সিলেটে সীমাহীন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ট ১০ লক্ষাধিক গ্রাহক
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুলাই ২০১৭, ১:২৯ অপরাহ্ণ
বিশেষ প্রতিনিধি:
সিলেট জুড়ে পল্লী বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। বিদ্যুতের এমন ভেল্কিবাজির কবলে সিলেটের ১০লক্ষাধিক গ্রাহক। প্রতিটি এলাকার মানুষ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। এসব এলাকার গ্রাহকেরা অভিযোগ করছেন, দিনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৪-১৫ ঘণ্টাই লোডশেডিং থাকে। বাকি কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলেও প্রতি ১০ মিনিটে তিনবার লোডশেডিং হয়। এভাবে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বিকল হয়ে পড়ছে গ্রাহকদের পানি তোলার মোটর, টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান, লাইটসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্য। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফ্রিজে থাকা রান্নাকরা খাবার ও খাদ্য। সর্বোপরি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকা ও দু-তিন মিনিট পরপর লোডশেডিং হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, বিশ্বনাথ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের প্রায় দশ লক্ষাধিক গ্রাহকের জীবনে দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে পল্লী বিদ্যুৎ। ভূক্তভোগী এসব গ্রাহক পল্লী বিদ্যুতের যন্ত্রণায় অতিষ্ট হয়ে ফুঁসে উঠেছেন। বিভিন্ন স্থানে রাস্তা অবরোধ, প্রতিবাদ সভা মিছিল মিটিং করছেন গ্রাহকরা। গ্রাহকরা অভিযোগ করে বলেছেন, পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের অবহেলা আর গাফিলাতির কারণে জনজীবনে এমন পরিস্থিতি নেমে এসেছে। গ্রাহকদের সেবার বদলে দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।
প্রচন্ড গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকায় সীমাহীন কষ্ট পোহাচ্ছেন মানুষ। অনেকেই গরম সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধ মানুষদের। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। দক্ষিণ সুরমা প্রতিনিধি জানান, উপজেলার জালালপুর, মোগলাবাজার, দাউদপুর, লালাবাজার, কুচাই, সিলাম, তেতলীসহ প্রায় সবগুলো ইউনিয়নের মানুষ পল্লী বিদ্যুতের যন্ত্রনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ উপজেলায় গড়ে ১৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না। লোডশেডিংয়ের নামে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎহীন থাকে এলাকা। রাতের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। বিশেষ করে জালালপুর, লালাবাজার, সিলাম ও মোগলাবাজার এলাকার মানুষ সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অতিষ্ট জনসাধারণ লোডশেডিংয়ের ভয়াবহতা থেকে পরিত্রানের পথ বের করতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যথায় আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন তারা। জালালপুরের বিশিষ্ট সমাজসেবী জিয়াউর রহমান সাজু বলেন, আমরা অতিষ্ট। কঠিন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিত্রান না পেলে এলাকার মানুষ আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন। বিদ্যুৎ না দিলে আমরা বিল দেবনা। লাইন কাটারও সুযোগ দেব না। আমরা বিদ্যুৎ চাই।
ওসমানীনগর এলাকার মানুষ আস্তে আস্তে বিদ্যুতের কথা ভুলেই যাচ্ছেন। কারণ এ উপজেলায় প্রতিদিন গড়ে মাত্র ২/৩ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে। ৪০ হাজার গ্রাহক মাঝে মধ্যে বিদ্যুতের দেখা পান। অনেকটা বিজলির মতো। ৭টি ফিডারের ৫টিই বন্ধ। বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ ভূ-দৌড় দেয়। উপজেলার ওসমানীনগর, উমরপুর, ওসমানপুর, সাদীপুর, গোয়ালাবাজার, তাজপুর ও দয়ামীর ইউনিয়নের প্রায় সবগুলো এলাকার মানুষ বিদ্যুতের যন্ত্রনায় অতিষ্ট। ওসমানীনগরের বিশিষ্ট সমাজসেবী মুক্তার আহমদ বকুল অভিযোগ করে বলেন, আমরা এলাকার মানুষ দলমত নির্বিশেষ সংগঠিত হচ্ছি। হয় ওসমানীনগরে পল্লীবিদ্যুত থাকবে নয়তো গুটিয়ে নিতে হবে।
গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি জানান, বিদ্যুৎ বিভ্রাটে উপজেলার মানুষ মারাত্মকভাবে অতিষ্ট গয়ে উঠেছেন। প্রতিদিন গড়ে ২০ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না। প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহক পড়েছেন ভোগান্তিতে। উপজেলার গহড়া, আলিরগ্রাম, পিজিরপুর, ছাতারগ্রাম, আহারকান্দি, মাটুরতল, হাদারপাড়, বঙ্গবীরসহ প্রায় সবগুলো এলাকাতে দিনের পর দিন বিদ্যুৎ থাকে না। একই অবস্থা সিলেটের প্রায় সবগুলো উপজেলায়। পল্লী বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রাহকরা।
সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মাহবুব আলম ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, গত কয়েকদিন থেকে বিবিয়ানায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় জেনারেশনগুলোও অফ ছিল। যে কারণে কুমারগাঁও গ্রীডে গ্যাসের সরবরাহ দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে এটি ২/১ দিনের মধ্যেই কাটিয়ে উঠবে বলে জানান পল্লী বিদ্যুতের এই উর্ধ্বতর কর্মকর্তা।