সুনামগঞ্জে আগাম বন্যার হুঁশিয়ারি: শ্রমিক সংকটে কৃষকের মাথায় হাত
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ এপ্রিল ২০২০, ৯:০৩ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও কৃষি বিভাগ আগাম বন্যার হুঁশিয়ারি দিয়ে দ্রুত ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারনে ধান কাটতে পারছেন না সুনামগঞ্জের কৃষক। সুনামগঞ্জের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় প্রতিবছর বাইরের অঞ্চল থেকে সুনামগঞ্জে যেসব ধানকাটা শ্রমিক আসেন। এবার তারা আসছেননা। ফলে বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের শ্রমিকের অভাব দেখা দিয়েছে। দেখার হাওরের কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, তিনি ৪০ কেয়ার জমিতে ধান রোপণ করেছেন।অধিকাংশ জমির ধান পেকে গেছে। অন্যান্য বছর ১০/১২ জন ধান কাটা শ্রমিক বাইরের অঞ্চল থেকে এসে ধানকাটা মাড়াইসহ ধান ঘরে তোলে দিয়ে যেতেন। এ বছর করোনা ভাইরাসের কারণে তারা আসছেনা। স্থানীয় কিছু শ্রমিক সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু আগাম বন্যা হলে এই স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে ধানকাটা ও ঘরে তোলা সম্ভব নয়। তাই তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন।
কৃষি বিভাগ জানায়, এবার সুনামগঞ্জ জেলায় ২ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। হাওরে আবাদকৃত ১ লাখ ৬১ হাজার ১০৫ জমির ১০ ভাগ জমির ধান পেকেছে। বাকি ধান এক সপ্তাহের মধ্যে পেকে যাবে। হাওরের এসব ফসল কাটতে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগবে।
কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে , এ মাসের শেষ দিকে আগাম বন্যা হতে পারে। জানা যায়, দেশের হাওর অধ্যুষিত সাত জেলায় বোরো ধান কাটার জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটার শ্রমিক পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বোরো ধান কাটার জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিক কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌঁছে গেছেন। এসব জেলা থেকে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে সুনামগঞ্জেও প্রয়োজনীয় ধান কাটার শ্রমিক পৌঁছাবেন।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসন জানায়, জেলা প্রশাসনের বিশেষ উদ্যোগে বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তারা স্বাস্থ্য বিধি মেনে হাওরের ধান কাটবেন। এ ছাড়া ধান কাটার জন্য স্থানীয় বালি, পাথর শ্রমিক ও অন্যান্য শ্রমিক ধান কাটায় যোগ দিয়েছেন। এবছর সুনামগঞ্জে ধানকাটার জন্য কৃষকদের হারভেস্টর মেশিন দিচ্ছে সরকার।
কৃষি বিভাগ জানায়, ধান কাটার জন্য ১২৬টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ২১২টি রিপার মেশিন জেলায় সরবরাহ করা হয়েছে। তবে সুনামগঞ্জের কৃষকরা জানান, এসব মেশিন সবার পক্ষে আনা সম্ভব নয়। একভাগ মূল্য পরিশোধ করে বাকি টাকা কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে এই মেশিন দেওয়া হচ্ছে। তাই নগদ টাকা হাতে নেই কৃষক এই মেশিন ক্রয় করতে পারছেননা। এছাড়া কৃষকরা জানান, একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টর ৩ হেক্টর ও একটি রিপার দৈনিক ২ হেক্টর ও দৈনিক এক হেক্টর জমির ধান কাটতে ২৫ জন শ্রমিক লাগে। এখানেও শ্রমিকের প্রয়োজন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন- ভারতের মেঘালয়, আসাম ত্রিপুরা ও বরাক অববাহিকায় ভারী বৃষ্টিপাত হবে। একারণে জেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটা, খাসিয়ামারাসহ সব নদী দিয়ে পাহাড়ি ঢল নামবে। চলতি মাসের ২৫ তারিখ থেকে ভারী বর্ষণের সঙ্গে ব্যাপক পাহাড়ি ঢল নেমে আসতে পারে। তাই দ্রুত ফসল কাটা উচিত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ সফর উদ্দিন বলেন, হাওরের ১০ ভাগ জমির ধান পেকে গেছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে পুরো ধান কাটা শুরু হবে। এখন ২৮ ধান পাকছে। আগামী সপ্তাহে ২৯ জাতের ধান পাকতে শুরু করবে। তবে হাওরের সব ফসল পাকতে ও কাটতে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগবে।
জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ বলেন, ফসল কাটার শ্রমিকের সংকট দূর করতে প্রশাসন সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাওরে অনেক শ্রমিক ধান কাটছেন। রবিবার ( ১৯ এপ্রিল) পর্যন্ত ১৮ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। আর হাওরে ৩০ হাজার শ্রমিক ধান কাটার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।