এমসি কলেজ ছাত্রাবাস ভাঙচুরকারীদের সাথে জড়িত কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে ছাত্রলীগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুলাই ২০১৭, ৫:৩৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
২০১২ সালের ৮ জুলাই রাতে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ছাত্রলীগ।
তার ঠিক ৫ বছর ৫ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) আবারো এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের সবকয়টি ব্লকের দরজা, জানালা ও রুম ভাঙচুর করেছে ছাত্রলীগের কর্মীরা।
ছাত্রলীগের কোন গ্রুপ হামলার দায় সরাসরি স্বীকার না করলেও ছাত্রলীগ মহানগর শাখা জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় নির্দেশ অনুযায়ী, হামলার সাথে জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হোস্টেলের বয় আব্দুল কুদ্দুস জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে ২৫-৩০ জনের একটি দল ঢুকে ছাত্রাবাসে ভাংচুর শুরু করে।
ওই হোস্টেলের আবাসিক ছাত্র মোহাম্মদ তোফায়েল জানান, হামলাকারীরা ছাত্রাবাসের সবকয়টি ব্লকেই ভাংচুর চালিয়েছে। বিশেষ করে ৪ ও ৫ নম্বর ব্লক এবং শ্রীকান্ত ব্লকের বেশি ক্ষতি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের জেলা ও মহানগর পর্যায়ের দুই নেতা জানান, টিটু চৌধুরী ও বেলাল আবেদীন ডায়মন্ড এর নেতৃত্বে তাদের সহযোগীরা ছাত্রাবাসে হামলা ও ভাংচুর চালায়।
তারা দুজনেই জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রিড়া বিষয়ক সম্পাদক রঞ্জিত সরকারের অনুসারী।
বুধবার রাতে ছাত্র শিবির কর্মীদের ছাত্রলীগে অবস্থান দেয়ার বিষয় নিয়ে এমসি কলেজের পাশে টিলাগড় পয়েন্টে টিটু চৌধুরীর সাথে রঞ্জিত সরকার সমর্থিত আরেকটি গ্রুপের কথা কাটাকাটি হয়। পরে তা ছাত্রাবাসে গিয়ে সংঘর্ষে গড়ালে হোসেন আহমেদ গ্রুপের সমর্থিত গ্রুপের কর্মীরা টিটু চৌধুরী ও তার গ্রুপের অনুসারীদের ছাত্রাবাস থেকে বের করে দেয়।
হোসেন আহমেদ জানান, বুধবার রাতের ঘটনার বদলা নিতেই বৃহস্পতিবার সকালে ছাত্রাবাসে হামলা চালায় টিটু চৌধুরী ও তার সমর্থকেরা।
এ ব্যাপারে টিটু চৌধুরীর বক্তব্যের জন্য তার মোবাইল ফোন নাম্বারে কল করা হলে তিনি কল রিসিভ করেন নি।
সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষার জানান, ঘটনার পর কেন্দ্রের নির্দেশে অভিযুক্ত সব নেতাকর্মীকে ডেকে তাদেরকে বিস্তারিত ঘটনার কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
তিনি জানান, হামলার ঘটনার সাথে জড়িত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কেউই কোন কমিটিতে পদধারী না, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সাধারণ কর্মী। ঘটনা বিস্তারিত জেনে অভিযুক্ত সকল ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ছাত্রাবাসে ভাঙচুরের ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জরুরী একটি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সময় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
২০১২ সালের পর আবারো কলেজ ছাত্রাবাসের হামলার বিষয়টি অনুসন্ধান করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র চন্দ।
তিনি জানান, আগের হামলার ঘটনার ৫ বছর পরেও দোষীদের কোনরকম শাস্তির আওতায় আনা হয়নি বলেও আবারও এ ধরণের ঘটনা ঘটলো।
ভবিষ্যতে ছাত্রাবাসের নিরাপত্তায় সকল বৈধ আবাসিক শিক্ষার্থীকে পাস প্রদান করা হবে বলেও জানান অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোন মামলা দায়ের হয়নি বলে জানিয়েছেন শাহপরাণ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ারুল আলম।
হামলার সাথে কারা জড়িত তা অনুসন্ধান করছে পুলিশ আর যে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ছাত্রাবাস, কলেজ ও টিলাগড় পয়েন্ট এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ৮ জুলাই এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ মামলায় এখন পর্যন্ত তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়নি।
গত ৩১ মে, সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম উম্মে শারাবান তাহুরা বিচার বিভাগীয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন।
এর আগে পুলিশের ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন দুইবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে তা যথাযথ না হওয়ায় গ্রহণ করেননি আদালত।