সিলেটেই আছেন ধর্ষক শাফাত!
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ মে ২০১৭, ৯:৪২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
বনানীর ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীর দায়ের করা মামলার আসামি ও আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদের অবস্থান পুলিশ এখনো না জানলেও শাফাত সিলেটেই আছে বলে ধারণা করছেন এলাকাবাসী। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের একটি গ্রাম নগর। এই গ্রামেই শাফাত আহমদদের পৈত্রিক বাড়ি, রাজধানীর বনানীর ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার অভিযুক্ত হিসেবে ওঠে এসেছে যার নাম।
বিয়ানীবাজারের অন্যান্য গ্রামের মতো নগর গ্রামও ছায়াঘেরা, গাছগাছালিতে ভরা। প্রায় প্রতিটি বাড়িই একেকটা টিলার উপর। গ্রামের ভেতরে ছোট একটা টিলার উপর একটি একতলা পাকা বাড়ি। সামনে বেশ কয়েকটি সেগুন গাছ। এই বাড়িটিই শাফাত আহমদদের। শাফাতের দাদা মাসুক মিয়া এই বাড়িটি নির্মান করেন। আশির দশকে তিনিই গড়ে তুলেন পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আপন জুয়েলার্স।
ধর্ষণের মামলা দায়েরের চারদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো শাফাতকে ধরতে পারেনি পুলিশ। শাফাতের অবস্থান সম্পর্কেও কোনো তথ্য নেই পুলিশের কাছে। এ অবস্থায় সোমবার শাফাত সিলেটে আসে। সে এখনও সিলেটে থাকতে পারে এমনকি নিজের গ্রামেই কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা এলাকাবাসীর।
৬ নং ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. সেলিম আহমদ বলেন, গ্রামের শাফাতদের অনেক আত্মীয় স্বজন রয়েছে। এদের কারো বাড়িতেও সে লুকিয়ে থাকতে পারে। আবার সিলেটে তাদের আত্মীয় স্বজন রয়েছেন। সেসব জায়গায়ও আত্মগোপন করতে পারে।
তবে এই ইউপি সদস্য বলেন, ‘আমাদের চোখে পড়লে সে আর এই গ্রামে থাকতে পারবে না। এমন কুলাঙ্গার ছেলেকে এই গ্রামে কেউ জায়গা দেবে না। এই ঘটনায় পুরো গ্রামবাসী লজ্জ্বিত।’
তিনি আরো বলেন, ‘যদি শাফাত এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তার শাস্তি হওয়া উচিত।’
বুধবার বিকেলে শাফাতদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সদর দরজায় তালা ঝুলছে। বাড়ির পেছনেই মাটির ঘরে থাকে নিজাম উদ্দিনের পরিবার। তিনিই শাফাতদের গ্রামের বাড়িটি দেখাশোনা করেন।
নিজাম উদ্দিন বলেন, শাফাত গ্রামের বাড়িতে তেমন আসেন না। তার বাবা দিলদার হোসেন সেলিম মাঝেমাঝে আসেন। বিভিন্ন উৎসবের আগে আসেন। এসে এলাকার গরীব মানুষদের মধ্যে দান-খয়রাত করে যান। গত শীতেও দিলদার হােসেন গ্রামে এসে কম্বল বিতরণ করে গেছেন বলে জানান তিনি।
গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় শাফাতের গোষ্ঠি সম্পর্কীয় চাচাতো ভাই মো. হান্নানের সাথে। তিনিই শাফাতদের গ্রামের সম্পত্তি দেখাশোনা করেন।
শাফাত গ্রামে আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ভাই সিলেটে আছে। নিরাপদেই আছে। আমার সঙ্গেও যোগাযোগ আছে। কিন্তু আপনাদের বলবো না সে কোথায় আছে।’
এ ব্যাপারে সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল হক শিবলী বলেন, শাফাত কোথায় আছে আমাদের জানা নেই। পুলিশ তার গ্রামের বাড়িটি নজরদারিতে রেখেছে।
এরআগে সোমবার দক্ষিণ সুরমার একটি রিসোর্টে বন্ধুবান্ধবসহ আসে শাফাত। তবে ভোটার আইডি কার্ড দেখাতে না পারায় শাফাতকে কক্ষ বরাদ্ধ দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন
প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ রাতে রাজধানীর বনানীর ‘দি রেইনট্রি’ নামক একটি হোটেলে পূর্ব পরিচিত শাফাত আহমেদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে রাতভর ধর্ষণের শিকার হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী। ওই ঘটনায় গত শনিবার আপন জুয়েলার্সের অন্যতম কর্ণধার দিলদার আহমেদের ছেলে শাফাত আহমেদ ও ই-মেকার্স ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের পরিচালক নাঈম আশরাফকে প্রধান অভিযুক্ত করে মামলা করেন এক ছাত্রী।
মামলার অপর তিন আসামির একজন সাদমান সাকিফ রেগনাম গ্রুপের পরিচালক। অপর দুই আসামির একজন শাফাতের গাড়ি চালক বিল্লাল এবং তার দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ। ওই তিনজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।