কাঁঠালচাঁপার আর্তনাদে হারিয়ে যাওয়া প্রহর (১৪ তম খণ্ড)
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৫০:০৬,অপরাহ্ন ০৩ মে ২০২০
জাকির মোহাম্মদ:
বকুলের জন্মদিন চলে গেছে গত কয়েকদিন হলো। তারে জানাতে পারিনি জন্মদিনের শুভেচ্ছা। সে নানা কারণ। প্রথম তার জন্মদিন দুইটি। কোনটি কোন সময় ধরে সেটি বলা মুশকিল। একবার হলো কি?
আমরা যেখানে থাকতাম সেখান জন্মদিনের আয়োজন করতে লাগলাম। বকুল জানে না। শুভ আর কাজল মিলে সব কাজ করছিলো। সব বন্ধুদের ইনবাইট করা হলো। সন্ধ্যা পরে সবাই আসবে কথা দিলো। এবং আসার জন্য সে প্রস্তুতি নিয়েও রেখেছিলো। সবকিছু ছাপিয়ে দেখা গেলো সন্ধ্যায় সবাই এসেছে বকুলের দেখা নেই। রাত দশটায় যখন আসলো তখন কাজলেদের নিয়ে বকুলের সে কী হাসাহাসি। এ দিন তো জন্মদিন পালন করি না। তাহলে কেন সন্ধ্যায় আসবো?
তারপর অনেক বার্থডে গেছে। নিয়ম রক্ষার জন্য যতটুকু করা লাগে ততটুকু করে যায় কাজল রা। বকুল এদিন খুব কষ্ট দিয়েছিলো সবাইকে। হয়তো এ কষ্টের মর্ম সে বুঝতে পারে নি।
বৃষ্টির ঘোরলাগা সকাল ছিলো। ফেরদৌসি অপাশে ফোনে আছে। কাজল তার সাথে নিবিঢ় মনোযোগে কথা বলছে। কী কথা এতো ভেবে পায় না বকুল। আজ কাঁঠাল দিয়ে মাংশ রান্না করার কথা ছিলো। রান্নার মসলাও রান্নার চুলায়। ভাঁজা হতে হতে একেবারে পুড়ে যাবার দশা। বকুল রাগের সাথে সে মসলা ফেলে দেয়। এ নিয়েও বিস্তর রাগ হয় কাজলের। তারপর সাতদিন কথা বলেনি সে ফেরদৌসির সাথে। ফেরদৌসি নক দিলে কেটে দিয়েছে না হয়, ব্যাস্ততার সতের নম্বর অযুহাতে পাস করেছে।
কেন কথা বলছে না, ফেরদৌসির সাথে এ নিয়েও এক বৈশাখ গরম ঝগড়া হয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে। কেন কথা বলবো,ঝাঁজের সাথে বলেছিলো কাজল। সেদিনে কথা বলাতে ছিলাম বলেই তো এতো সাধের কাঁঠাল রান্নার অর্ধেক মসলা ফেলে দিয়েছিলে। হাহাহাহাহাহাহা। সে কথা মনে রেখে কথা বলা হচ্ছে না। ভেরি গুড। সেদিনের যে বিষয় এখনও রাগ করে আছিস, সেটা আমার মনে আছে কি না একবার ভেবে দেখ। কাজল মনে মনে ডগমগ সত্যিই তো। কথাতো সেদিনে। ঘটনাও সেদিনের। এদিনের মধ্যে এমন বিষয় হান্দ্যাইয়া বা লাভ কী? দুজনেই বেড়িয়ে আসতে চায়। যাবার জন্য রেডি হচ্ছে তারা।
ফেরদৌসি যদিও মনে মনে চেষ্টা করে যাচ্ছিলো কাজলকে আর ফোন দেবে না, তারপরও একবার নক করা থেকে বিরত থাকে নি। কাজলের মন ভালো না থাকার যতগুলি অপশন আছে সবগুলি একসাথে সক্রিয় হয় না। এটা বিরাট ভালো লাগা। সে আস্তে আস্তে ট্রাই করছে সে সব কারণে ফেরদৌসি রাগ করে, এক আকাশ অভিমান নিয়ে আমার দিকে চেয়ে থাকে, তার থেকে যতটুকু পারা যায় যেন নিজেকে দূরে রাখে। কিন্তু আসলে তা পারা যায় না। পারার কথা নয়। যে অভিমানে ভাঙে না কোন পাথর হৃদয়, সে অভিমান যদি না করা যায়, তবে বাদ অভিমানের। অন্ততঃ বেঁচে থাকার জন্য সুন্দর জীবনের একটি নান্দনিক দৃৃষ্টি প্রেমের জন্য কত ভালো তার হিসেব কেউ নিরূপন করতে পারে না, সে যে সময়ে আছে তার থেকে আরেকটু সামনে না এগুনো থাকলে। কাজলের থার্ড সেন্স খুব সক্রিয়। সব সময়। সে বুঝতে চেষ্টা এই সেন্সটাকে কাজে লাগিয়ে সামনে এগোবার। যদি এভাবের বাইরে গিয়েও সেভাবে সে বুকের পরিমাপে ধরা দেয়, তবে একদিন বর্ষার দিনে বৃষ্টিভেজা দিলদারপুর ভরে যাবে লাল টকটকে জবা ফুলে। সে ফুলের সৌরভে মুগ্ধ হতে হতে দেখে আসা যাবে আব্বুর সে জীবন যেখানে আমরা কেবল খেলা করেছি সেই প্রতিযোগিতার যেখানে প্রতিযোগিতা না করলে আজ ঠিকে থাকতে পারতাম না। চিন্তার আনুকল্য আমাকে বিভোর করেছে। বকুলকে বুঝাতে পেরেছিলাম কি না জানিনা। জানিনা সেটির যে মেসেজ দিতে চেয়েছিলাম ফেরদৌসির মাঝে,সে কী গ্রহন করেছিলো। যদি করে থাকে তবে সে আজ বড় ভাগ্যবতী। আর অনাদর পথের ভাঁটফুল হয়ে রইলাম পড়ে।
সে সময় পরিকল্পনার পর কত পরিকল্পনা করেছিলাম সে সকল সময়। তা আজ কেবল হৃদয়জ অন্তঃপুরে বাজে। বাজতেই থাকে। সে শব্দের কোলাহলে জানান দিতে থাকা ভালোবাসা কতটুকু পিওর হলে পরে, চলে যাবার পর শত শত মাইল আবেগ নিয়ে কাজলের জীবন অগ্রসর হয়…চলবে