মোকাব্বিরের কাঠগড়ায় নুনু
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ৭:৫২ অপরাহ্ণ
মোকাব্বির খান। সিলেট-২ আসনের গণফোরাম দলীয় সংসদ সদস্য। আর এসএম নুনু মিয়া একই আসনের বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান। প্রায় ৩৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়ে মুখোমুখি দু’জন। প্রকল্প এখনো শুরু হয়নি। এরই মধ্যে এমপি মোকাব্বির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যান নুনু মিয়াকে। এ নিয়ে হৈচৈ চলছে বিশ্বনাথে। আছে উত্তেজনাও।
দুর্নীতির অভিযোগে প্রশাসন সক্রিয়। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্তে নেমেছে সিলেটের জেলা প্রশাসন। বিশ্বনাথ প্রবাসী শহর হিসেবে পরিচিত। নতুন পৌরসভা। চলছে প্রশাসক দিয়ে। নানা সমস্যার বৃত্তে বন্দি এই পৌরসভা। এ অবস্থায় গত বছরের শেষের দিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্বনাথের জন্য ‘নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প পাস হয়। জনস্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩৯ কোটি ৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটি পাস হলেও এখনো টাকা ছাড় কিংবা টেন্ডার কোনোটাই হয়নি। তবে এই প্রকল্প নিয়ে বেশ উচ্ছ্বাস উপজেলা চেয়ারম্যান নুনু মিয়ার। বলছেন; প্রকল্পের কৃতিত্ব একমাত্র তারই। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের মাধ্যমে তিনি এ প্রকল্প পাস করিয়ে নিয়ে এসেছেন। এটি হচ্ছে বিশ্বনাথের ইতিহাসে একটি বড় উন্নয়ন প্রকল্প। এ নিয়ে গত ৫ই ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেছেন নুনু মিয়া। বিশ্বনাথের সুধীজনকে জানিয়েছেন সে কথা।
এই অবস্থায় গত ২৩শে ডিসেম্বর প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এনে পরিকল্পনামন্ত্রীকে ডিও দিয়েছেন এলাকার সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন ‘প্রকল্পটি অনুমোদিত হওয়ার পর বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুনু মিয়া প্রতিটি টিউবওয়েল, স্যানেটারি ল্যাট্রিন সহ প্রকল্পের কাজ জনগণকে বরাদ্দ দেয়ার নামে অগ্রিম ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায়ের ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে’। ডিওতে তিনি প্রকল্পটির সুবিধা ভিন্ন উপায়ে বিশ্বনাথ উপজেলার সাধারণ মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন। এদিকে অভিযোগটি পাওয়ার পর এটি তদন্তের জন্য সিলেটের জেলা প্রশাসনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গণশুনানির আয়োজন করা হয়। ওই অভিযোগের তদন্ত করেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান।
এদিকে তদন্তকালে বেশ কয়েকজনের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়। পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া সহ ইউপি চেয়ারম্যানদের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়। এ নিয়ে উত্তেজনা ছিল বিশ্বনাথ পৌরশহরে। মোতায়েন করা হয়েছিল পুলিশও। তবে তদন্তের বিষয়ে কিছুই জানাননি তদন্ত কর্মকর্তা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক নুসরাত জাহান জানিয়েছেন এ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ঢাকায় পাঠাবেন। এদিকে এমপি’র অভিযোগ ও তদন্ত নিয়ে বিশ্বনাথে কৌতূহলের অন্ত নেই। পাশাপাশি রয়েছে শঙ্কাও। প্রকল্প আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশ্বনাথের মানুষ। তারা জানিয়েছেন- বিশ্বনাথ শহর এখনো গ্রামের আদলে সুবিধায় আটকে আছে। এই প্রকল্পের কাজ হলে কিছুটা শহরের আদলে সুবিধা পাওয়া যাবে। প্রকল্প নিয়ে টানা হেঁচড়ার কারণে শেষ পর্যন্ত আটকে গেলে দুর্ভাগাই বলতে হবে বিশ্বনাথের মানুষকে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ‘বিশ্বনাথে বিশুদ্ধ পানি স্যানিটেশন ব্যবস্থা নাজুক। বিশ্বনাথকে শহরের আদলে রূপ দিতে হলে কয়েকশ’ কোটি টাকার প্রয়োজন। এ জন্য প্রয়োজন জনপ্রতিনিধিদের উন্নয়ন সমন্বয়। কিন্তু যে পরিস্থিতি দাঁড়াচ্ছে তাতে উন্নয়নের বদলে উত্তেজনাই বেশি হচ্ছে। ’বিশ্বনাথের এই প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ উঠায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়া। তিনি চলতি মাসে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন। বলেন- পদ্মা সেতু হওয়ার আগে এ ধরনের অভিযোগ তোলা হয়েছিল। কোনো ভিত্তি ছিল না। আসল উদ্দেশ্য ছিল প্রকল্প আটকে দেয়া। বিশ্বনাথের এই প্রকল্প নিয়ে এ ধরনের রাজনীতি হচ্ছে।
গতকাল এসএম নুনু মিয়া জানিয়েছেন- প্রকল্প অনুমোদনই হয়নি, দুর্নীতি হবে কোথা থেকে। এমপি মোকাব্বির খানের এই অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই বলে দাবি করেন তিনি। তবে সিলেট-২ আসনের এমপি মোকাব্বির খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, উপজেলা চেয়ারম্যান নুনু মিয়া মানুষের কাছ থেকে যে টাকা নিয়েছেন এর যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে। অনেকে তথ্য প্রমাণসহ তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন এবং আরও করা হবে।