সিলেটে সাবেক বিচারপতি মানিককে লক্ষ্য করে ডিম-জুতা নিক্ষেপ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ আগস্ট ২০২৪, ৭:২৩ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় আটক সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
আদালতে তোলার সময় আলোচিত এই বিচারপতিতে লক্ষ্য করে উত্তেজিত জনতাকে ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে।
শনিবার বিকাল ৪টার দিকে সিলেটের বিচারিক হাকিম আলমগীর হোসেন তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. জমশেদ আলী জানান।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কানাইঘাট উপজেলার দনা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টাকালে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে আটক করে বিজিবি।
আদালতের পরিদর্শক জমশেদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, “জেল কোর্টের বিধান অনুযায়ী তিনি সাবেক বিচারপতি হিসেবে সুবিধা পাবেন। আদালতে তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না; তবে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ বলে আদালতে জানিয়েছেন।
“তার বিরুদ্ধে ঢাকার লালবাগ, বাড্ডা ও আদাবর থানায় হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সাবেক বিচারপতি মানিককে আদালতে নেওয়ার সময় গাড়ি থেকে নামানোর পর উত্তোজিত জনতা ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করেন। এ সময় কয়েকজন যুবক তার ওপর হামলার চেষ্টাও করেন। পরে কঠোর নিরাপত্তা দিয়ে তাকে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ।
শুক্রবার রাতে মানিককে আটকের পর বিজিবির ১৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আসাদুন নবী সাংবাদিকদের বলেন, “অবৈধভাবে ভারতে পালানোর সময় দনা সীমান্ত থেকে তাকে আটক করা হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাকে সংশ্লিষ্টদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করায় ১৯ অগাস্ট সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে নোয়াখালীর আদালতে মামলা করা হয়েছে।
জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হাসান পলাশ বাদী হয়ে নোয়াখালীর জেষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মামলাটি করেন।
এ ছাড়া একই ঘটনায় ঢাকার একটি আদালতে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
১৯৭৮ সালে হাই কোর্টের আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন জীবন শুরু করা শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হন। ২০০১ সালে তাকে হাই কোর্টের অতিরিক্ত বিচারক করে নেয় সরকার। কিন্তু পরে বিএনপি সরকার এসে তাকে বাদ দেয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর হাই কোর্টের একটি রায়ে বিচারকের আসনে ফেরেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। ২০১৩ সালে তাকে পদোন্নতি দিয়ে আপিল বিভাগের বিচারক করা হয়।
২০১৫ সালে অবসরে যাওয়ার আগে তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে বার বার শিরোনাম হয়েছেন বিচারপতি মানিক। সে সময় তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে অভিযোগও করেছিলেন।
অবসরের পর তাকে নিয়মিত টেলিভিশনের আলোচনা অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে দেখা যেত। বরাবরই তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ‘আপত্তিকর মন্তব্য করার’ অভিযোগে গত কয়েক দিনে বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে যে দুটি মামলা হয়েছে, তার মধ্যে একটি করেছেন মো. জিয়াউল হক নামের এক আইনজীবী।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর হাকিম সাইফুল ইসলামের আদালতে দায়ের করা ওই মামলায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুকেও আসামি করা হয়েছে।
‘মানহানির’ অভিযোগে বিবাদীদের কাছে ৩০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন বাদী। বিচারক তার আর্জি শুনে অভিযোগ তদন্ত করে পিবিআইকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর চ্যানেল আইয়ের একে আলোচনা অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানকে ‘রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে’ আখ্যায়িত করেন। গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি সেমিনারে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ‘মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না’। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে ‘অনুপ্রবেশকারী’।
এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হাসান পলাশ গত ১৯ অগাস্ট নোয়াখালীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে আরেকটি মামলা করেন।
সেখানেও জিয়াউর রহমান সম্পর্কে ‘আপত্তিকর মন্তব্য’ করার অভিযোগ আনা হয়েছে সাবেক বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে।