দু’মুঠো খাবারের জন্যই সুনামগঞ্জে এদের এতো সংগ্রাম!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জানুয়ারি ২০২০, ৬:২৪ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
দেশে দেশে বা অঞ্চলভেদে তাদের একেক নাম, আর বেঁচে থাকার জন্য বিচিত্রসব পেশা। জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন জায়গায় তাদের দেখা যায়। এদের চেহারা, চলন, পোষাক ও কথাবার্তাও অদ্ভুত। যাযাবরের মতো এখানে-ওখানে দল বেঁধে প্রতিনিয়ত ঘুরে বেড়ায়।
তাদের একমাত্র প্রধান পেশা সাপ ধরা। তাই তাদের বাইদা বা বেদে নামেই ডাকে সবাই। বেদে মানে ভ্রমণশীল বা ভবঘুরে। নদীনির্ভর বাংলাদেশে বেদেদের সহজ বাহন নৌকা। নৌকায় সংসার, আবার নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো দেশ-দেশান্তরে। আর যাযাবর বলেই এদের জীবন বৈচিত্র্যময়।
দেশের বিভিন্ন জায়গার মতো হাওরবেষ্টিত জেলা সুনামগঞ্জে রয়েছে এই সম্প্রদায়। জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউপির পাগলা বাজারের পুলের পূর্ব পাশে খোলা আকাশের নিচে তাদের বাস। সেখানে তাঁবু টাঙিয়ে বসবাস করছে ৩০ থেকে ৪০টি বেদে পরিবার। তারা সবাই সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসেছেন।
এরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়, কোথাও নৌকায় আবার কোথাও উচুঁ ভূমিতে বা খোলা আকাশের নিচে তাবু টাঙিয়ে বাস করে। যার জন্য বেদেদের সন্তানদের লেখাপড়ার কোনো সুযোগ হয় না।
বেদেরা সাপ ধরার পাশাপাশি গ্রামে গ্রামে সাপের খেলা, বানর খেলা ও বিভিন্ন রোগের তাবিজ-কবচ বিক্রি করে থাকে। এসব থেকে যা আয় হয়, তা দিয়েই কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে তারা বাঁচে।
বেদে সম্প্রদায়ের কয়েকজন জানায়, ভালো নেই তাদের জীবন। হাসান নামে এক বেদে শিশু জানায়, আমরা গরিব ঘরের সন্তান, ঠিকমতো দুবেলা খেতে পারি না, বাবা সারাদিন দেড়শ থেকে দুইশ টাকা আয় করে। তা দিয়ে কি আমাদের জীবন চলে। আমাদের ঠিকমতো খাবার জোটে না। আবার পড়াশুনা করবো কিভাবে? জন্ম থেকেই এভাবেই তাঁবুতে বংশ পরম্পরায় বসবাস করি। আমরা এভাবেই চলি।
আমাদের বেদে সম্প্রদায়ের যতই দিন যাচ্ছে ততই করুণ পরিণতি বাড়ছে। সরকার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিলেও বেদে সম্প্রদায়ের সচ্ছল পরিবাররাই এ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে।
বেদে সম্প্রদায়ের সরদার হোসেন মিয়া। তিনি জানান, শুধু আমরা নই, আমাদের মতোই অনেক বেদে সম্প্রদায় আছে। তারাও আমাদের মতো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খোলা আকাশের নিচে তাঁবুতে বসবাস করছেন। আমাদের মতো গরিব অসহায় বেদে সম্প্রদায় এ সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই আমরা দুমুঠো খাবারের জন্য স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে দেশে-বিদেশে ঘুরে জীবন বাঁচার জন্য লড়াই সংগ্রাম করেই যাচ্ছি।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ইউএনও জেবুন নাহার শাম্মী বলেন, বেদে পরিবারগুলো ভ্রাম্যমাণ জীবনযাপন করায় কোনো স্কুলে তাদের শিশুরা স্থায়ীভাবে পড়াশোনা করতে পারছে না। এ ব্যাপারে এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলবো।
তিনি আরো বলেন, কিছুদিন আগে বৃষ্টির মাঝে গিয়েও শীতবস্ত্র বিতরণ করেছি। উপজেলা প্রশাসন তাদের পাশে আছে। তাদেরকে কীভাবে সুযোগ-সুবিধা দেয়া যায়, এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।