খালেদা জিয়া গৃহবধূ থেকে দেশ ও মানুষের মুক্তির জন্য বেছে নেন সংগ্রামী জীবন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ১১:০৬ অপরাহ্ণ
আলম হোসেন:
১৯৮১ সালের ৩০ মে এক ব্যর্থ সামরিক অভুত্থ্যানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হন। এরপর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের অনুরোধে-আহ্বানে তিনি ১৯৮২ সালে ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সেনাপ্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল এরশাদ বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। বেগম জিয়া এর বিরোধিতা করেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন।
১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা করেন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপাসরন হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে পার্টির চেয়ারপাসরন নির্বাচনে তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন। এরপর তার নেতৃত্বেই মূলতঃ বিএনপির পূর্ণ বিকাশ হয়। স্বামী, সন্তান আর পরিবার নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন এই গৃহবধূ। রাজনীতির কথা কল্পনাও করেননি। কিন্তু বাস্তবতা হল ১৯৮১ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর নেতাকর্মীদের প্রবল চাপে ও আহ্বানে ঘর ছেড়ে রাজপথকেই ঠিকানা বানাতে হয় তাঁকে। গৃহবধূ থেকে দেশ ও মানুষের মুক্তির জন্য বেছে নেন সংগ্রামী জীবন। এখন তাঁর শরীরে বয়সের ছাপ পড়েছে। তবুও এই মুহূর্তে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্থিতিশীলতার তিনিই একমাত্র প্রতীক। রাজনীতিতে আসার আগ পর্যন্ত বেগম জিয়া একজন সাধারণ গৃহবধু ছিলেন। মূলতঃ দুই পুত্রকে লালন পালন ও ঘরের কাজ করেই সময় কাটাতেন। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি থাকাকালীনও রাজনীতিতে বেগম জিয়ার উপস্থিতি ছিল না। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সাধারণ গৃহবধু থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠার পথ কুসুমাস্তীর্ণ বা মসৃন ছিলনা। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত এবং চড়াই -উৎরাই পার হয়ে ৩৭ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তাকে আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে ১৯৯১ থেকে ডিসেম্বর ২০০৮ সালে সুদীর্ঘ ১৮ বছরে মোট পাঁচটি সাধারণ নির্বাচনে যে সর্বোচ্চ ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সম্ভব ছিল তার সব কয়টিতেই খালেদা জিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং সব ক’টিতেই বিজয়ী হন।
বাংলাদেশের অন্য কোনো রাজনীতিক এই সাফল্য পাননি। মোট ২৩টি আসনে তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা পঁচিশ লাখের বেশি। সম্ভবত এটি সংসদীয় নির্বাচনে একটি বিরল রেকর্ড। সন্দেহ নেই খালেদা জিয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেত্রী। গৃহবধূ থেকে রণজয়ী রাজনৈতিক মহীয়সী রমনী “মা” খালেদা জিয়ার হাত ধরে বাংলাদেশে নারী নেতৃত্বের শুরু হয়— জিয়াউর রহমানের অনুপস্থিতিতে যখন বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে শুরু হয় চরম দ্বন্দ্ব, বিএনপিতে কে হাল ধরবে তা নিয়ে যখন অনিশ্চয়তা শুরু হয় ঠিক তখন দায়িত্ব নেন বেগম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশে নারী নেতৃত্বের শুরু হয় খালেদা জিয়ার হাত ধরে৷’১৯৭১ সালে মুক্তি যোদ্ধের সময় ছোট শিশু কোলে নিয়ে অসহায় মা পালিয়েছিলেন বাড়ি ছেড়ে কারন পাকহানাদার ধরলে আর ছাড়বে না তাঁকে। স্বামী তাঁহার মহান মুক্তি যোদ্ধের ঘোষণা দিয়ে অস্র হাতে মুক্তি যোদ্ধে রণাঙ্গনে এর চেয়ে বড় অপরাধ ছিলোনা পাক হানাদারদের কাছে ।
একাত্তরের বীরাঙ্গনা সেই “মা” জালিমের কারাগারে বন্দি আছেন ।দেশের মাঠি রক্তে লাল হলো শহীদ জিয়ার রক্ত মেখে, সাধারণ গৃহবধূ হয়ে দেশের হাল ধরেছিলেন স্বৈরাচারের বিষদাঁত ভেঙে দেশ ও জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে। আপোষ করেননি কোন অপশক্তির কাছে। বেগম খালেদা জিয়া এখন একটি নামই শুধু নয়-একটি প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মহীয়সী এই মহিলা নিজেকে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। স্বৈরাচার একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের পক্ষে তিনি বছরের পর বছর লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন-জনগণের কাতারে গিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তিনি জনগণকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। রাজপথে সংগ্রাম করেছেন। কারাগারে গেছেন। গৃহে অন্তরীণ থেকেছেন।
লেখক- বেলজিয়াম প্রবাসী