লড়াইয়ের আগেই লড়াই শুরু
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুন ২০১৭, ১২:৩৭ পূর্বাহ্ণ
চৌধুরী মুমতাজ আহমদ:
সিলেট-১ আসন। মর্যাদাপূর্ণ আসন হিসেবে আলাদা এক পরিচয় এর। জনশ্রুতি আছে, এ আসনে যে দলের প্রার্থী জয়ী হন তার দলই সরকার গঠন করে। অনেক দিনের পরম্পরায় এটা অনেকে বিশ্বাসও করেন। আর এ কারণে এ আসনের দিকে সবারই আলাদা একটা নজর থাকে। বড় দলগুলো তাই এ আসনটি নিশ্চিত করতে হেভিওয়েট প্রার্থী ছাড়া অন্য কিছুভাবে না। এখন যিনি এ আসনটি অলঙ্কৃত করে আছেন তিনিও তেমনই একজন। এ আসনের সংসদ সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত গোটা দেশের অর্থনীতি সামলাচ্ছেন। ক্ষমতাসীন দল থেকে আগামীদিনে তারই মনোনয়ন পাওয়ার কথা। তাকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের কেউই আর এ আসনে চোখ রাখেননি। তবে আভাসে যখন তিনি জানিয়ে দিলেন আগামী দিনে হয়তো তিনি আর ভোটের লড়াইয়ে থাকছেন না। তখন নড়েচড়ে বসেন অনেকেই। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানসহ অনেকেই স্বপ্নের জাল বুনতে থাকেন এ আসনকে ঘিরে।
সে স্বপ্নের জাল ছিঁড়ে যেতেও সময় লাগে না। যখন অর্থমন্ত্রী সিলেট-১ আসনে নিজের পরিবর্তে তার ছোট ভাই আবুল কালাম আবদুল মোমেনের নাম প্রস্তাব করেন। লড়াইয়ের মাঠে থাকারা কিছুটা হতাশই হন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নিজেদের ইচ্ছাটা জোর গলায় জানান দিতে পারছিলেন না। তবে বদর উদ্দিন কামরান চুপ থাকলেও চুপ থাকেননি মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হালকা সুরে বলছিলেন সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করতে চান তিনি। তবে সবাইকে চমকে দেন তিনি, আওয়ামী লীগের সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে। ২২শে মার্চ আলিয়া মাদরাসা মাঠে অনুষ্ঠিত সভায় অর্থমন্ত্রীকে সামনে রেখেই মিসবাহ সিরাজ ঘোষণা দেন আগামী নির্বাচনে তিনি সিলেট-১ থেকে লড়তে চান।
অন্যদিকে আবুল মোমেনও যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সেটা বেশ ভালোই টের পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই তিনি সিলেটের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা পেশ করেছেন। দলীয় রাজনীতিতে তার কোনো পদ না থাকলেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে। তার অনুরাগীর বলয়ও ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে লড়াইয়ের মাঠে যে তিনি আছেন, সেটা বেশ টের পেতে থাকেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
আবুল মাল আবদুল মুহিত হলে এক কথা, কিন্তু প্রার্থী যদি তার ভাই হন তবে যে তাকে দলের অন্যরা ছেড়ে কথা কইবেন না, সেটা অনেকটাই স্পষ্ট। বিশেষ করে মিসবাহ সিরাজ তো বুঝিয়েই দিলেন তিনি মাঠ ছেড়ে দেবেন না আবুল মোমেনের জন্য। আবুল মোমেন প্রার্থী হলে দলের মাঝেই প্রকাশ্যে না হলেও গোপনে বিরোধের সৃষ্টি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা। এ আশঙ্কা থেকেই কি না আবারও সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন সিলেটে আওয়ামী লীগের মহীরুহ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গেল শুক্রবার সিলেটে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা বলেন। নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আছি, তবে দাঁড়াবো কি না সেটা পরে দেখা যাবে।’ অর্থমন্ত্রীর এমন ঘোষণায় লড়াইয়ের মাঠটা আবার ফাঁকা হয়ে গেল। বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ মাঠে থাকলে দল থেকে আর কেউই চোখ তুলে চাইবেন না সিলেট-১ আসনের দিকে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার ছোট ভাই আবুল কালাম আবদুল মোমেনকে আসনটি ছেড়ে দিয়ে আবার কেনো নিজের আগ্রহের কথা জানালেন সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে সিলেট জুড়ে। কেউ কেউ বলছেন, অর্থমন্ত্রী হয়তো ভেবেছিলেন, তিনি যদি আসনটি তার ভাইয়ের জন্য ছেড়ে দেন তবে হয়তো কোনো আপত্তি আসবে না। কিন্তু যখন দেখলেন বিষয়টি তেমন নয়, দলের ভেতর আরো প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে তখন কোন্দল এড়াতে আসনটি নিজের জন্যই রেখে দিতে চাইছেন তিনি। তবে কারো মনে অন্য ভাবনাও খেলা করছে, অর্থমন্ত্রী হয়তো মাঠটাকে খালি করে আগলে রাখতে চাইছেন ভাইয়ের জন্যই। শেষ মুহূর্তে ছেড়ে দেবেন ভাইকেই, যখন মাঠে আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবে না। অবশ্য নিপাট ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিত আবুল মাল আবদুল মুহিত যে ভাইয়ের জন্য এমন কৌশলী আচরণ করতে পারেন, তা ভাবতেও চান না দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী। তারা এগুলোকে নিন্দুকদের প্রচার বলেই মনে করছেন।- মানবজমিন