সিলেটে রাজনৈতিক শেল্টারে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং, কিলিং মিশনেও তারা …
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মে ২০১৯, ১:৩০ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
সিলেটে ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে স্কুল, কলেজ পড়ুয়া কিশোররা। নগরের পাড়া-মহল্লায় বেড়েছে উঠতি মাস্তানদের উৎপাত। তুচ্ছ ঘটনায় দলেবলে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হাজির হয় উঠতি বয়সী তরুণরা। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সক্রিয় উঠতি বয়সী এসব কিশোর অপরাধীরা। তাদের হাতেই উঠে আসছে ঝকঝকে চকচকে অস্ত্রশস্ত্র। সমাজের উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্তের সন্তানরা পা বাড়াচ্ছে এ অন্ধকার জগতে।
নগরের পাড়া-মহল্লায় কিশোরদের মারামারি ঘটনা এখন নিত্যদিনের। আধিপত্য বিস্তার, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বের মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জড়িয়ে পড়ছে নৃশংস খুনাখুনিতে। গত তিন বছরে যেকটি খুন হয়েছে এদের বেশির ভাগই কিশোর। আর এই খুনের সাথে জড়িতদের বেশির ভাগই স্কুল, কলেজ পড়ুয়া কিশোররা।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নগরীতে যেসব নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটছে এর সবকটির সঙ্গেই জড়িত রয়েছে উঠতি মাস্তানরা। বিশেষ করে সরাসরি যারা কিলিং মিশনেও থাকছে উঠতি সন্ত্রাসী। এদের যন্ত্রণায় সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। উঠতি মাস্তানদের মধ্যে অনেকেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অপরিচিত মুখ। ফলে তাদের গ্রেফতারে সফল হচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নগরীতে ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানিয়েছেন, ছিনতাইকারীদের তাদের বেশির ভাগের বয়সই ১৫-১৮ বছর। গত তিনমাসে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সিলেট মহাগনর পুলিশ অর্ধশত ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারও করেছে। ফলে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে নগরবাসীর মাঝে।
জানা যায়, নগরের পাড়া-মহল্লায় দিনে দিনে বেড়েছে উঠতি মাস্তানদের উৎপাত। এর একটি বড় অংশজুড়ে আছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী এবং তরুণ বখাটেরা। তুচ্ছ ঘটনায় দলেবলে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হাজির হয় উঠতি বয়সী তরুণরা। গত ৫ বছরে সিলেট নগরীতে হত্যাকান্ড ছাড়াও যেসব আলোচিত ঘটনা হয়েছে এর বেশিরভাগই ঘটিয়েছে উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীরা। তারা মহল্লা কেন্দ্রিক তৈরি হয়েছে ছোট বড় অপরাধী গ্রুপ। এসব উঠতি বয়সীদের শেল্টার দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতারা। এদের যন্ত্রণায় সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ।
চলতি রামাদ্বান মাসে নগরীর কুয়ারপারে গত সোমবার দুই কিশোরের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। দু’জনই ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সাথে জড়িত। এঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটার দিকে মহানগর আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক বিধান কুমার সাহা’র অনুসারি শাকিল মোর্শেদ গ্রুপ ও জেলা আওয়ামীলীগের সহসাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিনের অনুসারী ইমন ইবনে সামরাজের গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে গুলাগুলি ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
সোমবার শাহজালাল উপশহরে ছাত্রলীগের এইচআর গ্রুপ ও তাঁতিলীগ নেতা মুমিনের কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। বুধবার তারাবির নামাজ চলাকালে উপশহরে ফের যুবলীগ নেতা শামীম ইকবাল গ্রুপের সাথে এইচ আর সুমন গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এসময় দুই পক্ষ দেশী অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দিতে দেখা যায়। এসময় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। এর আগে ২৪ এপ্রিল তাহমিদ আহমদ চৌধুরী নামের এক কলেজ শিক্ষার্থীকে মোবাইল ফোনে কল করে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে জখম করে। এঘটনা ঘটে টিলাগড় এমসি কলেজ সংলগ্ন এলাকায়।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তার সাথে আলাপকালে বলেন, টিনএজ বা কম বয়সের অপরাধীর সংখ্যা বাড়ছে এটা ঠিক। তারা যেমন পাড়া-মহল্লায় অপরিচিত, তেমন পুলিশের কাছেও। এতে অপরাধ করে সহজেই গা-ঢাকা দিচ্ছে তারা। ঘটনার পরই তদন্তে তাদের খোঁজ মেলে।
এ ব্যাপারে সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি অপরাধ বিষয়ক অনুসন্ধানী সাংবাদিক আবদুল কাদের তাপাদার বলেন, কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সবার আগে পরিবার থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ বাবা-মায়ের সঠিক নির্দেশনা পেলে ছোট থেকে একটা শিশু ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। আর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সমস্যা থাকলে এর প্রভাব পড়ে শিশুদের মনের ওপর।
কিশোরদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে সমাজব্যবস্থা ভালো হওয়া জরুরি। স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। কিশোররা যাতে অপরাধে না জড়ায় এ জন্য কাউন্সেলিং করা যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, অপরাধে জড়ানো কিশোরদের গ্রেফতারের পর সঠিকভাবে শাস্তি হচ্ছে না। শাস্তি বেশি হলে তাদের মনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া ও কমিউনিটি) জেদান আল মুছা বলেন, এসএমপি পুলিশ অপরাধ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। কোন অবস্থাতেই অপরাধীদের ছাড় দেয়া হবে না জানিয়ে তিনি আরো বলেন, কিশোররা যাতে অপরাধে না জড়ায় এ জন্য তাদেরকে পারিবারি কাউন্সেলিং সবচেয়ে বড় ব্যাপারে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ব্যাপারে সর্বক্ষণিক খোঁজ খবর দিতে হবে। তাদের সন্তান কি করছে, কাদের সাথে চলাফেরা করছে।