আটকে গেলো সিলেটবাসীর স্বপ্নের ঢাকা-সিলেট চারলেন : সংসদে যা বললেন এমপি এহিয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মে ২০১৭, ৪:১২ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
চারলেন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকবার ঘোষণা দিয়েছেন। সড়ক পরিবহন মন্ত্রী একাধিকবার সংসদে ও বিভিন্ন সভা সমাবেশে ঢাকা-সিলেট চারলেন প্রকল্পের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে বলে আশ্বস্থ করেছেন। কিন্তু বাস্তবে আটকে গেলো সিলেটবাসীর স্বপ্নের ঢাকা-সিলেট চারলেন সড়ক। চীনের কোম্পানী বাংলাদেশ সরকারের দর প্রস্তাবে রাজি না হয়ে এ প্রকল্প থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে যাচ্ছে। আমলাতান্ত্রিক এমন জটিলতায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে সিলেটবাসীর স্বপ্নের চারলেন প্রকল্প।
এতে করে শুরুর দিকেই ধাক্কা খেলো চারলেন সড়ক প্রকল্প। আদৌ এই চারলেন সড়ক নির্মাণ হবে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানান প্রশ্ন ।
পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন আর অগ্রযাত্রায় আমলাদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বেশ আগ থেকেই সিলেটের উন্নয়নে সরকারি আমলাদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। এই ঢাকা-সিলেট চারলেন সড়ক প্রকল্প ঘিরে তাদের প্রতি সেই অভিযোগের তীর আরো স্পষ্ট হয়ে উঠলো।
এদিকে ঢাকা-সিলেট চারলেন সড়ক প্রকল্প নিয়ে অনেকবার জাতীয় সংসদে কথা বলেছেন সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া।
তিনি গত সোমবার জাতীয় সংসদে বিকেলের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে তাঁর বক্তব্যে ঢাকা-সিলেট চার লেন প্রকল্পতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ঢাকা-সিলেট চার লেন প্রকল্প আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্প। তাছাড়া যখন চাইনিজ প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে এসেছিলেন তখন চায়না-বাংলাদেশ একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছিল যে, ঢাকা-সিলেট চার লেন প্রকল্প চায়নার হার্বার কোম্পানী কারিগরী এবং অর্থনৈতিক সহযোগীতা করবে। আমি এ ব্যাপারে অতীতেও সংসদে আরো দুই তিনবার কথা তুলেছিলাম। বিগতে সেশনেও মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রীর কাছে চার লেন প্রকল্পের জটিলতার বিষয়ে সংবাদপত্রের বরাত দিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম। তখন তিনি বলেছিলেন সংবাদপত্রে কি লিখল না লিখল এটা কোন বিষয় নয়। আগামী ১জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঢাকা-সিলেট চার লেন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।
চাইনিজ হার্বার কোম্পানি যারা বাংলাদেশের এ চারলেন প্রকল্পের জন্য এসেছিলো এতোদিন এতো নিগোসিয়েসান করেছে। তারা ২ মে আমাদের রোডস এন্ড হাইওয়ে ডিপার্টমেন্টের এর চীফ ইঞ্জিনিয়ার বরাবর চিঠি দিয়েছে যে অনেক নিগোসিয়েসান হয়েছে কিন্তু তারা এ প্রকল্প থেকে সরে যাচ্ছে। এটা আমরা জানতাম বিভিন্ন সময়ে আমাদের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারনে তা আটকে যাবে। হার্বার কোম্পানির চিঠির প্রেক্ষিতে বুঝা যাচ্ছে এই প্রকল্প উদ্ভোধন হওয়ার কিংবা কাজ শুরুর কোনো সুযোগ নেই। এতে সিলেটবাসী হতাশ হয়েছে। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেন সিলেট বিভাগের চারলেন প্রকল্প বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের শেষের দিকে চায়না হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানীর সঙ্গে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি করে রাখা হয়েছিল। চলতি বছরের জুনে কাজ শুরু ও ২০১৮ সালের মধ্যে ঢাকা- সিলেট চারলেন নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
সড়ক ও পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয় সুত্র জানায়, চায়না হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং ২০১৭ সালের নির্মাণ ব্যয় হিসেব করে দর প্রস্তাব করেছে। আর বাংলাদেশ সরকার ২০১৪/১৫ সালের নির্মাণ ব্যয় হিসেব করে প্রস্তাব দিয়েছে।
চীনা কোম্পানীর সুত্রে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট চারলেন করতে তারা কন্টেঞ্জেন্সি এলাউন্স ভ্যাট ও অ্যাডজাস্টমেন্ট খরছ ছাড়া ১২ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। এর সঙ্গে ২০ শতাংশ কন্টেঞ্জেন্সি এলাউন্স, ৩০ শতাংশ ভ্যাট ও ২০ শতাংশ অ্যাডজাস্টমেন্ট খরছ যোগ হবে।
কিন্তু কন্টেঞ্জেন্সি এলাউন্স ভ্যাট ও অ্যাডজাস্টমেন্ট ব্যয়সহ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের প্রস্তাব ১৩ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। যা চীনা কোম্পানীর মূল দামের ১ হাজার ৪০ কোটি বেশী। এতে হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে জানিয়েছে। এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কথা জানিয়ে তারা চিঠি দিয়েছে মন্ত্রনালয়ে।
তবে তারা শেষ পর্যন্ত এ প্রস্তাবও করেছে যে, সরকারের দাম প্রস্তাবের সঙ্গে আরও ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে দিলেই রাজি হবে।