চোরাই চিনিবাহী ট্রাক পুলিশে দিয়ে প্রশংসিত ছাত্রলীগ সভাপতি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জুন ২০২৪, ৮:২২ অপরাহ্ণ
সিলেটে ভারত থেকে চোরাইপথে চিনি আনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগের কিছু নেতা চিনি চোরাচালানে জড়িত থাকার প্রমাণও মিলেছে। এমনকান্ডে যখন সমালোচনার মুখে সংগঠনটি তখন উল্টো কাজ করে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি।
সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান সৌরভ দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে এক ট্রাক চোরাই চিনি আটক করে পুলিশে দিয়েছেন।
শুক্রবার (২৮ জুন) দিনগত রাত পৌনে তিনটার দিকে নগরীর আম্বরখানা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পরে আম্বরখানা পুলিশ ফাঁড়ির জিম্মায় দেওয়া হয় চোরাই চিনির ট্রাকটি।
শনিবার বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুনু মিয়া ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ধাওয়া করলে ট্রাকটি ফেলে চালক পালিয়ে যায়। পরে এটি পুলিশের জিম্মায় দেওয়া হয়। ট্রাকে তল্লাশি করে চোরাই পথে আনা ১১৭ বস্তা ভারতীয় চিনি পাওয়া গেছে। এগুলো জব্দের মামলা দায়ের হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান সৌরভের বাসা আম্বরখানা এলাকায়। রাত তিনটার দিকে আম্বরখানা এলাকায় বৃষ্টির মধ্যে একটি সিএনজিচালিত অটোরকিশা দুর্ঘটনায় পড়লে সৌরভ সেখানে যান। তারা রাস্তায় অবস্থানের সময় দুটি ট্রাক দ্রুতগতিতে যেতে দেখে সৌরভ তার সঙ্গে থাকা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের দিয়ে ট্রাক দুটোকে ধাওয়া করেন। পথে একটি ট্রাক থামলে পলিথিনে মোড়ানো চিনি দেখে আম্বরখানা পুলিশ ফাঁড়িতে জানান। পুলিশ ট্রাক তল্লাশি করে চোরাই চিনি পায়। ততক্ষণে চালক ট্রাক ফেলে পালিয়ে যায়।
যোগাযোগ করলে সৌরভ বলেন, ‘চারদিকে যেভাবে চোরাই চিনির কারবার চলছে, তাতে নিজস্ব দায় রয়েছে। তা ছাড়া ছাত্রলীগের নামটিও নেতিবাচকভাবে জড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায় থেকে আমরা এ কাজটি করেছি। আমি চাই, দেশের স্বার্থে চোরাই চিনির বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মাঠে নামুক। এতে পজিটিভ বিষয়টিও প্রকাশ পাবে, চোরাই চিনি পরিবহনও কমবে।’
সিলেটে চোরাই চিনির সঙ্গে ছাত্রলীগের নাম জড়িয়ে পড়ার প্রথম ঘটনাটি ঘটে বিয়ানীবাজারে। গত ১৪ জুন চিনিকাণ্ডের ঘটনায় বিয়ানীবাজার উপজেলা ও বিয়ানীবাজার পৌর শাখাকে বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন বিলুপ্ত কমিটির দুই নেতাও।
এরআগে গত ৮ জুন সীমান্ত উপজেলা বিয়ানীবাজারে সরকারি নিলাম ডাক থেকে কেনা ব্যবসায়ীর ২৪ লাখ টাকার চিনি লুটের ঘটনায় ছাত্রলীগের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হন পাঁচ ছাত্রলীগ কর্মী।
চিনি লুটের মামলার আসামি ও বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সফিউল্লাহ সাগরের সঙ্গে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক তাহমিদের মোবাইল ফোনে কথোপকথন সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়। ৬ মিনিট ২ সেকেন্ডের ফোনালাপতে লুট করা চিনি কীভাবে ভাগভাগি করা হয়েছে, কারা নিয়েছেন, উদ্ধার করা যাবে কীভাবে, তা বলা হয়েছে।
জকিগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জেও ঘটেছে চোরাই চিনির সঙ্গে ছাত্রলীগের নাম। এ অবস্থায় সম্প্রতি সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ দলীয় সভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মন্ত্রীর সামনে বক্তৃতায় ‘ছাত্রলীগের জন্য সিলেট শহরে হাঁটতে পারি না’ বলে অনুশোচনা প্রকাশ করেন।