সিলেটে মমতার কান্না
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেটের এক পুনর্বাসন কেন্দ্রের চাকরি হারিয়েছেন মমতা বেগম। তাকে চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকা তার সন্তান ও বোনকে বের করে দেয়ার প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি থানায় জিডি করেছেন। পুলিশি তদন্তে তার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এ কারণে আদালতে হয়েছে মামলাও। মমতা তার করুণ কাহিনী সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেছেন। বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যেখানে এতিম ও অসহায় শিশুদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য অবিরাম কাজ করছেন তখন এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সব স্বপ্ন ফিকে হতে বসেছে। স্বামীহীনা মমতা বেগম। মমতার বয়স বেশি নয়। ২৭ কিংবা ২৮ হবে। বাড়ি সিলেট নগরীর ৩৪ কুয়ারপাড় এলাকায়। স্বামী বাছন মিয়া মারা গেছেন বিয়ের কয়েক বছর পরেই। এরপর থেকে একাকিত্ব জীবন কাটাচ্ছেন মমতা বেগম। আর মামলায় অভিযুক্ত কর্মকর্তা
নুরে আলম হচ্ছেন সিলেট নগরীর শিবগঞ্জ নুর মঞ্জিলে অবস্থিত শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের উপ-পরিচালক (চলতি দায়িত্ব)। এই কেন্দ্রের আশ্রয়ে রয়েছে মমতার পালক কন্যা আশা (১১) ও বোন ফৌজিয়া (১২)। কেন্দ্রে যাওয়া-আসার সুবাদে নুরে আলমের চোখ পড়ে মমতার ওপর। এরপর থেকেই মমতার পিছু নেয় নুরে আলম। সংবাদ সম্মেলনে মমতা জানান, এক সার্কুলারের মাধ্যমে ২০১৬ সালে তিনি ওই কেন্দ্রের আউট সোর্সিং কুক পদে নিয়োগ পান। মহার্ঘ্য ভাতা সহ তার বেতন পাওয়ার কথা ছিল প্রায় ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু উপ-পরিচালক নুরে আলম তাকে প্রতি মাসে দিতেন ৫ হাজার টাকা। বাকি টাকা তিনি পকেটস্থ করতেন। এরপরও দুটি সন্তানের কথা চিন্তা করে মমতা এর প্রতিবাদ করেননি। চাকরিকালীন সময়ে নুরে আলম কুক মমতাকে প্রায় সময় তার রুমে ডেকে পাঠাতো। কুরুচিপূর্ণ অঙ্গ-ভঙ্গি প্রদর্শন করতো। কু-প্রস্তাবও দিতো। নুরে আলমের এসব কর্মকাণ্ডে মমতা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। মমতা সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, গত বছরের ২৭শে আগস্ট নুরে আলম মমতাকে তার রুমে ডেকে নিয়ে সরাসরি কু-প্রস্তাব দেন। এই প্রস্তাবে রাজি হননি তিনি। তিনি রাজি না হওয়ায় নুরে আলম এসময় তাকে গালিগালাজ করেন। এমনকি প্রাণনাশেরও হুমকি দেন। ঘটনার তিন দিন পর ওই বছরের ১লা সেপ্টেম্বর মমতাকে চাকরিচ্যুত করেন। ১২ই সেপ্টেম্বর তিনি মমতার পালক মেয়ে আশা ও বোন ফৌজিয়াকে ওই কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন মমতা বেগম। তিনি ওই দিনই নুরে আলমের বিরুদ্ধে শাহপরান থানায় জিডি (নং-৫০৯) করেন। পরবর্তীতে থানার এএসআই হারুনুর রশীদ ঘটনার তদন্ত করে মমতার অভিযোগের সত্যতা পান। এবং তিনি ২১শে অক্টোবর সিলেটের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি দ্বিতীয় আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ প্রতিবেদনের আলোকে আদালত নন-এফআইআর মূলে মামলা গ্রহণ করেন। গত ১লা জানুয়ারি আদালতে মামলার প্রথম শুনানি হয়েছে। মমতা জানিয়েছেন, মামলা হওয়ার পর থেকে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে নুরে আলম। নানা ষড়যন্ত্র করার ফন্দি আঁটছে। এখন সে ওই কেন্দ্রে থাকা শিশু আশা ও ফৌজিয়াকে জিম্মি করে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা চালাচ্ছে। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হলেও তিনি ওদের এখনও ভর্তি করেননি। পালক মেয়ে আশা ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে ভালো শিক্ষার্থী হলেও এবারের পরীক্ষায় তাকে কৌশলে অকৃতকার্য করা হয় বলে দাবি করেন মমতা। সংবাদ সম্মেলনে মমতা বেগম নুরে আলমের অপসারণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। মমতা জানান, নানা ঘটনায় বিতর্কিত হওয়ার পর ২০১৪ সালে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছিল নুরে আলমকে। ২০১৬ সালে পুনরায় সিলেটে এসে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড শুরু করেছেন। তার চারিত্র্যিক কারণে ওই প্রতিষ্ঠানে থাকা অসহায়, এতিম মেয়ে শিক্ষার্থীরাও নিরাপদ নয়। সূত্রঃ মানবজমিন