সিলেটে শঙ্কায় পশু ব্যাপারীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০২৪, ৯:০৭ অপরাহ্ণ
শঙ্কা কাটছে না সিলেটের পশু ব্যবসায়ীদের। বাইরে থেকে আসা ব্যাপারীদের আশঙ্কা পথের নিরাপত্তা। আর সিলেটের খামারিদের শঙ্কা ভারতীয় পশু। এর ওপর আছে বন্যা। ব্যাপারীরা জানিয়েছেন, সিলেট অঞ্চলে এবার বন্যার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। এ কারণে অনেক ব্যাপারী সিলেটমুখী হননি। তার ওপর নিরাপত্তার অভাব হলে সিলেটের হাটে পশু কম আসতে পারে। গতকাল বিকালে কাজিরবাজার পশুর হাটের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন লোলন জানিয়েছেন, সিলেট নগর ও আশপাশ এলাকায় অন্তত ১২টি পশুর হাট বসেছে। এসব হাটে বেপারী পশু নিয়ে যেতে চান না। ফলে ওইসব হাটের লোকজন জেলার প্রবেশমুখ শেরপুরে গিয়ে বসে আছেন।
তারা পশুর গাড়ি দেখলেই নিজেদের হাটে নিয়ে যেতে কাড়াকাড়ি করেন। তিনি জানান, অতীত স্মৃতি কখনো সুখকর নয়। উত্তরাঞ্চলসহ কয়েকটি এলাকার পশু ব্যবসায়ীদের গন্তব্য থাকে কাজিরবাজার পশুর হাটে। কারণ; এসব হাটের লোকজনকে আমরা নানা ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকি। এ কারণে কাজিরবাজার হাটে পশু নিয়ে বেপারীরা আসতে আগ্রহী। কিন্তু পথে যদি পশু ছিনতাই হয়ে যায় তাহলে বেপারীরা লোকসানে পড়েন। হাটে থাকা জেলার বাইরের বেপারীরা জানিয়েছেন, তারা মঙ্গল ও বুধবারে কাজিরবাজার হাটে এসেছে। এখনো শতাধিক পশুবাহী গাড়ি সড়কে আছে। তারা কাজিরবাজার অভিমুখে আসছে। পথিমধ্যে পশু ছিনতাই হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাদের। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা না করলে অনেক বেপারী সিলেটে না এসে অন্য জায়গায় চলে যেতে পারেন। সাঈদ আহমদ নামের এক বেপারী জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চল থেকে তাদের গাড়ি সিলেটের পথে রয়েছে। এসব গাড়িতে কয়েকশ’ পশু রয়েছে। নিরাপদে যদি পশু সিলেটের হাটে আসতে পারে তাহলে চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। গতকাল বিকালে কাজিরবাজার ঘুরে দেখা গেছে; প্রচুর পশু রয়েছে হাটে। কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা কম। এর কারণ, সিলেটে দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে হাটে ক্রেতারা যাচ্ছেন না। জানিয়েছেন, শুক্র, শনি ও রোববার- এই তিনদিন হাটে বিকিকিনি ভালো হবে। সিলেট নগরের লোকজন ঈদের দুই একদিন আগে পশু ক্রয় করে থাকেন। বিক্রি নিয়ে তারা চিন্তিত নন বলে জানান। এদিকে, সিলেটের স্থানীয় খামারিরা ভারতীয় পশু নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। ইতিমধ্যে সিলেটের হাটে উঠতে শুরু করেছে ভারতীয় পশু। মূলত ছোট ও মাঝারি ধরনের পশু ভারত থেকে বেশি এসেছে। এ কারণে সিলেটের খামারিরা এবার পশুর ন্যায্য দাম না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন। সিলেটের শীর্ষ খামারি ও প্যানেল মেয়র মখলিসুর রহমান কামরান মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ভারতীয় পশু নিয়ে চিন্তিত সিলেটের খামারিরা। যদি ভারত থেকে বেশি পরিমাণ পশু আসে তাহলে সিলেটের খামারিরা লোকসানে পড়বেন। তবে; এখনো হাটে দেশি খামারের পশুর আধিক্য রয়েছে বলে জানান তিনি। সিলেট নগর ও জেলা মিলিয়ে এবার পশুর হাটের সংখ্যা শতাধিক। নগরে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ১২টি হাট বসেছে। এসব হাটের মধ্যে ক্রেতা-বিক্রেতার চাহিদা হচ্ছে কাজিরবাজার পশুর হাট। আর জেলায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে হাটের সংখ্যা ৯০টির মতো। সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা সম্রাট হোসেন জানিয়েছেন, জেলার ১১টি উপজেলায় হাটের সংখ্যা প্রায় ৮৩টি। এসব হাটে পুলিশের নজরদারি রয়েছে। এ ছাড়া হাটমুখী পশুবাহী যানবাহনে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে ব্যাপারে পুলিশের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। এদিকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, যেসব জায়গায় হাট বসানো হচ্ছে সেসব জায়গায় পুলিশের নিরাপত্তা থাকছে। এর বাইরে নগরের প্রবেশমুখ এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পশুবাহী গাড়ি যাতে নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে গন্তব্যে যেতে পারে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া টহলে থাকছে টিম। পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী পুলিশও নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। তিনি বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তায় কোনো ধরনের গাফলাতি করা হবে না। হাট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাটে জালনোট শনাক্তকরণ বুথ, মেডিকেল টিম বসানো হয়েছে। ক্রেতা ও বিক্রেতার সুবিধার কথা বিবেচনা করে হাট কর্তৃপক্ষ এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে জানান তিনি।