টিলাগড়ে এবার আক্রান্ত আজাদ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জুন ২০২৪, ৭:৫১ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেটের আলোচিত টিলাগড়। সন্ত্রাসের এক জনপদ। পাশেই কল্যাণপুর। দাগি অপরাধীদের নিরাপদ বিচরণস্থল। একসময় ভাটপাড়া, কল্যাণপুর কাঁপিয়েছে সিলেটের কুখ্যাত মজিদ ডাকাত ও হেরোইন সম্রাট কবির। ওই অপরাধ চক্রের কাছে সিলেটের প্রশাসনও ছিল অসহায়। ২০ বছর পর সেই অবস্থা ফের ফিরে এসেছে। এবার আলোচিত মজিদ ডাকাত ও হেরোইন কবিরের সন্তানদের কাছে জিম্মি এলাকার মানুষ। টিলাগড়েই বাসা প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীর, সুনাগঞ্জ-১ আসনের এমপি এডভোকেট রঞ্জিত সরকার ও নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের। এর মধ্যে আজাদ বসবাস করেন ভাটপাড়া এলাকায়।
তিন শীর্ষ নেতার অবস্থানের কারণে এখানে ছাত্রলীগও তিন ধারায় বিভক্ত। নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে লাশের পর লাশ পড়েছে টিলাগড়ে। আজাদুর রহমান ওই এলাকার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের একাংশের নিয়ন্ত্রক। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর হঠাৎ নগরের ভাটপাড়া এলাকায় নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও ৫ বারের সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় হেরোইন কবিরের ছেলে ও দুটি হত্যা মামলার আসামি, ছাত্রলীগকর্মী রাব্বি, কল্যাণপুরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বিজয়, মজিদ ডাকাতের নাতি রুমন ও আরজুর নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন কাউন্সিলর আজাদের বাসায় অতর্কিত হামলা চালায় এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় কাউন্সিলর আজাদ বাসাতেই ছিলেন।
হামলার সময় আজাদের পাশের বাসা যুবলীগ নেতা সমসের আলী শারোর বাসায়ও হামলা করা হয়। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী হামলা চালিয়ে তারা দু’টি বাসায় ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে নগরে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পার্শ্ববর্তী মেজরটিলা ইসলামপুর এলাকা থেকে দলবল নিয়ে আসেন কাউন্সিলর ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল ইসলাম, জিন্দাবাজার থেকে যান জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ। তারা এলাকায় মহড়া দেন। এ সময় হামলাকারীদের চিহ্নিত করে কয়েকটি বাসায় তারা ইটপাটকেল ছোড়েন। খবর পেয়ে সেখানে আসেন শাহপরান থানার একাধিক পুলিশ টিম। পুলিশ ভোররাতের দিকে পরিস্থিতি শান্ত করে। সকালে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কাউন্সিলর আজাদের বাসায় হামলাকারী কুখ্যাত অপরাধী বিজয়কে আটক করে। দুপুরের দিকে স্থানীয় পঞ্চায়েতের লোকজন আরও দু’জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। হামলার সময় কাউন্সিলর আজাদের ভাইয়ের ছেলে তাহমিদুর রহমান, তার অনুসারী হীরক রঞ্জন দে পাপলু, ফয়ছল ও মুতাছির আহত হন। বাসায় কেন এই হামলা এ প্রশ্নের জবাবে কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ জানিয়েছেন, ওদের সঙ্গে আমার বিরোধ নতুন নয়। ওদের বাপ-দাদারাও অপরাধী ছিল। তখনই ওদের অপরাধের প্রতিবাদ করায় তারা আমার বিরোধী ছিল। এখন ওই অপরাধীদের উত্তরসূরিরা এলাকায় নানা অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। আমি প্রায় সময় তাদের শাসাই। এ কারণে তারা হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, আমার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে মামলা করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। পুলিশ ও স্থানীয় পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ সক্রিয় রয়েছেন। তারা অপরাধীদের ধরতে কাজ করছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আজাদুর রহমান আজাদের বাসায় হামলাকারীদের কেউ কেউ স্থানীয়ভাবে প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীর স্বজন সফুর অনুসারী। তারা প্রায় সময় টিলাগড়ের কল্যাণপুর এলাকায় সফুর নেতৃত্বে মহড়া দেয়। তবে, ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতা সফু। ঘটনার পর তিনি গিয়ে কাউন্সিলর আজাদের বাসা দেখে এসেছেন বলে দাবি করেন। হামলার ঘটনায় পুলিশ গতকাল বিকাল পর্যন্ত বিজয়সহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন শাহপরান থানার ওসি (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য। তিনি জানিয়েছেন, সকাল থেকে পুলিশের কয়েকটি টিম অভিযানে রয়েছে। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে পুলিশ গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি। এদিকে কাউন্সিলর আজাদের বাসায় হামলার ঘটনায় সকালে তার বাসায় যান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন।
তারা হামলায় কাউন্সিলর আজাদের ক্ষতিগ্রস্ত বাসা পরিদর্শন শেষে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে তারা সেখানে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। এদিকে আজাদের বাসভবনে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ সিলেট সিটি করপোরেশনের সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরবৃন্দ। গতকাল দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নগরীর ভাটাটিকর ও পূর্ব শাপলাবাগ এলাকায় সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের টানা পাঁচবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদের পৈতৃক ও নিজস্ব বাসভবনে একযোগে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। আমি ও আমার পুরো পরিষদ এই হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এরই সঙ্গে ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করছি। বিবৃতিতে মেয়র উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, টানা পাঁচবারের কাউন্সিলরের বাসায় হামলা ন্যক্কারজনক ঘটনা। হামলা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের নেতারা রাতে এ নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসছেন। এমন ঘটনা সিলেটে আগে কখনো ঘটেনি বলে জানান নেতারা। এজন্য পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে এই বৈঠকের আহ্বান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেতারা।