ রয়েল মার্ক হোটেলে ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনায় হোটেলের ম্যানেজার আব্দুল মতিন সরকার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৩০-৪০ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে থানায় সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। তিনি জানান, পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক ঘটনাস্থলের আশপাশে সিসি ফুটেজ সংগ্রহপূর্বক দুষ্কৃতিকারীদের শনাক্ত করে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে অভিযুক্তদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।