রাজনগরে মহিলা সদস্যের তলপেটে লাথি : থানায় মামলা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ মে ২০২০, ৫:৫০ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
রাজনগর উপজেলার ৮নং মনসুরনগর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে জনসম্মুখে ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য (সংরক্ষিত) তলপেটে লাথি মেরে চেয়ার থেকে ফেলে দিয়ে শারিরিকভাবে লাঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান মিলন বখত এর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মহিলা সদস্য (সংরক্ষিত) ভুক্তভোগী সুফিয়া বেগম মৌলভীবাজার অনলাইন প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
জানা গেছে- এ ঘটনায় পরিষদের চেয়ারম্যান মিলন বখতসহ জড়িত অন্যান্যদের আসামী করে ভুক্তভোগী সুফিয়া বেগম রাজনগর থানায় মামলা ( নং-১৬, তারিখ ঃ ২৪/০৫/২০২০) দায়ের করেছেন। লিখিত বক্তব্য তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিলন বখত স্বেচ্ছাসারী স্বৈরশাসকের মতো। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ অনুদান আসলে গরীর ও অসহায় মানুষদের না দিয়ে তার ইচ্ছামতো নিজের বাহিনীর লোকজনদের মধ্যে বন্টন করেন। এসব ঘটনায় একাধিক ইউপি সদস্য ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
চেয়ারম্যান মহামাররি করোনা ভাইরাস উপলক্ষে সরকারি, বেসরকারি ও প্রবাসীদের পাঠানো নগদ অর্থ আত্মসাৎ করছেন। এ সব বিষয়ে প্রতিবাদ করলে প্রতিবাদকারীকে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করা হয়। যারা প্রতিবাদ করেন সেই সদস্যদেরকে ত্রাণ বিতরণের কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়। অত্র ইউনিয়নের ত্রাণ কমিটিসহ বিভিন্ন কমিটিতে চেয়ারম্যান এর মনোনিত ব্যক্তিদেরকে নিয়ে কমিটি গঠন করেন। কাবিকা, টিআর, ফেসিলেটিসহ বিভিন্ন কাজগুলো কমিশনের মাধ্যমে তাঁর মনোনিত ইউপি সদস্যদেরকে দিয়ে থাকেন। এই বিষয় নিয়ে ইউ.পি সদস্যদের মধ্যে কয়েকবার ঝগড়া বিবাদ হয়েছে। জন্ম নিবন্ধন, উত্তরাধিকারী, প্রত্যয়ন পত্রসহ বিভিন্ন ধরনে কাগজাদি দুর্নীতি করে থাকেন। সালিশের নামে বড় অঙ্কের টাকা জমা নেওয়া হয় সেই টাকা তিনি নিজেই আত্মসাৎ করে ফেলেন। এমন কোনো কাজ নেই যা তিনি করতে পারেন না, যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে বলে ভুক্তভোগী নারী দাবী করেন।
সর্বশেষ ঘটনার বিবরণ জানিয়ে বলেন- গত ২২ মে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আমাকে ২০ জন ত্রাণ গ্রহণকারী লোকের নাম দাখিলের জন্য বলেন। কিছুক্ষণ পর মোবাইল ফোনে আবার আমাকে জানান, ৩০ জন এর নাম দেওয়া যাবে। আবার আরো কিছুক্ষণ পর মোবাইল ফোনে বলেন, ৩০জন নয় ২০ জন এর নাম দিতে হবে। আমি সচিবকে এভাবে বার বার ভিন্ন কথা বলার কারণ জিজ্ঞাসা করিলে সচিব আমাকে জানান যে, চেয়ারম্যান মিলন বখত এর নির্দেশে বার বার তালিকা পরিবর্তন করতে হচ্ছে। গত ২৩ মে শনিবার সকাল ১০ ঘটিকার সময় ইউনিয়ন পরিষদে ত্রাণ বিতরণের জন্য আসি এবং পরিষদের সচিবের কক্ষে বসে ত্রাণ গ্রহণকারী লোকের মাষ্টার রোল কপি সংগ্রহ করে দেখার সময় চেয়ারম্যান মিলন বখত আসিয়া ঘটনাস্থলে আমাকে চেয়ারে বসা দেখিয়া উত্তেজিত হয়ে অকত্য ভাষায় গালিগালাজ করিতে থাকেন। আমি প্রতিবাদ করিলে তিনি উত্তেজিত হয়ে আমাকে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার তলপেটে লাথি মেরে চেয়ার থেকে নিচে ফেলে দেন।
এ সময় আমি প্রাণ রক্ষার্থে ঘটনাস্থল হইতে দৌড়ে বাহিরে চলিয়া যাই। স্থানীয় জনসাধারণের জন্য ত্রাণ বিতরণের নির্ধারিত স্থানে গিয়ে দাড়িয়ে পড়ি। তখন চেয়ারম্যান মিলন বখত এর হুকুমে ৮নং মনসুরনগর ইউনিয়নর পরচক্র, তাহারলামুয়া গ্রামের কন্টু মিয়ার পুত্র পরকিছ মিয়াসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৩/৪ জনকে নিয়ে এসে আমাকে মারপিট করতে থাকেন এবং আমার চুল টেনে ধরে কাপড় টানা হেচড়া করে শ্লীলতা হানি করেন। গলা টিপে ধরে শ্বাস রুদ্ধ করে প্রাণে হত্যার চেষ্টা করেন। এলোপাতাড়ি ভাবে কিল ঘুষি মারতে থাকে। এই সময় পরকিছ মিয়া আমার গলা থেকে ৮ আনা ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন আমার ভ্যানেটি ব্যাগে থাকা নগদ তিন হাজার টাকা নিয়ে যায়।
এ সময় উপস্থিত কয়েকজন ইউপি সদস্যসহ অন্যান্য লোকজন তাদেরকে বাধা নিষেধ দিয়া আমাকে প্রাণে রক্ষা করেন। চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা ঘটনাস্থলেই হুমকি প্রদর্শন করে বলে যে, মামলা মোকদ্দমা দায়ের করিলে আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনকে প্রাণে হত্যা করিয়া লাশ গুম করিয়া ফেলিবে। সংবাদ প্রাপ্ত হয়ে পরবর্তীতে আমার ছেলে আমাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে চিকিৎসা করায়। চেয়ারম্যান প্রভাবশালী ব্যক্তি থাকায় আমি শান্তিপূর্ণভাবে চলাফেরা করিতে পারিতেছি না। যেকোন সময় তারা আমাকে কিংবা আমার পরিবারের লোকদের মারাত্মক ক্ষতি করিতে পারেন। তিনি এ ঘটনায় জড়িত চেয়ারম্যনসহ অন্যান্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।