‘ডিজিটাল সিটি’: বদলে যাচ্ছে সিলেট
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:৫৮ পূর্বাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক :
‘ডিজিটাল সিটি’ হওয়ার পথে এগোচ্ছে সিলেট নগরী। সৌন্দর্যবর্ধন, যানজট নিরসন, তারের জঞ্জাল সরানোসহ নানামুখী পদক্ষেপে এই নগরীকে নতুন রূপে সাজানোর কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। এবার পর্যটন নগরী ‘কালার কোডিংয়ের’ আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে সিটি করপোরেশন (সিসিক)। এটি বাস্তবায়ন হলে নগরীর চেহারা বদলে যাওয়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
‘কালার কোডিং’ হচ্ছে কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকাকে একটি নির্দিষ্ট রঙের আওতায় আনা। এক্ষেত্রে এলাকার বাসা, বাড়ি রঙ হয় একই। উদাহরণস্বরূপ ভারতের রাজস্থান রাজ্যের রাজধানী জয়পুরের কথা বলা যায়। জয়পুরের প্রায় সব স্থাপনার রঙ গোলাপি। ফলে এ শহরকে ‘পিংক সিটি’ বলা হয়। পর্যটকদের কাছে গোলাপি শহর জয়পুর বেশ আকর্ষণীয় স্থান।
জানা গেছে, সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকাকেও এভাবে নির্দিষ্ট রঙের আওতায় (কালার কোডিং) আনতে সিসিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে নগরীর চেহারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সিলেট নগরীতে কালার কোডিংয়ের শুরুটা হবে হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ এলাকায়। দরগাহের প্রধান ফটক থেকে মূল ফটক পর্যন্ত সড়কে সম্প্রতি বৈদ্যুতিক তারকে মাটির নিচে (আন্ডারগ্রাউন্ড) নেওয়া হয়েছে। এই এলাকায় কালার কোডিংয়ের শুরুটা করতে চাইছে সিসিক।
শাহজালাল (রহ.) দরগাহের মূল ফটকের রঙ আকাশী-সাদা। পুরো দরগাহ এলাকায় এই রঙ দুটির আধিক্য বেশি। এজন্য দরগাহের প্রধান ফটক থেকে মূল ফটক পর্যন্ত সকল স্থাপনার রঙ আকাশী-সাদায় রূপান্তর করতে চায় সিসিক। এজন্য স্থায়ী বাসা-বাড়ির মালিকদের সাথে সিটি মেয়র কথা বলেছেন বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি জানান, সিলেট মহানগরীকে দেশের মধ্যে ব্যতিক্রমী স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে, এখানাকার সৌন্দর্য বাড়াতে কালার কোডিংয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কালার কোডিংয়ের মাধ্যমে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডকে ভিন্ন ভিন্ন রঙের আওতায় আনার পরিকল্পনা সিসিকের রয়েছে। ওয়ার্ডের বিভিন্ন ধরনের স্থাপনার রঙ হবে একই। এক ওয়ার্ডের রঙের সাথে অন্য ওয়ার্ডের রঙের মিল না রাখার চিন্তাও আছে সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন মহলের।
তবে এই পরিকল্পনা কতোটা বাস্তবায়ন হবে, তা নিয়ে আছে সংশয়। কেননা সাধারণ নগরবাসী নিজের বাসা, বাড়ি কিংবা বিপণীবিতানকে সিসিকের নির্ধারিত রঙের সাথে মিল রেখে সাজাবেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আর সিটি করপোরেশন যদি রঙ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়, সেটি কতোটুকু যৌক্তিক হবে, এ নিয়েও আছে প্রশ্ন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা চাই সিলেটকে ব্যতিক্রমী স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে। এই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে অনেকগুলো প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ‘কালার কোডিং’ বাস্তবায়ন করা গেলে স্মার্ট সিটির দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে সিলেট।’
অবশ্য সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘সিসিক নগরবাসী তথা ভবনের মালিকদের সাথে আলোচনা করেই কাজ করবে। পর্যায়ক্রমে সকল ওয়ার্ডে কালার কোডিং বাস্তবায়নের চিন্তা আমাদের আছে।’
জানতে চাইলে সিসিক কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ বলেন, ‘প্রাথমিক অবস্থায় দরগাহ এলাকার বাসা-বাড়ির রঙ আকাশী-সাদা করার উদ্যোগ নিয়েছেন মেয়র। তবে সিটি করপোরেশন যদি পুরো নগরীতে কালার কোডিংয়ের উদ্যোগ নেয়, এটিকে আমরা স্বাগত জানাবো। তবে পুরো নগরীতে এটা বাস্তবায়ন করতে গেলে সবার মধ্যে মতৈক্য হবে কিনা, এটি একটি প্রশ্ন। আবার করপোরেশন যদি রঙ করার দায়িত্ব নেয়, সেটির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন থাকবে।’
তবে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরগণ উদ্যোগী হয়ে এলাকার পাড়া-মহল্লার বাসিন্দাদের নিয়ে এলাকাভিত্তিক কালার কোডিং বাস্তবায়ন করা যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন এই কাউন্সিলর।