ঈদের ছুটিতে আসবেন লক্ষাধিক পর্যটক, বরণ করতে প্রস্তুত সিলেট
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জুন ২০১৯, ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
পর্যটন নগরী হিসেবে খ্যাত পূণ্যভূমি সিলেটে প্রতি ঈদেই লোকে লোকারণ্য থাকে। ছুটি কাটানোর জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের পদভারে মুখরিত থাকে সিলেটের পর্যটন স্পটগুলো। এবারের ঈদে লম্বা ছুটি হওয়ায় পর্যটক আগের তুলনায় বেশি হওয়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যেই নগরীর বেশিরভাগ হোটেল বুকিং প্রায় শেষ হয়েছে। ঈদের লম্বা ছুটিতে এবার দেড় লাখেরও বেশি পর্যটক আসবে বলে আশা প্রকাশ করছেন হোটেল-মোটেল মলিকেরা। তাই পর্যটক বরণে প্রস্তুত হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা। আর পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্ক পুলিশ।
চা-বাগান, হাওর-নদী, পাথর আর পাহাড়ের গভীর মিতালী সিলেট অঞ্চলে। দেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত লাগোয়া পর্যটন কন্যা জাফলং আর স্বচ্ছ জলের নদী লালাখালকে ঘিরে পর্যটকদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি থাকে। জল পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্যের সঙ্গে দেখা মেলে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের সারি সারি ঝর্ণা ধারা। বিছনাকান্দি আর পাংথুমাইর সঙ্গে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক জলার বন রাতারগুলের আকর্ষণও নজর কাড়া।
আরো আছে ওলিকুল শিরোমনি হজরত শাহজালাল (র.) ও হজরত শাহপরাণের মাজার। আর তাই বছরজুড়ে পর্যটকের ঢল নামে সিলেটে। ঈদ মৌসুমে তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
সিলেট নগরীর হোটেল গোল্ডেন সিটির জেনারেল ম্যানেজার মিষ্টু দত্ত জানান, ইতোমধেই আমাদের হোটেলে সব আসন বুক হয়েছে। ঈদের পরদিন থেকেই পর্যটকদের আসা শুরু হবে।
আর ঈদ পরবর্তী ৬ থেকে ৭ দিনই থাকবে পর্যটক ঢল। তাই ব্যস্ত সময় পার করতে হবে ঈদের পরের কয়েকদিন।
এবার ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় সিলেট হয়ে উঠবে উৎসবের নগরী- এমনটাই আশা করছে সিলেটের প্রশাসন। সে জন্য পর্যটক বরণে নানা প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম জানান, পর্যটকদের চলাফেরা ও তারা যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হন তার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যেই ট্যুরিস্ট পুলিশকে আমরা জানিয়েছি, বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে। যেহেতু জাফলং, বিছনাকান্দিসহ কয়েকটি স্পটে কিছু দুর্ঘটনা আগে ঘটেছে, সেসব স্পটে বিপজ্জনক সংকেত হিসেবে লাল পতাকা স্থাপন, জনসচেতনতায় মাইকিংসহ সার্বক্ষণিক পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে।
এ ছাড়া স্থানীয় সংগঠনগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে পর্যটক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোম্পানিগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটের ইউএনওকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সিলেটে ঈদের সময়ে বিশেষ করে প্রথম দুই তিনদিন বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকে। এতে পর্যটকদের কিছুটা ভোগান্তি পেহাতে হয়। এবার আমরা সিলেটের ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। আশা করি, এ সমস্যা এবার হবে না।
এদিকে প্রতি বছরই জাফলং ও বিছানাকান্দিতে পানিতে ডুবে পর্যটক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তাই এবারের ঈদে দুর্ঘটনা এড়িয়ে পর্যটকদের ভ্রমণ নিরাপদ করতে পুলিশের পক্ষ থেকেও গ্রহণ করা হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান খান জানান, এবার পর্যটক সমাগম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই প্রতিটি পর্যটন এলাকায় পুলিশ সদস্যের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
ঈদের দিন থেকেই অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত দায়িত্বরতদের সঙ্গে যোগ দেবেন। ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে পর্যটন স্পটগুলোর নিরাপত্তায় র্যাব ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম কাজ করবে।
এ ছাড়া স্থানীয়দের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করা হয়েছে যাতে পর্যটকদের হয়রানি করা না হয়। তিনি বলেন, দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকাগুলোতে ফায়ার সার্ভিসের বিশেষ দলের উপস্থিতি নিশ্চিতে ইতোমধ্যে তাদের সঙ্গে আলাপ করা হয়েছে।
এ ছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে, যাতে সাঁতার না জানা পর্যটকরা পানিতে না নামেন। প্রতিটি পর্যটন এলাকা সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় বিজিবির সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করবেন পুলিশ সদস্যরা।
এদিকে পর্যটকদের আসা যাওয়ায় যাতে অসুবিধা না হয় সে জন্য সড়ক বিভাগ ও এলজিইডির পক্ষ থেকে পর্যটন এলাকাগুলোতে যাতায়াতের রাস্তা সংস্কার করা হচ্ছে।
ঢাকা সিলেট মহাসড়কসহ বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ সড়কে খানাখন্দ মেরামত করা হয়েছে। বাকিগুলোও দুই-একদিনের মধ্যে শেষ হবে বলে জানা গেছে।
সব মিলিয়ে পর্যটক বরণে প্রস্তুত সিলেট। সবকিছু ঠিক থাকলে সিলেটে পর্যটন সমাগম নির্বিঘ্ন ও আনন্দময় হওয়ার প্রত্যাশা সবার।