সবকিছু হারিয়ে ফেসবুকে ওমান প্রবাসী বেলালের ‘আর্তনাদ’
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জানুয়ারি ২০২০, ১২:২৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের তুলনায় ওমানে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীও তুলনামুলক বেশি।ওমানে বসবাসরত প্রায় ৮ লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত।দেশটিতে ছোটোখাটো ব্যবসা বাণিজ্যে তাদের অবস্থান বেশ প্রশংসনীয়। এর ভেতর উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, কফি-শপ, রেস্টুরেন্ট, টুপি, রুমাল, কসমেটিক্স, গার্মেন্টস, ফার্নিচার ও এগ্রিকালচার।
তবে ওমানে কৃষি বিপ্লব ঘটেছে বাংলাদেশিদের মাধ্যমেই। সাধারণত দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায় ভিসা নিয়ে এসে ব্যবসা পরিচালনা করছেন এমন দৃশ্য দেখা যায়নি। তবে ওমানে আজ যারা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী- এক সময় তারা দেশটিতে শ্রমিক হিসেবে এসেছিলেন। নিজেদের প্রচেষ্টা ও যোগ্যতা দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যে সফল হয়েছেন।
সাধারণত ওমানে কেউ ব্যবসা করতে চাইলে দেশটির আইন অনুযায়ী একজন ওমানিকে অবশ্যই অংশীদার হিসেবে রাখতে হয়। তার কাছে ইনভেস্টর ভিসাও থাকতে হবে। দেশটিতে বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে হলে নিজেকে অবশ্যই আগে একজন বিনিয়োগকারীর ভিসা লাগাতে হবে।
যদিও বিনিয়োগকারী ভিসা ব্যয়বহুল হওয়ায় দেশটিতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ওই দেশের একজন ওমানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে। বিষয়টি অনেকের জন্য কাল হয়েও দাঁড়ায়।
এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে বেলালের বেলায়। সবকিছু হারিয়ে বুধবার নিজের ফেসবুকে ‘আর্তনাদ’ শিরোনামে একটি পোস্ট করেছেন বেলাল।
তার পোস্টটি হুবুহু তলে ধরা হলো-
‘আর্তনাদ’
‘৩০ হাজার রিয়ালের (৬২লাখ টাকা) দোকান, সকালে অনেক টাকার বাজার করে ক্যাশে এসে বসার সাথে সাথে স্পন্সরের ফোন এলো দোকানের চাবি দোকান ক্রয়োইচ্ছুক একজন ওমানি আসবে উনাকে বুজিয়ে দিতে। সকালের বিক্রিত ক্যাশটাও যেন আমি না নেই।
আরেকটি দোকান নেবো বলে অতিরিক্ত কিছু মালপত্র ছিল। নির্দেশ এল দোকান থেকে কোনো কিছুই নিতে পারবো না। পরে আমাকে দোকানের মূল্য বাবদ ৯ হাজার (২০ লাখ) দেওয়া হবে বলা হলেও আজ কাল করে ১ বছরেও দিল না।
এভাবে ৪টা দোকান গেল (২টা ওমানি, ২টা খোজা স্পন্সর) কনস্ট্রাকশানে ৪টা বিল্ডিংয়ের ফাইনাল বিল ৮০ হাজার রিয়াল ওমানি দিল না (বেলুচি স্পন্সর)। সব মিলিয়ে ২ কোটি টাকার মার খেয়ে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারলাম না। এর মধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে কেঁচোর গর্তে যা ছিল তা নিতে গিয়ে দেখি সাপের গর্ত, ছোবলের ভয়ে হাত বাড়ালাম না! হার্ট ভালো ছিল বিধায় বেঁচে গেলাম।
১ বছর অনেক দুঃখ কষ্ট বুকে নিয়ে, অনেক বেলা না খেয়েও দিন কাটিয়েছি। ১১টা রিয়াল পকেটে নিয়ে দোকান থেকে বের হয়েছিলাম। শেষ সম্বল ছিল ১টা ক্যাশ কাউন্টিং মেশিন আর গাড়ী। সেদুটো বিক্রি করে ওমরাহ হজ্ব করে এক বুক জ্বালা নিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে চিরতরে দেশে চলে এলাম।
এখন স্রোতহীন নদীর মতো, পথ হারা পথিক এর মতো। টেনশনের মধ্যে থাকলেও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। ওমানে কারো মনে যদি অনিচ্ছাকৃত ভাবে সামান্যতমও দুঃখ কষ্ট দিয়ে থাকি তার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ক্ষমা করে দেবেন সবাই, ইচ্ছা না থাকলেও আবার ওমানে ফিরে আসবো বলে কাউকেই বলে আসি নাই তার জন্যও ক্ষমা করবেন সবাই। আমাকে ভুল না বোঝার অনুরোধ রইলো। আসমান সে ঘিরা খাজুর পে আটকা। আমার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ হাফেজ।
এমন অনেক বেলালই সর্বহারা হয়েছেন ওমানের কিছু অসাধু নাগরিক দ্বারা। মাস্কাটের ইদ্রিস জনি নামে আরেক ভুক্তভোগী বেলালের সেই স্ট্যাটাসে মন্তব্য করে বলেন, আমার কথা মনে আছে হয়তো। ৬ বছর আগে বাংলাদেশ সমপরিমাণ এক কোটি বিশ লাখ টাকার ক্ষতি হয় একই ভাবে। ভাগ্যিস আমার চাকরি ছিল তা না হলে আমার কি হতো চিন্তা করা যায়? এমন অনেক ভুক্তভোগী রয়েছে, যাদের তিলে তিলে গড়া প্রতিষ্ঠানকে রাতারাতি নিয়ে নিচ্ছেন ওমানিরা। এইসব বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর ভিসা ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে না থাকায় আইনগত কোনো পদক্ষেপ ও নেওয়া সম্ভব হয় না। তাইতো সবকিছু হারিয়ে বেলালের মতো চুপিসারে দেশে চলে আসতে হয়।