সিলেটের ৫০ লাখ প্রবাসীর প্রতীক্ষার অবসান : কাল ওসমানী বিমানবন্দর থেকে চালু হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ মার্চ ২০১৭, ৪:২০ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
বিদেশী ফ্লাইটের জন্য উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আকাশ। আগামীকাল বুধবার (১৫ মার্চ) থেকে ওসমানী বিমানবন্দর থেকে চালু হচ্ছে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। ওইদিন বিকেলে ওসমানী বিমানবন্দর থেকে ফ্লাই দুবাইয়ের একটি ফ্লাইট দুবাইয়ের উদ্দেশে রওয়ানা হবে।
বুধবার দুপুরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ওই ফ্লাইটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
এর ফলে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য ১৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান হচ্ছে সিলেটের যাত্রীদের। আন্তর্জাতিক ঘোষণার প্রায় ১৮ বছর পর এই বিমানবন্দর থেকে বিদেশি কোনো উড়োজাহাজের সরাসরি ফ্লাইট চালু হচ্ছে। এর আগে আরেক দফা ফ্লাই দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলেও একদিন পরই তা বন্ধ হয়ে যায়।
সিলেটের প্রায় ৫০ লাখ প্রবাসী বসবাস করেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। গত ৬ দশক ধরে এসব প্রবাসী বিদেশে বসবাস করে রেমিট্যান্স প্রবাহকে সমৃদ্ধ করলেও তাদের যাতায়াতের একমাত্র গেটওয়ে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছিল উপেক্ষিত। কেবল অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট যাতায়াত করতো ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করেছিলেন। ওই সময় অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হলেও রিফুয়েলিং সিস্টেম ছিল না। ফলে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশ-বিদেশ থেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রিফুয়েলিং সিস্টেম চালু করার দাবি উঠে। এই দাবির প্রেক্ষিতে প্রায় ৩ বছর আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শত কোটি টাকা ব্যয়ে রিফুয়েলিং সিস্টেম চালু করেন। এরপর থেকে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। প্রস্তুতের পর বাংলাদেশ বিমান সিলেট থেকে যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দরে সরাসরি ফ্লাইট চালু করে। কিন্তু কুয়াশারার অজুহাত দেখিয়ে প্রায় দুই বছর আগে বিমানও সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়। ফলে কয়েক মাস সিলেট থেকে লন্ডনে সরাসরি ফ্লাইট চালু বন্ধ থাকে। আর ওই সময় সিলেটবাসী দাবি তোলেন ওসমানী বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ কোম্পানির ফ্লাইট অবতরণের। এ দাবি নিয়ে যখন সিলেটসহ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসীরা একজোট হন তখন বাংলাদেশ বিমান লন্ডন, দুবাই, সৌদি থেকে সরাসরি ফ্লাইট নিয়ে সিলেটে আসছে। কিন্তু সিলেট থেকে সরাসরি ওই সব দেশে ফ্লাইট চালু করেনি। ফলে সিলেটের যাত্রীদের বাধ্য হয়ে ঢাকা ছুঁয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তির শেষ নেই। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, সিলেট বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৬-৭শ’ জন প্রবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করেন। এসব যাত্রীর চলতে হয় বিমানের মর্জির ওপর। প্রতি মাসেই ২-১ বার বাংলাদেশ বিমানের সিডিউল ওলটপালট হয়। ওই সময় বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে ইউরোপ ও আমেরিকাগামী যাত্রীদের পোহাতে হয় ভোগান্তি। এ অবস্থায় ২০১৫ সালের ১লা এপ্রিল সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাই দুবাই সরাসরি ফ্লাইট চালু করেছিল। ওই দিন দুবাই থেকে সরাসরি আসা একটি ফ্লাইট সিলেটে আসে এবং সিলেট থেকে সরাসরি দুবাই যায়। তবে মাত্র একদিন ফ্লাইট অপারেট করেই ফ্লাই দুবাইয়ের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর কারণ ছিল, ফ্লাই দুবাই ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের গ্রাউন্ড সার্ভিস পায়নি। এমনকি তখন ফ্লাই দুবাই রিজেন্ট এয়ার ওয়েজের গ্রাউন্ড সার্ভিস চেয়েছিল। কিন্তু বিমানের আপত্তির কারণে তারা সেটিও পায়নি। ওই সময় এয়ার এরাবিয়া আসার কথা থাকলেও পরবর্তীতে তারাও ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়।
তবে এবার বন্ধ হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই জানিয়ে ফ্লাই দুবাইয়ের সিলেটের স্টেশন ম্যানেজার মাসুম মিয়া বলেন, ২০১৫ সালের ১ মে ওসমানী বিমানবন্দরে অবরতরণ করে ফ্লাই দুবাই। কিন্তু গ্রাউন্ড সার্ভিস না পাওয়ায় ওইদিনের পর আর ফ্লাইট চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে এবার রিজেন্ট এয়ারওয়েজের সাথে আমাদের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের চুক্তি হয়েছে। ফলে ১৫ মার্চ থেকে ফ্লাইট অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, প্রথম ৩ মাস ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সপ্তাহে পাঁচদিন দুবাই, কাতার, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ফ্লাইট পরিচালিত হবে। ৩ মাস পর সপ্তাহে সাতদিনই ফ্লাইট থাকবে।
১৯৯৮ সালের ২০ ডিসেম্বর ওসমানী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে উন্নীত করা হয়। ওসমানী বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানান, কেবল ফ্লাই দুবাই নয়, এয়ার এরাবিয়া, জেট এয়ারসহ কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি সিলেট থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালুর প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।
ওসমানী থেকে বাংলাদেশ বিমানের সিলেট থেকে যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দরে সরাসরি ফ্লাইট চালু চলেও ২০১৪ সালে কুয়াশার অজুহাত দেখিয়ে বিমানও সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়।
প্রবাসীদের দাবির মুখে ২০১৫ সালে প্রায় ৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ওসমানী বিমানবন্দরে স্থাপিত হয় রিফুয়েলিং স্টেশন। গত বছর থেকে এই রিফুয়েলিং স্টেশন চালু হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট না থাকায় এই স্টেশনের জ্বালানি বিক্রি হচ্ছে না। ফলে চালুর পর থেকেই লোকসানে আছে ওসমানীর রিফুয়েলিং স্টেশন।
ওসমানী বিমানবন্দরে ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ বলেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সংক্রান্ত জটিলতায় ২০১৫ সালে ফ্লাই দুবাই’র ফ্লাইট চালু হয়ে আবার বন্ধ হয়ে যায়। এবার সব জটিলতার অবসান ঘটিয়েই তারা ফ্লাইটটি চালু করছেন।
তিনি জানান, ওসমানী বিমানবন্দরের বিদ্যমান রানওয়ে ও টেক্সিওয়ে শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে ওয়াইড বডি বোয়িং ৭৭৭ মডেলের বিমানসহ অন্যান্য ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ৪৫২ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আরো বিদেশি উড়োজাহাজ ওসমানীতে অবতরণ করবে।