গ্রেপ্তার হলো শারপিন টিলা ‘খাদক’ ফারুক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জুলাই ২০১৯, ১২:১৯ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
গত বছরের জুন মাসে পুলিশের কাছ থেকে ফারুককে ছিনিয়ে নিয়েছিল ভাই বশর ও তার লোকজন। এরপর থেকে হত্যা মামলায় পুলিশের খাতায় পলাতক আসামি ছিল ফারুক। কয়েকদিন আগে র্যাব সদস্যরা সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের শারপিন টিলা এলাকা থেকে ২০ মামলার পলাতক আসামি বশরকে গ্রেপ্তার করেছিল। বশর গ্রেপ্তারের পর পালিয়ে বেড়াচ্ছিল তার ভাই ফারুকসহ অন্যরা। গত মঙ্গলবার ফারুক র্যাবের হাতে আটক হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা মামলাসহ ৫টি মামলা। র্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার মেজর শওকাতুল আমীন প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত মঙ্গলবার দুপুরে র্যাবের একটি দল সিলেট নগরীর জালালাবাদ থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় তারা কুমারগাঁও বাসটার্মিনাল এলাকা থেকে হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফারুক হোসেনকে আটক করে।
ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্টসহ ৫টি মামলা রয়েছে বলে জানায় র্যাব। ফারুক হোসেন কোম্পানীগঞ্জের জালিয়ারপাড় লোকার শুকুর আলীর ছেলে। আটকের পর র্যাব সদস্যরা তাকে কোম্পানীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, ফারুককে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের শারপিন টিলার ‘খাদক’ ছিল ফারুক হোসেন। তার আরেক ভাই বশরও শারপিন টিলা নিয়ন্ত্রণ করতো। তারা শারপিন টিলায় নির্বিচারে পাথর উত্তোলন করে গোটা টিলাকে ধ্বংস করেছে। আর তারা লুটে নিয়েছে কোটি কোটি টাকার পাথর। শারপিন টিলায় পাথর উত্তোলনকালে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় এক বছর আগে ফারুকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলায় আসামি হলেও নিজ এলাকায় দাপটের সঙ্গে বসবাস করতো ফারুক হোসেন। তার অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর গত বছরের জুন মাসে শারপিন বাজারে অভিযান চালায় কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ। এ সময় পুলিশ সদস্যরা তাকে আটক করে হ্যান্ডক্যাফ পরিয়ে থানায় নিয়ে আসছিল। এ খবর পেয়ে ফারুকের ভাই বশর ও তার সহযোগীরা পুলিশের ওপর হামলা করে ফারুককে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ঘটনার পরদিন পুলিশ হ্যান্ড ক্যাফ উদ্ধার করলেও ফারুককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এরপর থেকে তালিকাভুক্ত পলাতক আসামি হিসেবে এলাকায়ই ছিল ফারুক হোসেন। কয়েকদিন আগে র্যাব সদস্যরা শারপিন টিলার জালিয়ারপাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করে তার ভাই আলোচিত বশর ওরফে বশর কোম্পানীকে। এরপর থেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল ফারুক। মঙ্গলবার র্যাব সদস্যরা তাকে আটক করে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত শারপিন টিলায় পরিবেশ ধ্বংস করে অবাধে পাথর লুটপাট করা হয়েছে। চিহ্নিত পাথরখেকো চক্রের সদস্যরা যান্ত্রিক দানব বোমা মেশিন লাগিয়ে ওই টিলা ধ্বংস করে ফেলে। আর ধ্বংস করতে গিয়ে অন্তত ৩০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় সেখানে। এসব মৃত্যুর ঘটনায় ওই সময় মামলা হলেও খাদকরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এরপর ফারুককে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে পুলিশ আক্রান্ত হওয়ায় আলোচনায় আসে শারপিন টিলা। কিন্তু থেমে থাকেনি পাথর লুটপাট। নির্বিচারে পাথর উত্তোলনের মধ্যে ধ্বংস করা হয়েছে শারপিন টিলাকে। কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা হলেও পাথরখেকোরা পিছু হটেনি। তবে, দায়ের করা মামলায় পাথরখেকো চক্রের অনেক সদস্য আসামি হয়। এসব মামলায় পুলিশ চার্জশিট দেওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এখন এসব আসামি গ্রেপ্তারে র্যাব অভিযান চালাচ্ছে। বশর গ্রেপ্তারের পর শারপিন বাজার ও জালিয়ারপাড় এলাকায় স্বস্তি ফিরেছে। বশর ওরফে বশর কোম্পানী পাথর লুটের টাকায় কোটিপতি হওয়ার পর শারপিন বাজারে অপরাধ আস্তানা গড়ে তুলেছিল। এমনকি নিজের টাকায় তৈরি তিনটি সিলেটি নাটকে অভিনয় করে। এসব নাটকেও নিজেকে প্রভাবশালী ব্যক্তির ভূমিকায় প্রকাশ করেন বশর কোম্পানী। এদিকে, শারপিন টিলার খাদক বশর ও ফারুক গ্রেপ্তার হওয়ার পর অন্যরাও পিছু হটেছে। এখন শারপিন টিলায় আগের মতো সিন্ডিকেটরা আর পাথর লুটপাট করছে না। সূত্র- মানবজমিন।