কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ‘সকালের মক্তব’, ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে বঞ্চিত শিশুরা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ৭:২০ অপরাহ্ণ
জুবেল আহমেদঃ
গ্রাম বাংলার মুসলিম পরিবারের শিশুশিক্ষার মূলভিত্তি ছিলো মক্তব শিক্ষা। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে শিশু শিক্ষার এই অন্যতম মাধ্যম। মক্তব শিক্ষা ব্যবস্থা এখন আর দেখা যায় না। ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়ায় কিন্ডার গার্টেন, সকালের কোচিং ব্যবস্থার আড়ালেই হারিয়ে গেছে মক্তব শিক্ষা। এজন্য চিরায়ত বাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শত সহস্র বছরের জ্ঞানের আলো বিতরণকারী কোরআন শিক্ষাকেন্দ্র মক্তব।
একসময় বাংলার পথে-ঘাটে ভোরের পাখিদের সঙ্গে সঙ্গে মক্তবগামী কোরআনের পাখিদের দেখা মিলত। মুসলিম পরিবারে শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষা কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ, যাকাতসহ ধর্মীয় মাসয়ালা-মাসায়েল শেখার অন্যতম ব্যবস্থা ছিলো এটি। ইহকালে শান্তি ও পরকালের নাজাতের শিক্ষার শুরু এই মক্তব থেকেই। পাড়া-মহল্লায় পাটি, মাদুর বিছিয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়ের কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করা হতো। এভাবে শহরে-বন্দরে, গ্রামে-গঞ্জে গড়ে উঠেছিল হাজারো মক্তব-মাদ্রাসা।
ইদানিংকালে বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল, কিন্ডার গার্টেন, সকালের কোচিং ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে মর্নিং শিফট চালু হওয়ায় একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী মক্তবের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভোর থেকে স্কুল শিক্ষা চালু হ্ওয়ায় শিশুরা মক্তবের এই নূন্যতম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এটি তাদের কোরআন শেখা তথা দ্বীন শেখার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময়ের পরিক্রমায় সকালবেলা শিশু-কিশোররা টুপি, পাঞ্জাবি পরে দল বেঁধে কায়দা-সিপারা হাতে নিয়ে মক্তবে যাওয়ার দৃশ্য আগের মতো আর নজরে পড়ে না। মুসলমানদের ঐতিহ্যের স্মারক মক্তবগুলোর এখন মৃতপ্রায় অবস্থা। ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি খুবই নগণ্য। এর প্রভাবে তৈরি হচ্ছে ধর্মীয় জ্ঞানশূন্য একটি বিশাল জনগোষ্ঠী। ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবে নীতি-নৈতিকতাহীনতার দিকে ধাবিত হচ্ছে সমাজ। যার ফলে প্রাত্যহিক জীবনে ঘটছে অনাচার-অবিচার, জুলুম, অন্যায়সহ নানাবিদ ঘটনা।
গণমান্য ব্যাক্তিবর্গরা বলছেন, চিরচেনা সেই মক্তব শিক্ষার কথা এখনও মনে পড়ে। স্মৃতির পাতায় এখনও অপকটে দাগকাটে সেই সকাল বেলার মধুর সুরে আওয়াজ করে কোরআন তেলাওয়াত করার শৈশবের দিনগুলোর কথা। এখন আর আগের মত শিশু-কিশোরদের কোরআন শিক্ষার জন্য মক্তবে যেতে দেখা যায় না। কালিমা তায়্যিবা আর আলিফ, বা, তা -এর শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে না জনপদ। এভাবে চলতে থাকলে আবহমান বাংলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইসলামী বুনিয়াদি শিক্ষা ব্যবস্থার অস্তিত্ব চিরতরে হারিয়ে যাবে। তাই অতীব গুরুত্বপূর্ণ এ শিক্ষা ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য কোনো বিকল্প পথ বের করা সময়ের দাবি।
ওসমানীনগর উপজেলার একটি মসজিদের ইমাম মাওলানা আবু সুফিয়ান বলেন, শিশুদের অভিভাবকদের অবহেলার কারণে মসজিদের ইমাম সাহেবরা এখন মক্তবে কোরআন পড়ানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে এখন অভিভাবকেরা কঁচি-কাঁচা ও শিশু-কিশোরদের মক্তবে পাঠাতে চান না। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা সকালে ঘুম থেকে উঠলেই স্কুল, কোচিং অথবা কিন্ডার গার্টেনে ক্লাসের সময় হয়ে যায়। যার কারণে এলাকার শিশু-কিশোররা কোরআন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।