আমেরিকার প্রবাসী বাংলাদেশীদের আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১১:০৩ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজঃ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে ইমিগ্রেশন নিয়ে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে তাতে বাংলাদেশি অভিবাসীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা। স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের আমব্রেলা সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তারা বলেন, বাংলাদেশি অভিবাসীদের এই মুহূর্তে কোনো সমস্যা নেই। তাই কোনো গুজবে কান না দিয়ে যে কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করা উচিত।
বর্তমান পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তা থেকে উত্তরণে সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমরা যেন নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো বিরোধে জড়িয়ে না পড়ি। অর্থাৎ ন্যুনতম অপরাধ না করি।
বাংলাদেশিদের জন্য এই মুহূর্তে করণীয় কী তা জানতেই ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সোসাইটি। হুইটনি অ্যাভিনিউর নিজস্ব ভবনে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় বেশ কয়েকজন ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি, বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ সোসাইটির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ। সভার সঞ্চালক ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. রুহুল আমিন সিদ্দিকী।
মতবিনিময় সভায় ইমিগ্রেশন নিয়ে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন অ্যাটর্নি নাজমুল আলম, অ্যাটর্নি এম. আজিজ, ব্যারিস্টার ইশরাত সামী, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ এন. মজুমদার ও অ্যাডভোকেট মুজিবর রহমান।
অ্যাটর্নি নাজমুল আলম সাতটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের কপি দেখিযে বলেন, আমেরিকানদের রক্ষার জন্য বিদেশি সন্ত্রাসীদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করতে ট্রাম্প এই নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। ভবিষ্যতে এই তালিকায় আরো কয়েকটি দেশের নাম যুক্ত হতে পারে। তবে আমরা এখনো জানি না কোন দেশগুলো যুক্ত হতে পারে।
অ্যাটর্নি নাজমুল আলম বলেন, অফিসিয়ালি এটাকে ‘মুসলিম ব্যান’ অথবা ‘ট্রাভেল ব্যান’ বলা যাবে না। তবে আরো কিছু নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বিশেষ করে ফ্যামিলি স্পন্সর (আই-৬৪) বিষয়ের ওপর ট্রাম্পের নজর পড়েছে বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে নির্বাহী আদেশ জারি হলে যুক্তরাষ্ট্রে ফ্যামিলি মেম্বারদের স্পন্সর করা দুঃসাধ্য হতে পারে।
তিনি বলেন, আমেরিকার জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট ছিলেন বিল ক্লিনটন। অথচ তার সময়েই ইমিগ্রেশন আইন সবচেয়ে কঠিন হয়েছে। আবার জর্জ ডব্লিউ বুশ ইরাক যুদ্ধের জন্য নিন্দিত হলেও তিনি ইমিগ্রেশন বান্ধব ছিলেন। প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে সবচেয়ে বেশি লোককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
ব্যারিস্টার ইশরাত সামী বলেন, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পরপরই অ্যাকশন শুরু হয়েছে। অনেককে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অনেকে তৃতীয় দেশ থেকে বিমানে উঠতে দেওয়া হয়নি। যে সাতটি দেশ নিষিদ্ধ হয়েছে সেসব দেশের নাগরিকদের ইতিপূর্বে দেওয়া ভিসা বাতিল হয়েছে। এমনকি ইমিগ্র্যান্ট ভিসা ছিল তাদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ট্রাম্পের এই আদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটে মামলা হয়েছে।
তিনি অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে না আসার পরামর্শ দিয়ে বলেন, বৈধ অনেক পথে যুক্তরাষ্ট্রে আসা যায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাউকে যুক্তরাষ্ট্রে না আসার পরামর্শ দেন ব্যারিস্টার ইশরাত সামী।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ এন. মজুমদার বলেন বৈধ উপায়ে তারা গ্রিনকার্ড অজন করেছেন তাদের ভয়ের কিছু নেই। তবে যারা অবৈধ উপায়ে গ্রিনকার্ড পেয়েছেন এবং যাদের একাধিক নাম রয়েছে তাদের নিয়ে শঙ্কার কথা জানান তিনি।
অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে যুক্তরাষ্ট্রের আইন মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আইন মেনে চললে তার জন্য ভয়ের কিছু নেই।
সভাপতির বক্তৃতায় কামাল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশিদের অনেকেই আতঙ্কে আছেন। তাদের সাহায্য করতেই বাংলাদেশ সোসাইটি এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে। বাংলাদেশি কমিউনিটির যে কোনো সমস্যায় বাংলাদেশ সোসাইটি পাশে থাকবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার, সহ-সাধারণ সম্পাদক এম কে জামান, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মনিকা রায়, গণসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ, ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক নওশেদ হোসেন, স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক আহসান হাবিব, কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ সাদী মিন্টু, আজাদ বাকের, সাবেক কার্যকরি সদস্য সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, জেবিবিএ’র প্রচার সম্পাদক সাজ্জাদ হোসাইন প্রমুখ।