সিলেটকে বন্যা থেকে রক্ষায় মহাপরিকল্পনা গ্রহণের আহবান নাদেলের
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ জুন ২০২৪, ৮:১৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেছেন, উপর্যুপরি বন্যায় সিলেট বিভাগ বিপর্যস্ত।
জলবায়ু পরিবর্তন, পাহাড়ি ঢল, নদী, খাল-বিল ভরাট হয়ে নাব্যতা কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে দিনেদিনে বন্যার ভয়াবহতা বাড়ছে। এই অবস্থায় সিলেট বিভাগকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে একটি বিশেষ মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল একথা বলেন।
বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করায় জাতীয় সংসদের স্পিকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, এবারের বাজেট আমাদের দেশের ৫৩তম বাজেট। আমি আমার প্রিয় নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদন্যতায় সংসদ সদস্য হিসেবে মহান জাতীয় সংসদে বাজেটের ওপর আলোচনার সুযোগ পেয়েছি। বাজেট বক্তব্যে প্রথমে আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৭৫-এর ১৫ আগস্টে সকল শহীদ, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের ও ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের ঋণ। স্মরণ করছি এদেশে কৃষক শ্রমিক ও মেহনতী মানুষকে যাদের শ্রমে ঘামে এ দেশ এ পর্যায়ে এসেছে।
আলোচনায় শফিউল আলম নাদেল বলেন, মানুষ সামাজিক জীব ও সাথে সাথে দারুণভাবে অর্থনৈতিক জীবও বটে, সেটা টের পাই বাজারে গেলে যখন পকেটের মাপ আর বাজারের ব্যাগে গরমিল দেখা দেয়। তিনি বলেন, দেশ কিভাবে চলবে আর দেশের মানুষজন কেমনভাবে থাকবে তা নির্ধারণ করে দেশের অর্থনীতি আর দেশের অর্থনীতি সহজভাবে ধরা পড়ে বার্ষিক বাজেটে। যে কারণে শেষ বিচারে বাজেট হলো রাজনীতির অগ্রগতির উন্নয়ন ও নির্বাচনী অঙ্গিকারের দলিল। আমি তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন রাজনৈতিক কর্মী। আমি ত্বাত্তিক নই, বিশেষজ্ঞ নই একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে যতটুকু বুঝি- মাননীয় অর্থমন্ত্রী বর্তমান ক্রান্তিকালীন সময়ে একটি দূরদর্শি সম্পন্ন বাজেট উপস্থাপন করেছেন। যেখানে আমাদের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গিকারের পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শন প্রাধান্য পেয়েছে। আমরা যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি মাননীয় অর্থমন্ত্রী সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ও করণীয় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বাজেট বক্তৃতায় উপস্থাপন করেছেন। এজন্য প্রাজ্ঞ এই অর্থনীতিবিদ ও অভিজ্ঞ এই জনপ্রতিনিধিকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
নাদেল বলেন, আমি খুব ছোট করে যে কথাগুলো বলতে চাই- সেটা হলো ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর আমরা দেখতে পাই বঙ্গবন্ধুর মহানুবতা ও দেশের মানুষের প্রতি অসীম ভালোবাসার প্রতিফলন তাঁর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে। মানুষের মৌলিক চাহিদার পাশাপাশি সরকার উদারভাবে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। গত বছরের বাজেটের থেকে এবারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা এবং স্বাস্থ্যখাতে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈশি^ক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও কোভিড-১৯, জলবায়ু পরিবর্তন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বিশ^জুড়ে বিভিন্ন উন্নত দেশও তাদের প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে আমরা সফল হয়েছি।
