মৌলভীবাজারে ঘুষে গরমিল হলেই ফাইল আটকে দেন তিনি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জানুয়ারি ২০২১, ৬:০৪ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা পরিচয় দেন। টাকা ছাড়া কোনো ফাইল নড়ে না তার টেবিলে। ঘুষ না পেয়ে ইউএনওর ফাইল আটকে গড়েছেন রেকর্ড।
উপজেলা সমন্বয় সভায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের রেজুলেশন করা হয়। বিভাগীয় তদন্তে দুর্নীতির সত্যতা পাওয়ার পরও রয়েছেন স্বপদে বহাল।
উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল হাকিম তাহমির অনিয়ম দুর্নীতির দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইলই তিনি ছাড় দেন না। অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পেনশনের টাকা উত্তোলনেও তাকে দিতে হয় অর্থ।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের সমস্বয় সভায় সরকারি কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ করেন। বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে দিন দিন বাড়ছে ভুক্তভোগীর সংখ্যা। দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।
লিখিত অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল হাকিমের রাজনগর উপজেলায় যোগদান করার মাত্র ৬ মাস চলছে। এ অল্প সময়েই তিনি আতঙ্ক হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন সরকারি অফিস ও পেনশনভোগীদের কাছে।
বিভিন্ন অজুহাতে আটকে দেন ফাইল। টাকা নেয়ার জন্য ব্যাংকেই বসে থাকে তার লোক। মুজিববর্ষের গৃহনির্মাণের টাকা ছাড় নিতেও দুর্ভোগ পোহাতে হয় সংশ্লিষ্টদের। এতে সরকারি বিভিন্ন কাজ ব্যাহত হয়।
এ নিয়ে গত ২১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়। উপজেলা প্রকৌশলী, কৃষি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের নেয়া বিভিন্ন প্রকল্প ব্যাহত হচ্ছে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
ওই সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ১৭ নভেম্বর সিলেট ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব অ্যাকাউন্টস বরাবর চিঠি পাঠান। চিঠিতে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল হাকিম তাহমির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানদের ও অন্যদের অভিযোগের কথা উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়।
গত ২৪ নভেম্বর সিলেট কার্যালয়ের নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (প্রশা) নূরুল হক উপজেলা প্রশাসনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করেন। তদন্তকালে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা লিখিত বক্তব্য দেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
তদন্তকালে উপজেলা ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তার বেতনবুকে কাজ করে দেয়ার জন্য ৮০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন তিনি। টাকা দেয়ার পরও তিনি কাজ করতে অনীহা দেখান।
অপরদিকে উপজেলার গড়গাঁও গ্রামের সাবেক কারারক্ষী আব্দুল আহাদের পেনশনের কাজ অনলাইনে করে দেয়ার জন্য তার কাছে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ২৫ হাজার টাকা নিয়ে কাজ করলেও এখন ৫ হাজার টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তিনি এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সৈয়দ আব্দুল হাকিম মোবাইল ফোনে বলেন, আমি উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি, তার কাছে জানতে পারবেন- বলেই ফোন রেখে দেন। পরে আবারও ফোন করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা পাল বলেন, বিভিন্ন ব্যক্তির মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায়ও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত হলেও এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আমি জেলা প্রশাসককেও বিষয়টি অবগত করেছি। সুত্রঃযুগান্তর