সুনামগঞ্জে প্রতিবন্ধী ছয় সন্তানকে নিয়ে অসহায় মিনারা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মার্চ ২০১৭, ১:০৩ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
স্বামী অসুস্থ। ৯ সন্তানের মধ্যে ৬ জনই শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। সংসারের বোঝা একা মিনারা বেগমের কাঁধে। অন্যের সবজি ক্ষেতে কাজ করে যা পান তা দিয়ে টেনেটুনে চলে সংসার। এখন পর্যন্ত কোনো সন্তানের জন্য প্রতিবন্ধী ভাতাও পাননি।
মিনারা বেগমের বাড়ি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওর পারের হোসেনপুর গ্রামে। সম্প্রতি দেখা যায়, সুরমা নদীর তীরে মাটির একটি ঘর। টিনের ছাদও ভাঙাচোরা।
স্বামী উস্তার আলী কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। দেড় বছর আগে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন। এখন তিনি আর কোনো কাজ করতে পারেন না। এ দিন তিনি চিকিৎসার কাজে সিলেট ছিলেন।
উস্তার ও মিনারা বেগমের ৯ সন্তান। এর মধ্যে ৬ ছেলে ও ৩ জন মেয়ে। বড় ছেলে সোহেল মিয়ার বয়স ১৬। সোহেল শুনতে ও কথা বলতে পারে না। মানসিকভাবেও প্রতিবন্ধী। একই সমস্যা রুমা, সোমা, তোফায়েল, জুনেল ও আলীর। রুবেল, তোফায়েল ও ৯ মাস বয়সী ঝুমা কথা বলতে পারে। তবে তাদের চর্মরোগসহ নানা সমস্যা আছে।
মিনারা বেগম বলেন, সবজিখেতে সারা দিন কাজ করলে ৬০ থেকে ৭০ টাকা পাওয়া যায়। এ দিয়ে আটা কিনে আনেন তিনি। সন্তানেরা সারা দিন তাঁর পথ চেয়ে বসে থাকে। বিকেলে এসে তিনি রুটি বানান। তারপর সন্তানেরা খায়।
মিনারা বলেন, ‘স্বামী-সন্তানদের চিকিৎসায় জমি-জিরাত যা ছিল সব বিক্রি করতে হইছে। এখন আর কিছুই নাই। টাকার অভাবে চাল কিনতে পারি না। প্রায়ই উপাস থাকতে হয়। কী করব কন, কেউ তো কোনো সহায়তা করে না।’
মিনারার অভিযোগ, সরকারের কাছ থেকে তিনি কোনো সাহায্য পাননি। তাঁর ছেলেমেয়েরাও প্রতিবন্ধী ভাতা পায় না। যদি মাসে ভাতার ৬০০ টাকাও পেতেন তাহলে হয়তো ছেলেমেয়েদের নিয়ে উপোস করতে হতো না।
গ্রামের একাধিক বাসিন্দা বলেন, এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার কেউ কোনো দিন এই পরিবারের খোঁজ নেননি। উস্তার আলী ভালো থাকতে শ্রমিকের কাজ করে মোটামুটি সংসার চালাতে পারতেন। এখন মিনারা অসুস্থ স্বামী-সন্তানদের নিয়ে সাগরে ভাসছেন।
জামালগঞ্জের তৃণমূল প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, এই পরিবারের বিষয়টি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। তাঁরা একটা ভাতার ব্যবস্থা করার কথা বলেছিলেন কিন্তু এখনো কাজ হয়নি।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বলেন, সবাইকে তো আর ভাতা দেওয়া সম্ভব নয়। এই পরিবারের একজনকে আগামী জুলাই মাস থেকে ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।