মিশিগানে ফুঁসে উঠেছেন প্রবাসীরা, চলছে একের পর এক বিক্ষোভ
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জুলাই ২০২৪, ১২:২৫ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, শিক্ষার্থীদের গুলি করে মেরে ফেলা, চলমান আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে ফুঁসে উঠেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। মিশিগানের ওয়ারেন, হ্যামট্রাম্যাক ও ডেট্রয়েটের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাংলাদেশিরা। তাঁদের সমর্থন জানাতে বিদেশিরাও অংশ নিচ্ছেন বিক্ষোভ মিছিলে। এসব কর্মসূচিতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে এমন হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানান।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৮জুলাই) বিকেলে কর্মদিবসেও রাজ্যের হ্যামট্রাম্যাক সিটি হলের সামনে জড়ো হন কয়েকশো শিক্ষার্থী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এছাড়া টানা নজিরবিহীন বিক্ষোভে একের পর এক ছাত্র ও সাধারণ মানুষ নিহতের খবরে শনিবার (২০জুলাই) বিকেলেও প্রতিবাদ সমাবেশে উত্তাল ছিল ডেট্রয়েট সিটির জেইন ফিল্ডের বাংলা টাউন এলাকা। তাছাড়া পরদিন রবিবার দুপুরে রাজ্যের ওয়ারেন সিটি হলের সামনে দলমত নির্বিশেষে বিক্ষোভ করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বিক্ষোভে সরকার বিরোধী স্লোগানে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ সমর্থক তাহমিদ হাসান চৌধুরী নামের এক প্রবাসী মারধরের শিকার হন। এসব বিক্ষোভ থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ হত্যা বন্ধ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগের নেতাদের বিচারের দাবি জানান প্রবাসীরা।
চলমান বিক্ষোভের নেতৃত্বে বিএনপি ও জামায়াত আছে বলে অভিযোগ করেছেন মিশিগান আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে মিশিগানের স্থানীয় রাধুনী রেস্টুরেন্টে ঘোষণা দিয়েও চলমান ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ সভা করতে পারেনি মিশিগান স্টেট ও মহানগর আওয়ামী লীগ। পরবর্তীতে রেস্টুরেন্টে স্থান না পেয়ে স্থানীয় একটি হোটেলের হলরুমে কোটা সংস্কারের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে সভা করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
এদিকে বিক্ষোভকারীদের সমর্থন জানিয়ে মিশিগান স্টেট সিনেটর স্টিফেনি চেং শুক্রবার এক বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ, ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও নেটওয়ার্ক সচল করার দাবি জানান।
হ্যামট্রাম্যাক সিটি হলের সামনে জাস্টিস ফর স্টুডেন্ট ইন বাংলাদেশ ব্যানারে ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটি, ট্রাইন ইউনিভার্সিটি, সেন্ট্রাল মিশিগান ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানসহ ওয়েন-ম্যাকম্ব কমিউনিটি কলেজের বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী প্লেকার্ড হাতে প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন।
তাছাড়া ডেট্রয়েট সিটির জেইন ফিল্ডের বিক্ষোভ সমাবেশে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী নারী-পুরুষ অংশ নেন। প্রতিবাদ সমাবেশে শিক্ষার্থীদের সাথে বিক্ষোভ আর স্লোগানে একাত্মতা প্রকাশ করেন বিক্ষোভকারীরা । মিশিগানের বিভিন্ন সিটি থেকে দলে দলে ব্যানার আর ফেষ্টুন নিয়ে সমাবেশ চত্বরে হাজির হন প্রবাসীরা। শিশু, তরুণ থেকে শুরু করে আবালবৃদ্ধবনিতা সবার ছিল এক অভিন্ন দাবি। এসময় তারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। মিশিগানে অনুষ্ঠিত প্রত্যেকটি বিক্ষোভ কর্মসূচিতে তরুণদের অংশগ্রহণ ছিল সব থেকে বেশি। এছাড়া অনেক প্রবাসী মহিলাকে কোলে শিশু নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা যায়।
এদিকে রবিবার (২২জুলাই) ওয়ারেন সিটির বিক্ষোভ সমাবেশে মারধরের শিকার তাহমিদ হাসান চৌধুরী নিউইয়র্ক সময়কে বলেন, আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতে আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু বিক্ষোভ কর্মসূচিতে আয়োজকদের পাশ কাটিয়ে বিএনপি জামায়াতের নেতারা মাইক টানাটানি করায় প্রতিবাদ করি। এনিয়ে একটা হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে দূরে থাকা এক তরুণ কিছু না বলেই আমায় ঘুষি মারে। এ ঘটনা একজনের ইন্ধনে হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি ও শিক্ষার্থীদের হত্যা ও হামলা-মামলার নিন্দা জানিয়ে আগামীকাল শনিবার (২৭জুলাই) মিশিগানের সচেতন নাগরিক সমাজ ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে।