বালাগঞ্জে ধীরে ধীরে কমছে পানি, দূর্ভোগের পাশাপাশি দেখা দিচ্ছে রোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জুলাই ২০১৭, ৬:৩৯ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘ঘরে ঘরে বেমারি (অসুস্থ) মানুষ আছে। পানি যত কমতাছে, বেমার (অসুখ) তত বাড়তাছে। বন্যাকবলিত মানুষের জন্য মেডিকেল টিম গঠনের খবর শোনা গেলেও, তারার কোনো দেখা মিলে না।’
কথাগুলো বলছিলেন সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য রেয়াদ আহমদ। তিনি বলেন, দেড় মাস আগে অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে ও বাঁধ ভেঙে বালাগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর ওয়ার্ডে ২০০ থেকে ৩০০ লোক জ্বরে ভুগছেন এবং আরও অন্তত একই পরিমাণ লোক চর্মরোগ ও পেটের পীড়ায় ভুগছেন।
আদিত্যপুর গ্রামের আনু মিয়া বলেন, বাড়ি, উঠান, রাস্তা ও গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় তাঁকে প্রতিদিন বন্যার পানি ভেঙে মূল সড়কসহ উপজেলা সদরে যেতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকায় এরই মধ্যে পানি পঁচে গেছে। দূষিত ওই পানিতে ময়লা-আবর্জনা ভেসে বেড়াচ্ছে। এ অবস্থায় পানি মাড়িয়ে নিত্যদিন চলাচলের কারণে তাঁর পায়ে খোসপাচড়া দেখা দিয়েছে।
গতকাল শনিবার বালাগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার অন্তত শতাধিক মানুষের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এর মধ্যে জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, পেটের পীড়া ও চর্মরোগীর সংখ্যাই বেশি। অনেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, বন্যা শুরু হওয়ার কিছুদিন পর থেকে হাসপাতালে জ্বর, নিউমোনিয়া, পেটের পীড়া ও চর্মরোগে আক্রান্ত লোকেরা বেশি আসছেন। গত এক মাসে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের অন্তত ৯০ শতাংশই এ ধরনের রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবিদ ফণীভূষণ সরকার বলেন, গত জুন মাসে হাসপাতালে ২০১ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি জ্বর ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত ছিলেন। এ ছাড়া হাসপাতাল ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে ৫৩৫ জন চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন।
বহির্বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক সহকারী ডেন্টাল সার্জন শাম্মী আখতার ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসক সহকারী তনুশ্রী সাহা চৌধুরী বলেন, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ১২১ জন শিশু, ৩০৩ জন নারী ও ১৭৫ জন পুরুষ চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই জ্বর ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত ছিলেন।
বন্যাকবলিত গ্রামগুলোতে রোগ-ব্যাধির প্রকোপ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘এখনো সেভাবে রোগ-ব্যাধি ছড়ায়নি। কেবল বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত রোগ বৃদ্ধির শঙ্কা রয়ে যায়। তবে সে জন্য আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে, সব রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমরা তৎপর রয়েছি। কেউই চিকিৎসার বাইরে থাকবেন না।’ তিনি বলেন, গতকাল উপজেলার গালিমপুর আশ্রয়কেন্দ্রে ৮ জন জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে তাঁদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় মেডিকেল টিম নিয়মিত পরিদর্শন করছে বলেও তিনি দাবি করেন।
ত্রাণের অভাবে ক্ষুব্ধ মানুষ: উপজেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তি। গতকাল সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনের সময় কাশীপুর এলাকায় এ প্রতিবেদককে ঘিরে ধরেন বানভাসি একাধিক মানুষ। তাঁরা বলেন, পত্রিকায় যেন তাঁদের নামসহ পরিচিতি তুলে ধরে জানানো হয়। তাঁরা বানভাসি হওয়া সত্ত্বেও কোনো ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না।
বেলা ২টার দিকে সিলেট-বালাগঞ্জ সড়কের কাশীপুর অংশে সৌদিপ্রবাসী সুজন মিয়ার সৌজন্যে ৫ কেজি করে ২০০ বন্যার্ত পরিবারের মধ্যে চাল সহায়তা দেওয়া হচ্ছিল। সুজন মিয়ার চাচাতো ভাই চুনু মিয়া বলেন, সরকারি উদ্যোগে তাঁদের গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে বানভাসি মানুষদের সহায়তা না-করায় সামর্থ অনুযায়ী তাঁরা ভাইয়ের দেওয়া অনুদানে বানভাসিদের সহায়তা করছেন।
তবে ইউএনও প্রদীপ সিংহ ত্রাণের কোনো সংকট নেই বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, বানভাসি মানুষকে প্রচুর পরিমাণে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। প্রথম দফায় ৫ হাজার পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল এবং ১ হাজার পরিবারকে ১ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে।