দিরাইয়ে মুহতামীমের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:১৮:১১,অপরাহ্ন ২৫ জুলাই ২০২৩
সুরমা নিউজ:
দিরাই পৌরসভার মজলিশপুর হালিমাতুস সাদিয়া রাঃ দরুল হাদিস মহিলা টাইটেল মাদ্রাসার মুহতামীম মাওলানা আবদুল লতিফ ওরফে কালা হুজুরের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার জনৈক ছাত্রীকে হেনস্থা ও যৌন নির্যাতনের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার তিনদিন পর রবিবার রাতে ভিকটিমের মামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার মাদ্রাসার মুহতামীম মাদ্রাসা ছাত্রীকে হেনস্তা ও যৌন নির্যাতনের চেষ্টার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর মাদ্রাসা কমিটির লোকজন আপোষে বিষয়টি নিস্পত্তির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর স্থানীয় আলেম সমাজের কয়েকজনকে নিয়ে ৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে বিষয়টি সুরাহা করতে দ্বিতীয় দফা চেষ্টা করা হয়। এরপর সত্যমিথ্যা যাচাই করতে আলেম সমাজের লোকজন ভিকটিমের বাড়িতে সরেজমিন উপস্থিত হয়ে ভিকটিমের সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পান।
এ ব্যাপারে মাওলানা নূরউদ্দিন আহমদ ও মাওলানা শরিফ উদ্দিন বলেন, ঘটনার সত্যতা পেয়ে আমরা অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলি, কিন্তু কমিটির লোকজন একমত হতে পারেনি। তবে কান ব্যক্তির অপরাধের দায় প্রতিষ্ঠান নিতে পারে না।
ভিকটিমের মা বলেন, আমার বাচ্চাদের বাবা বিদেশ থাকে। তাদের পড়াশুনার সুবিধার্থে মামার বাড়িতে থাকছে। আমার মেয়েটির ইচ্ছে ছিল টাইটেল পাশ করবে, কিন্তু ওই কালা হুজুর মুহতামীম আবদুল লতিফ আমার মেয়েটির স্বপ্ন ধুলিস্যাত করে দিয়েছে।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য সাবেক কাউন্সিলর ইয়াহিয়া চৌধুরী বলেন, আমরা বিষয়টি সঠিক ভাবেই শেষ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সকলে একমত হতে পারি নাই।
ভিকটিমের মামা পৌরসভাস্থ মাদানী মহল্লার বাসিন্দা সাইফুল ইসলা তার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, ভিকটিম আমার আপন ভাগনী। তার পিতা বিদেশে থাকার কারণে দ্বীনি শিক্ষার সুবিধার্থে আমাদের বাসায় থেকে পৌরসভাস্থ মজলিশপুর হালিমাতুস সাদিয়া (রাঃ) মহিলা মাদ্রাসায় লেখাপড়া করছে। বর্তমানে সে মাদ্রাসার ‘মিশকাত’ শ্রেণির ছাত্রী। মাদ্রাসার মুহতামীম মাওলানা আব্দুল লতিফ বেশ কিছুদিন যাবত আমার ভাগনীকে নানা ভাবে প্ররোচিত করেছে। পরীক্ষার ভালো রেজাল্টসহ উত্তীর্ণ করে দেওয়ার প্রলোভন দেখাইয়া কুপ্রস্তাব দেয়। আমার ভাগনী মাওলানা আব্দুল লতিফ এর প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় ২০ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুর অনুমান ১২টায় মাদ্রাসার একটি কক্ষে নিয়ে আমার ভাগনী কে জাপটে ধরে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা চালায়। এসময় আমার ভাগনী দৌঁড়ে মাদ্রাসায় পড়–য়া অন্যান্য ছাত্রীদের কাছে চলে যায়। এরপর মাওলানা আব্দুল লতিফ বিষয়টি তুচ্ছ ঘটনা বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আমার ভাগনী বিষয়টি আমাকে অবগত করলে আমি মাদ্রাসায় গিয়ে মুহতামীম মাওলানা আব্দুল লতিফ এর সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করলে উনি আমাকে গালিগালাজ ও হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। আমি নিরুপায় হয়ে আইনের আশ্রয় নেই। এছাড়াও মাদ্রাসা বডিং-এ আমার আরেক ভাগনী ছিল। মুহতামীম মাওলানা আব্দুল লতিফ এর এমন আচরনের কারণে সে পালিয়ে চলে এসেছে। বিষয়টি তিনি অস্বীকার করলেও আমরা ঘটনাটি সত্য ছিল বলে বিভিন্ন ভাবে প্রমাণ পাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মাদ্রাসার মুহতামীম আবদুল লতিফ একেক সময় একেক কথা বলছেন। প্রথমে তিনি বলেন, ভিকটিমকে ৪টি ছেলে রাস্তায় দৌঁড়াইয়া দেয়, পরে মেয়েটি কান্নাকাটি করে বাসায় যায়। আবার বলেছেন, তাকে মাদ্রাসা থেকে বহিস্কৃত করা হয়েছে, আমার কাছে পা ধরে মাফ চাইলে আমি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেই। আমার বিরুদ্ধে একটি চক্র ষড়যন্ত্র করছে, ওই মেয়েটির অভিযোগ মিথ্যা বলে তিনি জানান।
ইউএনও মাহমুদুর রহমান মামুন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, যথাযথভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।