সিলেটে ভাঙচুর-লুটপাটকারী কারা?
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
সিলেটে রাতভর অভিযান চালিয়ে পুলিশ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ বলছে; ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তারা সবাই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। শুধু এই ১৪ জনই নয় আরও অনেককে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। আপাতত পরিস্থিতি শান্ত। তবে ক্ষত চিহ্ন রয়ে গেছে নগরে। ঘটনায় ক্ষুব্ধ মানুষ। শুধু যে কেএফসি কিংবা বাটাতে হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে তা নয়। রেস্টুরেন্ট, মিষ্টির দোকান, ফার্মেসিসহ নানা পণ্যের দোকানে হামলা ও লুটপাট হয়েছে। নগরে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তাদের বাধা কোনো কাজেই আসেনি। শেষে সেনা সদস্যরা মাঠে নামায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সিলেটে। বন্দরের বাটা জুতার দোকানে লুট করতে ভেতরে ছিল ১৫-২০ জন যুবক। এমন সময় সেনা সদস্যরা সেখানে যান। তারা যেতেই পালাচ্ছিলো লুটপাটকারীরা। সব ঘটনারই ভিডিও ছবি আছে।
এজন্য আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে পুলিশের জন্য সহজ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ওসি মো. জিয়াউল হক। তিনি বলেন- ঘটনার পরপরই পুলিশ সিসিটিভি ও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। এরপর আসামিদের চিহ্নিত করা হয়েছে। সোমবার বিকাল থেকেই ঘটনা শুরু। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সিলেট নগরীর মীরবক্সটুলা এলাকায় কেএফসি পরিদর্শন করেছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. রেজাউল করিম। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- যারাই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। পুলিশ কমিশনারের কথার সত্যতা রাতে মিলেছে। সন্ধ্যার পর থেকেই পুলিশ অভিযান শুরু করে। আর এই অভিযানে ধরা পড়ে কয়েকজন চিহ্নিত আসামি। কেউ কেউ আবার লুটের ছবি নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেন। উল্লাসের দৃশ্য দেখান।
যারা পোস্ট দিয়েছেন তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। চৌহাট্টার আল পাইন রেস্টুরেন্ট। জাসদ নেতা জাকির আহমদের মালিকানাধীন ঐতিহ্যবাহী এই হোটেল। সেখানেও হামলা, লুটপাট হয়েছে। কোতোয়ালি থানার ওসি জানান- ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা মামলা করেছেন। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। সিলেট নগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদীসহ মহানগর নেতারা বিকালে ট্রাক নিয়ে নগরে নামেন। যেখানেই লুটপাটের দৃশ্য দেখেছেন সেগুলো রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। কয়েস লোদী জানিয়েছেন- ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে বিকালে সিলেট বিএনপি’র তরফ থেকে মিছিল বের করা হয়। এ মিছিলটি আম্বরখানা এলাকায় গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শেষ হয়ে নেতাকর্মীরা যার যার বাড়ি চলে যান। এই সময় খবর আসে ভাঙচুরের। প্রথমে আমরা শুনতে পারি হাউজিং এস্টেট, আম্বরখানা এলাকায় ভাঙচুর হচ্ছে।
এ খবর পেয়ে আমিসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করি। এরপর আরও কয়েকটি স্থানে ভাঙচুরের খবর পাই। তিনি বলেন- একের পর এক খবর আসতে থাকায় বিএনপি’র নেতাকর্মীরা নগরে নেমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। রাত পর্যন্ত নেতাকর্মীরা কাজ করেছেন। এদিকে- ভাঙচুরের খবর পেয়ে সিলেটের সাবেক মেয়র ও বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীও দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নগরে নামেন। লুটপাট ঠেকাতে তিনি নগরবাসীকে সোচ্ছার হওয়ার আহ্বান জানান। সন্ধ্যায় তিনি সিলেটের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের মহাসচিব আব্দুর রহমান রিপন অভিযোগ করেন- কেএফসি ভাঙচুর করার পরপরই কিছুসংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল যুবক মুখে কাপড় বেঁধে নগরে তাণ্ডব শুরু করে। তারা শুধু তাণ্ডব চালায়নি, লুটপাটও করেছে।
এতে করে ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন বলে দাবি করেন তিনি। সাবেক মেয়র আরিফ ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে বলেন- যারা ভাঙচুর করছে তারা দুর্বৃত্ত। সম্মিলিতভাবে সবাইকে এক হয়ে ওদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলতে হবে। না হলে সিলেটের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। এজন্য সিলেট বিএনপি পরিবারের প্রতিটি সদস্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি। সিলেটে ভাঙচুর করলো কারা?- এটি এখন প্রশ্ন। কারা ভাঙচুর করেছে সেটি নিয়েও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুখ বন্ধ। তবে রাজনৈতিক নেতারা জানিয়েছেন- বিকালে নগরে সভা শেষে একটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল বের করে। আর এই প্রতিবাদ মিছিল বের করার পরপরই নগরের পরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠে।
ওই মিছিল থেকে কর্মীরা এসে মুখে কাপড় বেঁধে ভাঙচুর শুরু করে। কেউ কেউ বলছেন; পরাজিত শক্তিরা প্রতিবাদ কর্মসূচির আড়ালে সিলেটকে অশান্ত করতে এই ভাঙচুর করেছে। তারা বিভিন্ন গ্রুপের ভাগ হয়ে এ মিশনে অংশ নেয়। সেনা সদস্যরা মাঠে নামার পর তারা চলে যায়। এদিকে- নগরীর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক রাতে নগরব্যাপী ট্রাকযোগে মাইক নিয়ে সচেনতার লক্ষ্যে নগর বিএনপি’র পক্ষ থেকে প্রদক্ষিণ করা হয়। ফিলিস্তিন ও ইসরাইল ইস্যুতে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা না করে শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য সিলেটবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন- আমরা কোনো যুদ্ধ বা বিশৃঙ্খলা চাই না। আমরা সর্বত্র শান্তি চাই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে সিলেটের তথা দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে, এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। যারাই সুযোগ নিয়ে সিলেটের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে চায় তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাই।
গ্রেপ্তার হলো যারা: সিলেটে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরা হলো- কাজীটুলা এলাকার মো. রাজা মিয়ার ছেলে মো. রাজন, একই এলাকার আরব আলীর ছেলে ইমন, দীন ইসলামের ছেলে মো. রাকিব, লাল সাদ আহমদের ছেলে মিজান আহমদ, সওদাগরটুলা এলাকার মৃত আবুল বাশার মিয়ার ছেলে মো. আব্দুল মোতালেব, গোয়াইটুলা এলাকার লিয়াকত আলীর ছেলে সাব্বির আহমদ, কোম্পানীগঞ্জের ফরিদ মিয়ার ছেলে জুনাইদ আহমদ, মিরের ময়দান এলাকার মৃত মোস্তফা মিয়ার ছেলে মো. রবিন মিয়া, শাহী ঈদগাহ এলাকার মো. মহছন আহমদের ছেলে মোস্তাকিন আহমদ তুহিন, দরগাহ গেইট এলাকার আব্দুল ছাত্তারের ছেলে মো. দেলোয়ার হোসেন, শেখঘাট এলাকার শামীম আহমদের ছেলে মো. রিয়াদ, বালুচর নতুন বাজার এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে মো. তুহিন, বটেশ্বর বাজারের সেলিম রেজার ছেলে আল নাফিউ এবং নোয়াখালীর চাদমিল থানার পশ্চিম নাহার কিল গ্রামের সৈয়দ আলতাফ মানিকের ছেলে সৈয়দ আল আমিন তুষার।