লন্ডনে আলোচনায় সিলেটের শতবর্ষী দবিরুল
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ মে ২০২০, ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
বৃটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক ক্যাপ্টেন নিরানব্বই বছর বয়সী টম মুর-এর পর এবার মিডিয়া মাতিয়ে তুলেছেন লন্ডন প্রবাসী সিলেটের শতবর্ষী দবিরুল ইসলাম চৌধুরী। টম মুর-এর মতো তিনিও লন্ডনে তার বাসার পিছনের বাগানে হেঁটে হেঁটে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সাহায্যের জন্য টাকা তুলছেন। প্রতিদিন রোজা রেখে তিনি এই কাজ করছেন এক সপ্তাহ হলো। তার আশা এতে ভাল অংকের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবেন তিনি। তাকে নিয়ে মিডিয়ায় গুরুত্ব দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ পাচ্ছে। দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর জন্ম সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জে। তার একটি সাক্ষাৎকার ভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। এতে বলা হয়, এর আগে বৃটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক একজন ক্যাপ্টেন টম মুর একইভাবে বাগানে হেঁটে এনএইচএস-এর জন্য ৩ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড তুলে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন।
বৃটেনের একটি বাংলা টিভি চ্যানেল আয়োজিত অর্থ সংগ্রহ তহবিল কর্মসূচির অংশ হিসেবেই দবিরুল ইসলাম চৌধুরী এই উদ্যোগ নিয়েছেন।
তার জন্ম ১9২০ সালে সিলেটের সুনামগঞ্জে।
বিবিসি তার কাছে জানতে চায়, অর্থ সংগ্রহের জন্য এমন হাঁটার কথা কিভাবে তার মাথায় এলো?
জবাবে দবিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যখন ভাইরাস দেখলাম, তখন চিন্তা হলো যে কিছু করি। তখন ছেলের সঙ্গে আলাপ করি। ছেলেই সব ব্যবস্থা করে দেয়। আমার থেকে কম বয়সী একজন করতে পারে। আমি কেন পারবো না। এ সময় কম বয়সী কে সে পরিচয়ও দেন তিনি। উল্লেখ করেন, বৃটেনের সাবেক ক্যাপ্টেন টম মুর-এর কথা।
কতটুকু হাঁটেন প্রতিদিন? বিবিসির এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাগানের চারপাশে ১০০ বার ঘুরে আসেন। আস্তে হাঁটলে এতে প্রায় আধা ঘন্টার মতো সময় লাগে। জোরে হাঁটলে আরও কম সময় লাগে।
বিবিসির পাল্টা প্রশ্ন- এই বাগানে হাঁটার আগে আপনি কি ডেইলি হাঁটতে যেতেন? জবাবে তিনি বলেন- জি, হাঁটার অভ্যাস আমার আছে। হাঁটা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। সব সময় হাঁটি। প্রায় ৬ কিলোমিটার।
প্রতিদিন ব্যায়াম করেন আপনি? এ প্রশ্নে বলেন, হাঁ। ডেইলি ব্যায়াম করি। ছোটবেলায় গভমেন্ট স্কুলে পড়েছি। তখন শিখছি ব্যায়াম। আমি সব ব্যায়াম জানি।
কোথায় করেন এই ব্যায়াম, ঘরের ভিতরেই? জানতে চায় বিবিসি। তিনি বলেন, হা, ঘরের ভিতরেই। হাতের ব্যায়াম করা যায়। বডির করা যায়। মাথার করা যায়। সব ব্যায়াম আছে।
বিবিসির প্রশ্ন- বোঝাই যাচ্ছে আপনি খুবই ফিট। ১০০ বছর বয়স হওয়ার পরও আপনি কি ডাক্তারের কাছে যান? তিনি বলেন, না। ডাক্তার বলে- তুমি আমার চেয়ে ভাল। তাই আমি ডাক্তারের কাছে যাই না। অন্য মানুষরা যাক। আমি তো সুস্থ আছি। রোজা রাখি। আমার কোনো রোগ নাই তো।
রোজা রাখার পাশাপাশি হাঁটছেন? তো এটার রহস্যটা কি? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আল্লাহ আমাকে হেল্প করে। বুঝতে পারবেন না, একবার যদি যেকোনো জিনিস আপনি যদি প্রাকটিস করেন, আপনার অভ্যাস হয়ে যায়, তখন মানুষ সেভাবেই চলে।
আর খাওয়া দাওয়ার পথ্য? দবিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যা আছে। বিসমিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ।
অর্থ সংগ্রহের জন্য আপনার এই উদ্যোগ। লোকজনের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, সাড়া তো সাংঘাতিক হয়েছে। বিশেষ করে রমজানের মধ্যে সবাই দান করেন, তাই রমজানে সংগ্রহ অনেক হবে ইনশাল্লাহ। আল্লাহ যদি হেল্প করে তাহলে সবাই অর্থ দেবেন। আপনি ভাবতে পারবেন না। ইয়াংয়ের মতো আমি হাঁটি।
বিবিসি জানতে চায়, আপনার জন্ম সিলেটের সুনামগঞ্জে ১9২০ সালে। তখনকার কথা কিছু মনে আছে সুনামগঞ্জের? তিনি বলেন, মনে আছে সুনামগঞ্জের কথা। ছোটবেলায় আমি স্কলারশিপ পাই। ৬ ভাইয়ের ছোটভাই আমি। টেস্ট দিয়ে সিলেটে ভর্তি হই স্কলারশিপ নিয়ে। পড়তে যাই ঘোড়ায় চড়ে।
করোনা ভাইরাসের মধ্যে এনএইচএসের জন্য টাকা সংগ্রহের জন্য আপনার এই হাঁটাহাঁটি- এর আগে কখনো কি আপনি এই ধরনের কাজ করেছেন? দবিরুল ইসলাম চৌধুরী জবাবে বলেন, চেয়ারম্যান ছিলাম আমি।
বিবিসির প্রশ্ন- আরেকটা মিডিয়াতে দেখছিলাম আপনি গাড়ি চালিয়ে এক জায়গা থেকে কোথাও গিয়েছিলেন। অমনি দবিরুল ইসলাম চৌধুরী মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলেন, ও! আমি লন্ডন থেকে বাংলাদেশে গিয়েছিলাম গাড়ি চালিয়ে ইয়াং থাকতে। এতে সময় লেগেছে আনুমানিক ১৫ দিন।
ওটার কোনো উদ্দেশ্য ছিল কি? বলেন, আমার সবসময় উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে হেল্প করা। জীবনে করে নাই কেউ, ওইটা করার চিন্তা ছিল, যে এটা আমি করতে পারি। আমার মধ্যে ইন্সট্রাকশন আসছে যে, ওটা আমি করতে পারবো, ইনশাল্লাহ।