নবীগঞ্জে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর বেহাল দশা, চিকিৎসকসহ অন্য পদে জনবল সংকট
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জুলাই ২০১৯, ৩:৫৮ অপরাহ্ণ
ছনি চৌধুরী, হবিগঞ্জ থেকে :
জনবল সংকট ও তদারকির অভাবে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অবস্থিত উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র । ডাক্তারসহ বিভিন্ন পদে জনবল না থাকায় প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম ইউনিয়ন ভিত্তিক এসব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের। এতে গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা’সহ গ্রামীণ শিশু,নারী ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম ব্যাপক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীর বদলী জনিত কারণে জনবল শূণ্য হয়ে পড়েছে এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলো । জোড়াতালি দিয়ে চলছে এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসা কার্যক্রম।
সংশ্লীষ্ট সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার দেওপাড়া,আউশকান্দি,গোপলার বাজার,মান্দারকান্দিতে ৫টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে মেডিকেল অফিসার,মিডওয়াইফ,উপ-সহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা,ফার্মাসিস্ট,অফিস সহায়কের পদে ২৫টি পদ রয়েছে। ৫টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে দেওপাড়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শুধুমাত্র একজন অফিস সহায়ক রয়েছে। এ কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার, মিডওয়াইফ, উপ-সহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা, ফার্মাসিস্ট পদে নেই কেউ।
ইনাতগঞ্জ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার ও অফিস সহায়ক রয়েছে বাকি মিডওয়াইফ,উপ-সহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা,ফার্মাসিস্ট এর পদ রয়েছে শূন্য।
আউশকান্দি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার,মিডওয়াইফ,উপ-সহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা,ফার্মাসিস্ট,অফিস সহায়কসহ সবকটি পদ রয়েছে শূন্য।
গোপলার বাজার উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপ-সহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা পদে ১জন কর্মরত রয়েছেন। বাকি মেডিকেল অফিসার,মিডওয়াইফ,ফার্মাসিস্ট,অফিস সহায়ক পদে নেই কেউ।
মান্দারকান্দি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপ-সহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা ও অফিস সহায়ক পদে ২জন কর্মরত রয়েছেন। বাকি মেডিকেল অফিসার,মিডওয়াইফ,ফার্মাসিস্ট পদে নেই কেউ। এসব উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে মোট পদে ২৫জনের স্থলে রয়েছে মাত্র ৬জন। জনবল না থাকায় প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম সবকটি উপ-স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের।
ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আশপাশ ও দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগিদের। জনবল সংকটের কারণে গর্ভবতী মহিলারা প্রসব সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জরুরী প্রয়োজনে নিয়ে যেতে হচ্ছে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দ‚রত্বে অবস্থিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। জনবল না থাকায় এবং নিয়মিত তদারকি অভাবে ঝোপঝাড়ের বাসস্থানে পরিণত হয়েছে অনেক উপ-স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র গুলো।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ফুলেছা বেগম বলেন, আমার জ্বর কাশি, এসেছিলাম ঔষুধ নেয়ার জন্য এখানে ঔষধ ও নেই ডাক্তার ও নেই তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।
দেওপাড়া এলাকার শাহ বজলুর রশীদ জানান, দীর্ঘদিন ধরে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক নেই। শুধুমাত্র একজন অফিস সহায়ক রয়েছেন,যিনি মাঝে মধ্যে আসেন এবং ঘন্টা দুয়েক পরে আবার চলে যান। তাই জরুরী প্রয়োজনে গুরুতর রোগীরা বাড়ির কাছে স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকা সত্বেও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উদয় আহমেদ নামে এক যুবক জানান, অনেক দিন যাবত চিকিৎসক নেই,ঔষধও নেই,অন্যান্য পদেও লোক নেই, তাই এই এলাকার মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সঠিক ভাবে দেখভাল না করায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রেটি ঝোপঝাড়ের জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। আমরা দ্রুত চিকিৎসকসহ অন্যান্য পদে লোকবল দেয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি।
স্থানীয় লুৎফুর রহমান নামে একজন জানান, কিভাবে আমাদের সমস্যা বলবো ভাষা খুজে পাচ্ছিনা, অনেক গর্ভবর্তী মায়েরা জরুরী প্রয়োজনে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রসব সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চিকিৎসক না থাকায় প্রায় প্রসব সেবার জন প্রায় ২৫-৩০ কিলো মিটার দূরত্বে নিয়ে যেতে হচ্ছে। দ্রুত এ সমস্যা সমাধাণে সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা সমস্যার কথা স্বীকার করে জানান, আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই ডাক্তার সংকট রয়েছে, তাই রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকার ডাক্তার নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে,এটি প্রক্রিয়াধীন আছে । নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে প্রত্যাকটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তাসহ অন্যান্য পদে জনবল দিতে পারবো বলে আমি আশাবাদী।