নাদেল বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির পাশাপাশি জিডিপির প্রবৃদ্ধি আমরা উর্ধ্বমুখী রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের পাশর্^বর্তী সকল দেশ থেকে আমরা অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে এগিয়ে রয়েছি। ২০২৬ সালে ইনশাআল্লাহ আমরা এলসিডি থেকে বের হয়ে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছি। এই উত্তরণের সাফল্যের পাশাপাশি অনেক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আমরা হবো। এই অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাজনৈতিক নেতৃত্ব, জনবান্ধব প্রশাসন, সৎ ব্যবসায়ীসহ সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। নাদেল বলেন, বঙ্গবন্ধু যেভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন- আজ আমরা আমাদের দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি বক্তব্য এবং নীতিকে আমরা প্রাসঙ্গিক হিসেবে ধরতে পারি।
শফিউল আলম নাদেল বলেন, এই প্রতিযোগিতার যুগে ঠিকে থাকতে হলে যোগ্যতার ভিত্তিতে ঠিকে থাকতে হবে। আমাদের আর্থিক খাত এবং সুশাসন অত্যন্ত জরুরি। সংবিধানের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি, ক্রমবৃদ্ধি সাধন এবং জনগনের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের উন্নতি সাধন। আমি মনে করি মাননীয় অর্থমন্ত্রী আমাদের সংবিধানের ধারণা ও কর্তব্য বাস্তবায়নে তার বাজেট বক্তৃতায় নানা কর্মসূচির কথা তুলে ধরেছেন। নাদেল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে হলে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা এবং খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। এই দুই খাতে বরাদ্ধ বৃদ্ধির জন্য আমি বিনীতভাবে অনুরোধ করছি। আমাদের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ২০২৩ সালে ২৫২৮ মার্কিন ডলার ছিল। আর সেটি বৃদ্ধি পেয়ে একটি উন্নত দেশে মর্যাদার অর্জনের জন্য জাতিসংঘ দ্বারা নির্ধারিত নূন্যতম ১২৫০০ ডলারে উন্নীত করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও অভিবাসন উভয় ক্ষেত্রে প্রধানত স্বল্প দক্ষ ও অদক্ষ কর্মী কাজ করে থাকে। ফলে উচ্চ আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জনে ৩টি মানদ- পূরণে আমাদের জন্য অনেকটাই কঠিন হবে। এসব চ্যালেঞ্জকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশকে অবশ্যই শিক্ষিত ও উচ্চদক্ষতা সম্পন্ন শ্রমশক্তি তৈরির উদ্যোগকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমাদের দেশে নতুন নতুন ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করে দক্ষ ও কর্মমুখী জনশক্তি গড়ে তুলতে পারি।
সংসদে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা কুলাউড়াসহ সিলেটের প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। উপর্যুপরি বন্যায় গোটা সিলেট অঞ্চল বিপর্যস্থ। সিলেট অঞ্চলের নদীখনন ও হাওর উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্ধ প্রদানের দাবি জানাচ্ছি। হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরকে কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।
জলবায়ু পরিবর্তন, পাহাড়ী ঢল, অধিক বৃষ্টিপাত, বিভিন্ন নদী, খালবিল ভরাট হয়ে নাব্যতা কমে যাওয়ায় সিলেট অঞ্চলের জন্য একটি বিশেষ মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক উন্নয়ন কাজ এবং সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল নির্মাণ কাজের ধীরগতির বিষয়টি উল্লেখ করে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, সিলেট-আখাউড়া রেলপথটিও অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ফলে প্রতিবছর দুর্ঘটনায় অনেক জানমালের ক্ষতি হয়। কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইনটি কবে চালু হবে তা আমরা জানি না। সিলেটের উন্নয়নের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ প্রয়োজন।
মৌলভীবাজার জেলায় একটি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানান। একই সঙ্গে তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী বিএনপি নেতা প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
শফিউল আলম নাদেল বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের সকল নাগরিককে ইতিমধ্যে পেনশনের আওতায় এনেছেন। এখন আমি প্রস্তাব করছি সর্বজনীন স্বাস্থ্যবীমা ‘হাসিনা হেল্থ কেয়ার’ চালু করা হোক।