প্রবাসীদের বিবস্ত্র করে হাতমুখ বেঁধে বেত্রাঘাতে চামড়া তুলে ফেলা হয়
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুলাই ২০২০, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
ক্রমেই অমানবিক হয়ে উঠছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের চিত্র। সম্প্রতি আল-জাজিরায় প্রকাশিত রিপোর্টের সূত্র ধরে নির্যাতনের অভিযোগ করা বাংলাদেশি শ্রমিক রায়হান কবিরকে হন্য হয়ে খুঁজছে পুলিশ।
শুধু তাই নয়, রায়হান কবিরের তিন বন্ধুকেও তুলে নিয়ে গেছে মালয়েশিয়ান পুলিশ। তবে এ খবরের সূত্র ধরেই সম্প্রতি আরেক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের ওপর অকথ্য নির্যাতনের করুণ চিত্র।
জার্মানি ভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার বাসিন্দা সোহেল দেশটির ‘ডিটেনশন ক্যাম্পের’ বর্ণনা দেন।
তিনি বলেন, আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আবেদন করি। এরমধ্যেই অভিযানে আমাকে ধরে নিয়ে যায়। ক্যাম্পে কোনো দিন দুই বেলা, কোনো দিন এক বেলাও খাবার দিয়েছে। আমাদের অভিভাবক হাইকমিশনের কেউ কোনোদিন খোঁজ নেয়নি। আমার মতো বহু বাংলাদেশি সেখানে ডিটেনশনে আছেন। আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন না, এই আমলেও পৃথিবীতে এমন কোনো আইন আছে যে, এক-দেড়শ’ মানুষকে উলঙ্গ করে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে কানধরে উঠবস করায়। মালয়েশিয়াতে সেটা করায়। সবচেয়ে বড় নির্যাতনের নাম রতান (বেত মারা)। আমাদের দেশে গ্রামে গরুকে যেভাবে চার পা ও মুখ বেঁধে ইনজেকশন দেয়া হয় মালয়েশিয়ায় একইভাবে হাত পা বেঁধে রতান মারা হয়। তিন চার ফুট লম্বা, চিকন বেত দিয়ে পেছনে যখন আঘাত করে তখন চামড়া ছিড়ে ভেতরে ঢুকে যায়। পরে মাংসসহ উঠে আসে।
তথ্যচিত্রটিতে রায়হান কবির তার পরিচিতদের ওপর চালানো হয়রানি ও নিপীড়নের তথ্য তুলে ধরেছেন। এ কারণে এখন তাকে খুঁজছে পুলিশ ও ইমিগ্রেশন বিভাগ। তার ভিসাও বাতিল করা হয়েছে। এমনকি তার সম্পর্কে তথ্য দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। সেখানে তিনি এখন অনেকটাই ‘ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল’ বলে জানা গেছে। তবে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ আছে।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের খোঁজখবর রাখার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষন ব্যুরো (বিএমইটি) রায়হান কবিরের ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছে।
করোনা মহামারিতে অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে মালয়েশিয়া সরকার অমানবিক আচরণ করছে মর্মে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা। ‘লকড আপ ইন মালয়েশিয়া’স লকডাউন’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদন নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়।
‘১০১ ইস্ট’ অনুষ্ঠানে ২৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ওই প্রতিবেদনে বাংলাদশি যুবক মো. রায়হান কবির একটি সাক্ষাৎকার দেন। সে কারণে দেশটির পুলিশ গত ৭ জুলাই রায়হানের সন্ধান চেয়ে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ডাকা হয় আল-জাজিরার ৬ সাংবাদিক ও ৭ কলা-কৌশলীকে।
শুক্রবার (১০ জুলাই) মালয়েশিয়ার পুলিশ সদর দফতরে আইনজীবীর উপস্থিতিতে আল-জাজিরার ৬ সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি নিজেদের সাংবাদিকতার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়ে ওই তদন্তের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
তথ্যসূত্র : ডয়েচে ভেলে।