বড়লেখায় ফের জলাবদ্ধতা : ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুন ২০১৭, ১১:৩৩ অপরাহ্ণ
এস এইচ সৈকত, মৌলভীবাজার থেকে:
জেলার বড়লেখা পৌরসভা কর্তৃপক্ষের সীমাহীন অনিয়ম, অবহেলা আর চরম গাফিলতি ও বৈষম্যের কারণে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পানিতে টুইটুম্বুর হয় পড়ে পৌর এলাকা। আর আর্থিক শিকারসহ সীমাহীন দুর্ভোগে পতিত হন পৌর এলাকার জনগণ। পৌর কর্তৃপক্ষযে হারে নাগরিকদের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করা হয় সে হারে নাগরিকদের সুবিধা কিংবা জীবনমান উন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকা-ই রাখতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এ নিয়ে একাধিকবার পৌর এলাকার উত্তর চৌমুহনীসহ একাধিক এলাকা প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। আর পৌরসভার মেয়র জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বরাবরই প্রতিশ্রæতি দিয়ে পৌর বাসিন্দাদের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করেন বলে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীসহ বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা রয়েছে অত্যন্ত নাজুক অবস্থায়। কিন্তু এ বিষয়েও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি আজও।
সরেজমিনের গেলে দেখা যায়, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দুই সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার বড়লেখা পৌর এলাকা প্লাবিত হলো। এতে শহরের বাসাবাড়ি ও দোকানপাট জলে টুইটুম্বুর হয়ে পড়েছে। রাস্থাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি ও দোকানে পানি ঢুকে পড়েছে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতির কারণে অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
গত শনিবার (১৭ জুন) রাত ১২টা থেকে বড়লেখা উপজেলার সর্বত্র ভারী বর্ষণ হতে থাকে। ফলে রোববার (১৮ জুন) সকাল আটটার থেকে পাহাড়ি ঢলে পৌর এলাকা টুইটুম্বুর হয়ে পড়ে। পৌর শহরের হাজীগঞ্জ বাজারের ডাকবাংলো এলাকা থেকে দক্ষিণবাজার মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডের ৫০০-৬০০ মিটার এলাকা ছাড়া পুরো বাজার এলাকা প্লাবিত হয়। দোকানঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। পৌরসভার সব এলাকাই গড়ে পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও হাটুপানি থেকে কোমর পানি থাকতে দেখা গেছে।
পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় গাজিটেকা, নাজিরের চক, ষাটহাল, আইলাপুর, আদিত্যের মহাল, বাঁশতলা, গ্রামতলা, হাটবন্দ, বারইগ্রাম, নয়াগ্রাম, তেলিগুল, বালুরচর, ভোলাডহর, মুড়িরগুল, পানিধার, পাখিয়ালা, ইয়াকুবনগর, মুছেগুল এলাকা। এসব এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ চিত্র অবশ্য প্রতি বছর বর্ষা মওসুমের। এতে কারও দায় কিংবা ব্যবস্থা গ্রহণেরও উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি অদ্যাবধি।
এদিকে মৌলভীবাজার-কুলাউড়া ও বড়লেখা-বারইগ্রাম সড়কের বড়লেখার কাঁঠালতলী থেকে বড়লেখা-শাহবাজপুর সড়কের বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থান ডুবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাকা রাস্তা। স্থানীয় লোকজনকে হাটুপানি ঠেলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। কিছু লোকজন রিকশা ও ভ্যানে করে ও যাতায়াত করতে দেখা গেছে।
শহরের পানিধার এলাকায় সাংবাদিক খলিলুর রহমানের মোটর সাইকেল পানির তোড়ে ভেসে যায়। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করায় মোটর সাইকেলটি পাওয়া যায়। ঢলে বড়লেখা বাজারের প্রায় এক হাজার দোকান এবং চার হাজার ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। শহরের বেশ কয়েকটি দোকানে ঈদ উপলক্ষে বাড়তি জিনিসপত্র তোলা হয়েছিলো। তার সিংহভাগই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর আগে চলতি মাসের ৩ জুন এবং গত ৩০ মার্চ পৌর এলাকা একইভাবে পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে। কিন্তু বরাবরই পৌর কর্তৃপক্ষ থেকেছে নীরব। আর দায় দেখানো হয়েছে প্রভাবশালীদের ওপর। তাহলে এই প্রভাবশালী কারা, যারা ছড়া-খাল দখল করে রেখেছে। এসব দখল উদ্ধার কিংবা উচ্ছেদের ব্যাপারেও চরম উদাসীন পৌর সংশ্লিষ্টরা।
বড়লেখা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছাদ উদ্দিন জানান, বাজারে আমার দোকানের পেছনে বাসা। বাসাতে পানি ঢুকেছে। বাজার ও গ্রামের বেশিরভাগ ঘরবাড়িতে পানিতে একাকার। ঈদের বাজার থাকায় মানুষ কেনাকাটা করতে আসতে পারছে না। বেচাকেনাও রয়েছে বন্ধ। এবারের পানিতে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ নিয়ে তিনবার পানি ঢুকে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হলো।
এ বিষয়ে পৌর মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী জানান, আমার মৌলভীবাজারে যাওয়ার কথা ছিলো। বৃষ্টি দেখে বাদ দিয়েছি। ঠিকই শহর প্লাবিত হয়েছে। পৌরসভার কিছু উঁচুবাড়ি ছাড়া প্রায় বাসাবাড়িতেই পানি। বাজারের কিছু জায়গা ছাড়া সারা বাজারই পানিতে তলিয়ে গেছে। অন্তত এক হাজার দোকান, চার হাজার বাসাবাড়িতে পানি উঠেছে। পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে পানি নামছে। পানি দ্রুত নামার জন্য একটি রাস্তা কেটে দেওয়া হয়েছে। মূলত ষাটমাছড়া ও নিকড়িছড়া এ দু’টি ছড়া উপচে পানি এসে শহরে ঢুকে পড়ে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এসএম আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, শহরে ড্রেনেজ বলতে কিছু নেই। যে কারণে পানি দ্রæত নামতে পারে না। পৌরসভাকে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক করতে বলা হয়েছে।