মশা মারতে ব্যর্থ সিলেট সিটি কর্পোরেশন, উপদ্রব বাড়ছেই
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মার্চ ২০১৯, ৮:২৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
মশার উপদ্রবে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন নগরবাসী। নগরীর সর্বত্রই এখন মশা’র বিস্তার। মশা নিধনে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই নগর কর্তৃপক্ষের। জনদুর্ভোগ লাঘবে খুব একটা ছিটানো হয় না মশা নিধনের ওষুধও। খোদ নগরভবনেও উৎপাত আছে এই মশার। তারপরও মশা নিধনের উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। এ নিয়ে নগরবাসীর মাঝে আছে ক্ষোভ, আছে অভিযোগও। মশার অত্যাচার থেকে বাঁচতে নগরকর্তার সুদৃষ্টি চান নগরবাসী। নগর কর্তৃপক্ষের তেমন তদারকিও এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি এই মশার কাছেই হার মানতে হয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষকে। ওইদিন মশার বেশি দাপট থাকায় শাহজালাল বিমানবন্দরে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং ৭৩৭ উড্ডয়নে দুই ঘণ্টা দেরি হয়। গবেষকরা বলছেন, সারা পৃথিবীতে অন্তত সাড়ে তিন হাজার প্রজাতির মশা রয়েছে। বাংলাদেশে পাওয়া গেছে ১২৩ প্রজাতির মশার অস্তিত্বের সন্ধান। মশা দিন দিন সংখ্যায় বাড়ছে, খুঁজছে খাবার। বাসার মশা ও তার বিচরণের ওপর দীর্ঘ গবেষণায় জানা যায়, একটি প্রজাতি ছাড়া বাকি সবগুলোই রক্তচোষক।
তবে স্ত্রী মশাই সবচাইতে বেশি রক্তখেকো। তাদের মতে, মশার প্রজননে আদর্শ তাপমাত্রা ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ মৌসুমের তাপমাত্রাও তেমন। শীতের অনাবৃষ্টি, নগরীর ঘিঞ্জি পরিবেশ, অপরিচ্ছন্ন ড্রেন, খাল-জলাশয়ের বদ্ধ পানি, ডোবা-নালার যত্রতত্র কচুরিপানা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব- সব মিলিয়ে মশার প্রজননের উর্বর ও অনুকূল পরিবেশ এখন সিলেটজুড়ে। তবে, দুর্ভোগের শিকার নগরবাসী
বলছেন, মশা মারতে কিংবা এর বংশ বৃদ্ধি রোধে সিলেট সিটি কর্পোরেশন পুরোপুরিই ব্যর্থ। একটা সময় ছিলো, যখন উঁচু ভবনগুলোতে মশার উপদ্রব ছিলো নগন্য। অবশ্য এখন আর সে বিষয়টি নেই। নীচ থেকে শুরু করে উপর তলার কাউকেই খাতির করছেনা বিরক্তিকর মশা। মোট কথা, শহরের অলিগলি থেকে বাসা বাড়ি, অফিস-আদালত, সব জায়গাতেই এখন মশার সরব উপস্থিতি।
সর্বত্র মশার এমন বিস্তার বিষয়ে কথা হলে বালাগঞ্জ সরকারি ডিগ্রী কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক অমিতা রানী দাস বলেন, শুরু থেকেই মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করার ফল ভোগ করছেন এখন সকলেই। ব্যর্থতার ফলেই সর্বত্রই এখন মশার বিস্তার ঘটছে। সুতরাং মশাময় রাজ্যে মশা স্বভাবতই দাপট দেখাবে। যার ফলে অতিষ্ট হবে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। তিনি বলেন, শুরু থেকে মশার বংশ বিস্তারের সম্ভাব্য স্থানগুলোতে জীবানুনাশক পাউডার ব্যবহার করতে হবে। সময়মতো তা করতে না পারলে মশার দ্রুত বংশ বিস্তার অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাবে। তিনি বলেন, মশা মারার ওষুধ ছিটাতে হয় সকাল-সন্ধ্যা দু’বেলা। সকাল ৬টা থেকে ১০টার মধ্যে লার্ভিসাইডিং ঔষুধ ছিটাতে হয়। সন্ধ্যায় ছিটাতে হয় এডাল্টিসাইডিং ঔষুধ।
মশা নিধনে প্রতি বছর নির্ধারিত একটি বাজেট থাকে সিটি কর্পোরেশনের। চলতি বছর এই খাতে সিসিকের বাজেটে বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। মশা নিধনে নির্ধারিত বরাদ্ধ থাকলেও এখন পর্যন্ত মশা নিধনে উদ্যোগ নেয়নি নগর কর্তৃপক্ষ।
তবে, সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানালেন, সিসিকের উদ্যোগে আগামী সপ্তাহ থেকেই শুরু হবে মশা নিধন কার্যক্রম। সর্বত্রই মশার দাপুটে অবস্থান এবং হঠাৎ বংশ বিস্তারের কারণ জানতে চাইলে মেয়র বলেন, নগরীর সকল নালা, ডোবা উদ্ধারে কাজ করছে নগর ভবন। যেসব স্থানে বেশি করে মশার বাস, সেইসব স্থান সংস্কারের কবলে থাকায় স্থান ত্যাগ করে মশা এখন সর্বত্র চষে বেড়াচ্ছে। তবে, সিসিকের অভিযানে মশার ডিম সহ জীবানুবাহি সকল শ্রেণীর মশারাই নিধন হবে।
জানাগেছে, মশার ঔষুধের জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠান ঔষধ সরবরাহ করে নাই। সরবরাহ পরবর্তী কাউন্সিলরদের মাধ্যমে নগরীর নিজ নিজ ওয়ার্ডে মশার ঔষধ বিতরণ করা হবে।