সিলেটে অনন্ত স্মরণ : হত্যার বিচার না হওয়ায় বিস্তার ঘটেছে জঙ্গিবাদের
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মে ২০১৭, ৮:৩৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
লেখক অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার দুই বছর পূর্তিতে স্মরণানুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, বিজ্ঞান লেখক, ব্লগার ও ভিন্নমতাবলম্বী ব্যক্তিদের হত্যার বিচার না হওয়ায় দেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটেছে। এখন প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও জঙ্গি আস্তানা ধরা পড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও হত্যার শিকার হচ্ছেন।
তবে সরকার প্রথম থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূলে তৎপর হলে, মুক্তমনা লেখকদের হত্যার বিচারে আন্তরিক হলে আজকে জঙ্গিরা এতোটা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারতো না।
লেখক অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার দুই বছর পূর্ণ হয়েছে শুক্রবার। এ উপলক্ষ্যে গণজাগরণ মঞ্চ, সিলেট আয়োজন করে ‘অনন্ত স্মরণ’ অনুষ্ঠানের।
বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে অনন্ত বিজয় হত্যার দ্রুত বিচারের দাবি জানানো হয়। এরপর সন্ধ্যায় শহীদ মিনার চত্বরে আলোক প্রজ্জ্বল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
অনন্ত বিজয়ের ছবি সম্বলিত শতাধিক প্ল্যাকার্ড মাটিতে পুতে তার পাশে আলো জ্বালিয়ে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, অনন্ত বিজয়কে হত্যা করা হলেও তার চিন্তা চেতনা ও বিজ্ঞান প্রসারে কর্মকান্ড এই আলো ছড়াবে আরো অনন্তকাল।
সম্প্রতি অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার চার্জশীট আদালতে গৃহিত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, এবার দ্রুত এই বিচার সম্পন্ন করে দায়ীদের শাস্তি প্রদান করা হবে।
একইসঙ্গে অভিজিত রায়, জগৎজ্যোতি তালুকদারসহ অন্যান্য হত্যাকান্ডগুলোর বিচার তরান্বিত কজরারও দাবি জানান বক্তারা।
হেফাজতের সাথে সরকার আপোস করছে মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, এমন আপোস বাংলাদেশকে আরো অন্ধকারে ঠেলে দেবে। সরকার একদিকে জঙ্গিদের দমনে অভিযান চালাচ্ছে। অপরদিকে জঙ্গিদের পৃষ্টপোষক হেফাজতে ইসলামের সাথে আপোস করছে তাদের কথায় পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনছে। যা বাংলাদেশকে আরো অন্ধকারে ঠেলে দেবে।
বক্তারা দেশে নারী নির্যাতন ও ধর্ষনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে নারী নির্যাতনকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান।
গণজাগরণ মঞ্চ সিলেটের মুখপাত্র দেবাশীষ দেবুর সঞ্চালনায় আলোক প্রজ্বলন পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রবীন রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার আরশ আলী, বাদল কর, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ভবতোষ রায় বর্মন রানা, সিনিয়র সাংবাদিক আল আজাদ, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু, সাবেক সভাপতি মনির হেলাল, অনন্ত বিজয় দাশের ভগ্নিপতি সমর বিজয় সী শেখর, বাসদ, সিলেটের সমন্বয়ক আবু জাফর, সিপিবি সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সুমন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত, জগন্নাথপুর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদির আহমদ মুক্তা, উদীচী সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ডা. অভিজিত রায় জয়, নারী মুক্তি সংসদ সিলেটের সভাপতি ইন্দ্রানী সেন সম্পা, কবি প্রণব কান্তি দেব, ধ্রুব গৌতম, আবিদ ফায়সাল, নিরঞ্জন চন্দ্র চন্দ, ভূমিসন্তানের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির, প্রণব পাল, রনেন সরকার রনি, অদিতি দাশ, চিত্রশিল্পী সত্যজিৎ চক্রবর্তী, নাট্য কর্মী রতন দেব, উত্তরা সেন পম্পা, অরুপ বাউল, ধ্রুবজ্যোতি দে, সুমন চৌধুরী, রুবেল আহমদ কুয়াশা, ইয়াকুব আলী, মাসুম আহমদ, ছাত্র ইউনিয়ন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক দিপঙ্কর দাশ গুপ্ত, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক আব্দুল বাতিন, রাজীব রাসেল, দেবোজ্যোতি দেবু, সৈয়দ রাসেল, শুভ ধর প্রমুখ।
সমাবেশের আগে বিকেলে একটি বিক্ষোভ মিছিল সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে কোর্ট পয়েন্ট ঘুরে আবার শহীদ মিনার চত্বরে গিয়ে শেষ হয।
স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পন: এরআগে সকালে নগরীর সুবিদ বাজারে যেস্থানে অনন্ত বিজয় খুন হয়েছিলেন, সেখানে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পন করে বিভিন্ন সংগঠন। এলাকাবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত এ পুষ্পস্তবক অর্পন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়।
২০১৫ সালের ১২ মে নিজ বাসার সামনে উগ্রবাদীদের হামলায় খুন হন লেখক অনন্ত বিজয় দাশ।