সিলেট জুড়ে থমথমে অবস্থা, হঠাৎ মারমুখী পরিবহন শ্রমিকরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ৪:১৯ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটে হঠাৎ করেই মারমুখী হয়ে উঠেছে মাইক্রোবাস পরিবহন শ্রমিকরা। রাত থেকে শুরু করে আন্দোলন। রাস্তা অবরোধ, বিক্ষোভ করে তারা। আর সকালে নিজেদের ডাকা পরিবহন ধর্মঘটে রাস্তা অবরোধ করে গোটা সিলেটে ধর্মঘট পালন করেছে। তবে দুপুরের পর পুলিশের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকের মাধ্যমে ধর্মঘট স্থগিত করা হয়। সমঝোতা বৈঠক থেকে ফেরার পথে তারা বিকাল ৩টার দিকে নগরীর সুবহানীঘাট এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরীর গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এ ঘটনার পর ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলা করে আইন কলেজ সংলগ্ন এলাকায় মাইক্রোবাস শ্রমিকদের কার্যালয় ভাঙচুর করে। এ নিয়ে সিলেটে উত্তেজনা বিরাজ করছে। নগরীর সুবহানীঘাট ও উপশহর এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি ইউনিট গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আইন কলেজ সংলগ্ন মাইক্রেবাস স্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় ওই এলাকা থেকে মাদক সহ শফিক ও স্বপন নামের দুই মাইক্রোবাস পরিবহন কর্মীকে আটক করে উপশহরস্থ ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। দুই শ্রমিককে আটকের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক রাস্তায় নেমে আসে পরিবহন শ্রমিকরা। তারা আইন কলেজের সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে ব্যারিকেড দেয়। এ সময় তারা বিক্ষোভ করে। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে মিছিল করে। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। আধঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। আহত হন অন্তত ১০ জন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে যান সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার রোকন উদ্দিন আহমদ। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠুু সমাধানের আশ্বাস দিলে রাতে শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করে। এদিকে- রাত সাড়ে ১১ টার দিকে পরিবহন শ্রমিকরা সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমা এলাকার কেন্দ্রীয় বাস টামির্নাল এলাকায় অবস্থান নেয়। ওখানে তারা সড়ক অবরোধ করে। এ নিয়ে রাতেও আরেক দফা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ সতর্ক অবস্থানে। মধ্যরাতে বৈঠক করে সিলেট জেলা মাইক্রোবাস পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা শনিবার সকাল থেকে সিলেটে মাইক্রোবাস পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট আহ্বান করে। গতকাল সকাল থেকে মাইক্রোবাস শ্রমিকরা ধর্মঘট শুরু করে। কিন্তু বাস, মিনিবাস, ট্রাক, অটোরিক্সা সহ অন্যান্য যানবাহন শ্রমিকরা তাদের ধর্মঘটে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। তারা যানবাহন চালাতে শুরু করলে মাইক্রো পরিবহন শ্রমিকরা সিলেটের সবক’টি প্রবেশমুখে অবস্থান নেয়। তারা চণ্ডীপুল এলাকায় অবস্থান নেয়ার ফলে ঢাকা থেকে সিলেটগামী যানবাহন আটকা পড়ে নগরীর প্রবেশ মুখে। একই সঙ্গে ফেঞ্চুগঞ্জ রোড, জকিগঞ্জ রোড, সুনামগঞ্জ রোড ও তামাবিল রোডেও ব্যরিকেড দেয়। এতে করে সকাল ৯টা থেকে সিলেট নগরীর সঙ্গে স্বল্পপাল্লা ও দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। দক্ষিণ সুরমায় আটকা পড়ে পিকনিকের যানবাহনও। এমনকি সরকারি যানবাহন চলাচলেও বাধা হয়। এ কারণে দুর্ভোগ বাড়ে সিলেটের যাত্রীদের। আর নগরীতেও যানবাহন চলাচল কমে আসে। এদিকে- সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় ঢাকাসহ দূরপাল্লার যাত্রীরা হঠাৎ করে ডাকা পরিবহন ধর্মঘটে আটকা পড়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন। যাত্রীরা অভিযোগ করেন, সিলেট নগরীর বিভিন্ন প্রবেশ মুখে যানবাহন দিয়ে ব্যারিকেড দেয়ায় রোগীবাহী যানবাহন আটকা পড়ে। সকাল ৬ টা থেকে বেলা ২ টা পর্যন্ত প্রায় ৮ ঘণ্টা অচল পড়া সিলেটের দুর্ভোগ লাঘব হয় সমঝোতার মাধ্যমে। বিকালে সিলেটের পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়ার উপস্থিতিতে সমঝোতা বৈঠক বসে। এতে সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ সহ পরিবহন শ্রমিক নেতারা বৈঠকে অংশ নেন। প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনার পর পরিবহন শ্রমিক নেতারা পুলিশের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তাদের ধর্মঘট স্থগিত ঘোষণা করেন। এদিকে, বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিকেল ৩ টার দিকে নগরীর সুবহানীঘাট এলাকা দিয়ে গাড়িযোগে যাচ্ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী। আইন কলেজের সামনে যাওয়ার একটু আগে আচমকা ৩০-৪০ জনের একদল পরিবহন শ্রমিক তার গাড়িতে পেছন দিক থেকে হামলা চালায়। এ সময় তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করে। ইট-পাটকেলও নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় হতভম্ব হয়ে পড়েন শফিকুর রহমান চৌধুরী। খবর পেয়ে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, সিলেট-২ আসনের এমপি ইয়াহ্হিয়া চৌধুরী এহিয়াসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সেখানে যান। স্থানীয়রা জানান- হামলার সময় শফিকুর রহমান চৌধুরী গাড়িতেই বসা ছিলেন। হামলাকারীরা গাড়ি ভাঙচুর করে পালিয়ে যায়। এদিকে- এ ঘটনার পরপরই সেখানে পৌঁছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে। এ সময় তারা মিছিলসহ আইন কলেজের সামনে থাকা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় ভাঙচুর করে। পরে কার্যালয়ের ভেতরে থাকা আসবাবপত্র বাইরে এনেও তারা ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ ঘটনার পর বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এলাকায়। শফিকুর রহমান চৌধুরীর গাড়িতে হামলার ঘটনায় নগরীর গোপাল টিলায় এক পরিবহন শ্রমিক নেতার বাসা ভাংচুর করা হয়েছে। সূত্রঃ মানবজমিন