তদবির নাকি সমঝোতা : সিলেটে প্রকাশ্যে মার খেয়েও মামলা দেয়নি পুলিশ!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জুন ২০১৯, ৩:৫৬ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারে প্রকাশ্যে পুলিশের ওপর ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় যথাযথ মামলা না হওয়ায় পুলিশ সদস্যদের ক্ষোভ বাড়ছে। এ নিয়ে নগরজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। শুক্রবার বিকালে যানজটে আটকেপড়া দুই পুলিশ সদস্যকে মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ সময় দুইজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয় লোকজন।
এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না দিয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ আইনে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আগামী ৯ জুন শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) সুদীপ রায়ের গাড়ি নিয়ে চালক জিন্দাবাজারে আটকা পড়েন। এ সময় পেছন থেকে মোটরসাইকেল আরোহী কয়েকজন যুবক পুলিশের গাড়ির চালক মানব দাসকে সাইড না দেয়ার কারণ জানতে চায়।
তখন চালক মানব বলেন, ‘সামনে জ্যাম কীভাবে সাইড দেব?’ এতে উত্তেজিত হয়ে যুবকরা মানবকে মারধর করে। এ সময় পুলিশ সদস্য মো. শামীমুল ইসলাম গাড়ি থেকে নামলে যুবকরা বলে, ‘তোরা পুলিশ, তে মাইর খা।’ এক কথা বলেই তারা দু’জনকেই মারধর করে। তবে স্থানীয় লোকজন দুজনকেই আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এছাড়া যুবকদের ব্যবহৃত আর-ওয়ান ৫ ও ইয়ামা এফজেড এসবি-২ মডেলের মোটরসাইকেল দুটি জব্দ করে পুলিশ।
আটক দুজন হল- বিশ্বনাথ উপজেলার মুছিরগাঁও গ্রামের আলমাছ আলীর ছেলে মো. ইমন ও কানাইঘাটের দুর্লভপুর গ্রামের (বর্তমানে ৯৭ সওদাগর টিলা) মুস্তাকিম আলীর ছেলে মো. রাজ মিয়া। শনিবার তাদের আদালতে পাঠানো হয়। তবে রহস্যজনক কারণে হামলাকারীদের জব্ধ মোটরসাইকেল দুটি তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনার সময় গাড়িতে এডিসি (ডিবি) সুদীপ রায় ছিলেন না।
পুলিশ সদস্যদের অভিযোগ, হামলাকারীরা ছাত্রলীগ কর্মী হওয়ায় ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা ঝামেলা এড়াতে যথাযথ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে দেননি। এ নিয়ে পুলিশ সদস্যদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ক্ষোভ ঝাড়ছেন।
ফেসবুকে পুলিশের এক নায়েকের কমেন্ট- ‘হইছে মারচি ত মারচি। ৫০ হাজার টাকা নিয়া ৫৪ ধারায় চালান দিচে, এই হল বিচার!
এটা আমার কথা নয়- কোর্ট লকাপ থেকে চিল্লাইয়া বলতেছিল ইমন নামের আসামি!’
তিনি আরও লেখেন- ‘পুলিশের সিনিয়র অফিসাররা টাকা নিয়ে যতদিন না পুলিশ পেটানো আসামিদের ৫৪ ধারায় চালান দেয়া বন্ধ না করবে, ততদিন আমরা মাইর খাব! বিয়ানীবাজারের ওসিকে যে ব্যক্তি গুলি করে মারল সেই ব্যক্তিকে আবার কিছুদিন পরে দেখি ডিআইজি মহোদয়ের গাড়িতে! নিুপদস্থরা মাইর খাইলে উচ্চপদস্থদের পকেট ভরে। আমার ১৩ বছরের সার্ভিস থেকে নিজ চোখে দেখা বিষয়াদি তুলে ধরলাম! রাজ ও ইমনের ঘটনাটা তাদেরই মুখ থেকে শোনে নিজেকে বোকার মতো মনে হল! কী দাম্ভিকতা নিয়ে বলতেছে টাকা দিলে সব হয়!’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসএমপির থানার এক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১৮৬, ৩৩৩ ও ৩৫৩ ধারায় মামলা হওয়া উচিত। মেট্রোপলিটন আইনে কেন মামলা হল- তা আমার বুঝে আসছে না। এজন্যই বারবার পুলিশ সদস্যরা হামলা-মারধরে শিকার হয়।’
মামলা না করার কারণ জানতে চাইলে পুলিশ সদস্য শামীমুল ইসলাম বলেন, ‘এ ব্যাপারে ওসি ও এডিসি স্যার ভালো বলতে পারবেন। আমার কিছুই বলার নেই।’
এসএমপির কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মিঞা বলেন, ‘এটা ভুল বোঝাবুঝি। কোনো ধরনের সমঝোতা হয়নি।’
এসএমপির এডিসি (ডিবি) সুদীপ রায় বলেন, যারা হামলার শিকার হয়েছেন তারা মামলা করতে আগ্রহী নয়। এজন্য হয়তো কোতোয়ালি থানার ওসি মেট্রোপলিটন আইনে মামলা দিয়েছেন। প্রকাশ্যে হামলাকারীদের কেনো সন্দেহভাজন হিসেবে আটক দেখিয়ে মামলা করা হলো তা জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে প্রতিবেদককে দেখা করার কথা বলেন।
এসএমপির উপ কমিশনার (উত্তর) আজাবাহার আলী শেখ বলেন, ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপাতত তাদের আদালতে তোলা হয়েছে। হামলার শিকার পুলিশ সদস্যরা মামলা করলে আমরা তা গ্রহণ করব।
পুলিশ সূত্র জানায়, হামলাকারী দুই যুবক পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্রলীগের আজাদ গ্রুপের কর্মী বলে স্বীকারোক্তি করলে বদলে যায় মামলার ধরন। একাধিক তদবিরে প্রকৃত ঘটনা চেপে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মেট্রোপলিটন পুলিশ আইনের ৮৯ ধারায় মধ্যরাতে সন্দেহজনক গতিবিধির ধারাযুক্ত করা হয়।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এসএমপির উপ কমিশনার (উত্তর) আজাবাহার আলী শেখ। তিনি বলেন, হামলাকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় আমার জানা নেই। কোনো ধরনের তদবির আসেনি।