জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ সড়ক মেরামতের ১৩ লাখ টাকার হদিস নেই
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জুলাই ২০১৯, ১:০১ পূর্বাহ্ণ
জগন্নাথপুর সংবাদদাতা :
জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ-রশিদপুর সড়কের জরুরি অস্থায়ী মেরামতের ১৩ লাখ টাকার হদিস নেই। গত মাসের ৩০শে জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও গতকাল পর্যন্ত সড়কেরও কোথাও কাজ করতে দেখা যায়নি। গত দুই মাসেও ১৩ লাখ টাকার জরুরি মেরামত কাজ শেষ না হওয়ায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আর সড়কে জনদুর্ভোগ উঠেছে চরমে। গত সোমবার সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ সড়কের জগন্নাথপুর অংশের মিরপুরের মেঘাখালি সেতুর মুখ, মীরপুর বাজার এলাকা, রতিয়ারপাড়া, ইসহাকপুর, ভবেরবাজার, হাসপাতাল পয়েন্টস্থ হামজা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে, বটেরতলা এলাকাসহ সড়কের অধিকাংশ স্থানে পিচ উঠে মাটি বের হয়ে পড়েছে। ছোট বড় অসংখ্য গর্ত আর খানাখন্দে বৃষ্টির পানি জমে একাকার হয়ে গেছে। এর মধ্যে সোমবার দুপুরে মেঘাখালি সেতুর মোড়ের গর্তে পড়ে একটি ট্রাক আটকে থাকতে দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন প্রায় প্রতিদিনই ওই স্থানসহ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ট্রাকসহ ভারি যানবাহন আটকে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ সড়কের জগন্নাথপুরের ১৩ কিলোমিটার অংশ সংস্কারের জন্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়।
এ কাজটি পান সুনামগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূরা এন্টারপ্রাইজ। ওই প্রতিষ্ঠান কিছু কাজ করে বন্ধ করে দেয়। এরপর স্থানীয় এলজিইডির তত্ত্বাবধান নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নামমাত্র কাজ করে অর্থ লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ ওঠে কাজের তিন মাসের মাথায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। দীর্ঘকাল থেকে এ সড়কের কাজের নামে সরকারি অর্থ লুট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে আসছে। চলতি বছর সড়কের বেহাল দশা দেখা দিলে মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর গত মে মাসে সড়কে অস্থায়ী মেরামতের জন্য ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। এ কাজ পায় সুনামগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রেনু এন্টারপ্রাইজ। ঈদুল ফিতরের আগের দিন (৪ঠা জুন) সড়কের হামজা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে যৎসামান্য মেরামত করা হয়। ৩০শে জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও গতকাল পর্যন্ত সড়কের কোথাও অস্থায়ী মেরামতের কাজ শেষ হয়নি।
জগন্নাথপুর পৌর এলাকার ছিক্কা গ্রামের বাসিন্দা সমাজকর্মী তোফাজ্জল হোসেন সুমন বলেন, ঈদের আগের দিন আমাদের হামজা কমিউনিটি এলাকায় সামান্য বালি আর ইটের সুরকি দিয়ে কাজ করা হলেও সড়কের অন্য কোথাও কাজ হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম ১৩ লাখ টাকার অস্থায়ী মেরামত হবে কিন্তু ৩০শে জুন চলে গেলেও কাজের কোনো খবর নেই।
কেশবপুর এলাকার বাসিন্দা ক্রীড়া সংগঠক আবু হেনা বলেন, অস্থায়ী মেরামতের কাজের অর্থ আত্মসাতের প্রচেষ্টা চলছে। এ সড়কে জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সংস্কার কাজের জন্য সরকার অর্থ দিলেও বারবার ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টরা লুট করছেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, জগন্নাথপুর বিশ্বনাথ রশিদপুর সড়কটি দুই উপজেলার খুব গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। অথচ বছরের পর বছর ধরে সড়কের নাজুক দশা বিদ্যমান। এ অবস্থায় সড়কটি এলজিইডি থেকে সড়ক ও জনপথে হস্তান্তর করতে আমরা পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে দাবি জানানোর পর দেখলাম এলজিইডি অস্থায়ী মেরামতের জন্য ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ ও স্থায়ী সংস্কারের জন্য জগন্নাথপুর অংশে ২১ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রস্তাব গ্রহণ করে। তিনি বলেন, সরকার প্রতিটি সড়কে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিচ্ছে কিন্তু ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টদের কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম সারোয়ার বলেন, ঠিকাদার অস্থায়ী মেরামতের ১৩ লাখ টাকার কাজ করলেও কাজ শেষ হয়নি। এ মাসে আমরা কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে তাগদা দিব।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে আমি এ উপজেলায় ছিলাম না। আমি যোগদানের পর ২০১৮ সালে কিছু সংস্কার কাজ হয়। এবার জগন্নাথপুর ও বিশ্বনাথ দুই উপজেলায় ৩৪ কোটি টাকার প্রকল্প আমরা অনুমোদনের জন্য পাঠাব।
ঠিকাদার রেনু মিয়া বলেন, গত ঈদের আগে আমি কিছু কাজ করেছিলাম কিন্তু কোনো বিল পাইনি। তাই কাজ করতে পারিনি, এ মাসে কাজ শেষ করবো।