সিলেটের ‘লালাখাল’: নদী-পাহাড়ের অপরূপ মেলবন্ধন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ মার্চ ২০১৭, ৫:৪০ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার ‘লালাখাল’। জায়গাটার নামের সঙ্গে ‘খাল’ শব্দ যুক্ত থাকলেও এটা মূলত ‘সারি নদীর’ অংশ। টিলা ও পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে বয়ে চলা এ নদীর একেবারে তলার বালুকণাও খালি চোখে দেখা যায়। নদীর স্বচ্ছ নীল পানি ও পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝরনাধারা; যেন প্রকৃতির এক মায়াবী কন্যা। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মাইনথরু পাহাড় থেকে সারি নদীর উত্পত্তি হয়ে সিলেটের জৈন্তাপুরের লালাখাল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেই লালাখালের অবস্থান। লালাখালে রয়েছে সুন্দর এক চা বাগানসহ ফ্যাক্টরি। বাগানের পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ আপনাকে নিয়ে যাবে অচেনা এক দেশে। একটু এগোলেই ওপারে ভারতের সীমান্ত আপনাকে জানিয়ে দেবে, আর এগোনোর পথ নেই। সিলেট থেকে সড়কপথে সিলেট-তামাবিল সড়ক হয়ে জৈন্তাপুরের সারিঘাট থেকে সড়কপথ ও নৌপথ-দু’ভাবেই লালাখাল যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সিলেট শহর থেকে সারিঘাটের দূরত্ব প্রায় পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার। সারিঘাট থেকে গ্রামের সরু রাস্তা দিয়ে মাত্র ৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই লালাখাল। তবে নৌ ভ্রমণটা বেশি উপভোগ্য বলে এটাকেই বেছে নেয় অধিকাংশ পর্যটক। সারিঘাট থেকে ইঞ্জিন নৌকা কিংবা স্পিডবোটে চড়ে সারি নদী হয়ে যেতে যেতে যেদিকে চোখ যায়, মুগ্ধতায় নেমে আসে মগ্নতা! যেন চারপাশে সবুজের হাতছানি। মাঝে মধ্যে কাশবনের ঝোপ চোখে পড়ে। তবে নদীতে অসংখ্য বাঁকের দেখা মেলে। প্রতিটি বাঁকই দেখার মতো সুন্দর। নদী থেকে দূরে পাহাড় দেখা যায়। দেখলে যতটা কাছে মনে হয়, আসলে তত কাছে না। পাহাড়গুলোকে দেখলে মনে হয়, কেউ যেন নিজ হাতে থরে থরে একের পর একটি করে সাজিয়ে রেখেছে। বৃষ্টিবহুল চেরাপুঞ্জির কাছাকাছি হওয়ায় এখানে বর্ষাকালে পাহাড়ের গায়ে মেঘ জমা হয়। একটু কাছ থেকে দেখা যায়, মেঘেরা দল বেঁধে পাহাড়ের গায়ে ঠেস লাগিয়ে থেমে থাকে। আবার কখনও দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে সবার অলক্ষ্যে হারিয়ে যায়। কখনো মেঘ বেশি জমা হলে এখানে বৃষ্টিপাত বেড়ে যায়। নদীর জলে নৌকার ওপর বসে পাহাড় দেখার সৌর্ন্দযই আলাদা। নদীতে স্রোত থাকায় যাওয়ার পথে সময় বেশি লাগে, তেমনি ফিরতি পথে পাওয়া যায় বাড়তি সুবিধা। লালাখালে সারাদিন বেড়িয়ে রাতে এসে থাকতে পারেন সিলেট শহরের কোনো হোটেলে। এ শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল আছে। তবে সারি নদীর কাছে প্রকৃতির কোলে সময় কাটাতে চাইলে থাকতে হবে লালাখালের পাশে মনোরম দুটি রিসোর্ট ‘নাজিমগড় ওয়াইল্ডারনেস রিসোর্ট’ কিংবা ‘নাজিমগড় ন্যাচার পার্কে’। এ রিসোর্টে থাকতে হলে আপনাকে গুনতে হবে সর্বনিম্ন ৯ হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা। খরচটা একটু বেশি হলেও প্রাকৃতিক পরিবেশে আভিজাত্যের স্বাদ মিলবে এই জায়গাতে। তবে ন্যাচার পার্কের খরচটা তুলনামূলক কম। লালাখালের তীর ঘেঁষা এ তাঁবু রিসোর্টে থাকতে ভালো লাগবে সবার। ন্যাচার পার্কে দুজনের তাঁবু ৪ হাজার টাকা। তিনজনের ৫ হাজার টাকা। লালাখাল ভ্রমণের জন্য বর্ষার আগের সময়টা উপযুক্ত। চাইলে বর্ষাকালেও ভ্রমণ করা যেতে পারে। তবে বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলের কারণে এ নদীর পানি ঘোলা থাকে। ভ্রমণবিলাসী পর্যটকদের জন্য এই স্থানটিকে আরও আকর্ষণীয় করে পরিবেশবান্ধব পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।