ইমেজ সংকট সিলেট ছাত্রলীগে ঘুরে ফিরে আলী
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ জানুয়ারি ২০১৭, ৪:৩১ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেট ছাত্রলীগে ঘুরে ফিরে আলোচনায় আলী। তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সিলেট জেলা ছাত্রলীগ পড়েছে ইমেজ সংকটে। জমি দখল, চাঁদাবাজি সব ঘটনায়ই আলীর নাম। এ কারণে আলী গ্রেপ্তার হয়েছে একাধিকবার। গতকাল সর্বশেষ বাসা দখল করতে গিয়ে সে গ্রেপ্তার হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলাও। পুলিশ জানিয়েছে- আলী পুলিশের তালিকাভুক্ত অপরাধী। অতীতেও সে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে এসেই চালায় বিতর্কিত কর্মকাণ্ড। সিলেট জেলা ছাত্রলীগ নেতারা জানিয়েছেন- তার কর্মকাণ্ডে সিলেট জেলা ছাত্রলীগ অনেক দুর্নাম কুড়িয়েছে। তার কারণেই সিলেট জেলা ছাত্রলীগে নেমেছিল শাস্তির খড়গ। যখনই ছাত্রলীগের পরিচ্ছন্ন নেতারা দলকে সাংগঠনিক ভাবে এগিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া চালান তখনই সে কুকর্ম করে বসে। আলীকে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য জেলার নেতারা কেন্দ্রের কাছে অনুরোধ করবেন বলে জানান। আলীর পুরো নাম আলী হোসেন। বাড়ি জগন্নাথপুর উপজেলায়। সিলেট জেলা ছাত্রলীগে আগের কমিটিতে কোনো পদ-পদবিতে ছিল না। বর্তমান সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। আলী হোসেনের প্রথম আস্তানা ছিল সিলেট নগরীর শামীমা আবাসিক এলাকায়। ওই এলাকায় জগন্নাথপুরের প্রবাসীদের বাসিন্দাদের বসবাস বেশি। প্রায় ৫ বছর আগে আলী শামীমাবাদ এলাকায় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কেন্দ্রিক ছাত্রলীগের একটি গ্রুপকে নিয়ন্ত্রণ করতো। ওই গ্রুপটি ছিল শামীমাবাদ এলাকার আতঙ্ক। এলাকার চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করতো আলী হোসেন নিজেই। শামীমাবাদ এলাকার মনিকা সিনেমা হল সংলগ্ন এলাকায় আলী খুলে বসেছিল একটি টর্চার সেল। ওই সেলে নিয়ে এলাকার নিরীহ মানুষ, প্রতিপক্ষ গ্রুপের কর্মীদের টর্চার করতো। প্রথমে আলী হোসেন এক আত্মীয়ের বাসায় বসবাস করতো। পরে শামীমাবাদ এলাকায় প্রবাসীদের বাসা দখল শুরু করে। প্রবাসীদের বাসা দখলের ঘটনায় আলী শামীমাবাদ এলাকায় বিতর্কের জন্ম দেয়। এ কারণে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ে এলাকায়। প্রায় দুই বছর আগে আলীর বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল স্থানীয়রা। করেছিল বিক্ষোভ। তাদের প্রতিরোধের কারণে এক সময় আলী হোসেন ওই এলাকা ছেড়ে চলে যায়। এরই মধ্যে সে তার গ্রুপ নিয়ে একদিন নগরীর তালতলা, রিকাবীবাজার ও মেডিকেল এলাকায় তাণ্ডব চালায়। ব্যবসায়ীদের দোকানপাট ভাঙচুর করে। আর এই ঘটনায় সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। কেন্দ্র থেকে জেলা ছাত্রলীগের উপর নেমে এসেছিল শাস্তির খড়গও। এদিকে- শামীমাবাদ থেকে বিতাড়িত আলী হোসেন অবস্থান নিয়েছিল নগরীর টিলাগড় এলাকায়। সেখানে সে টিলাগড় গ্রুপের ছায়াতলে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা চালায়। কিন্তু তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণেও ছাত্রলীগের টিলাগড় গ্রুপেও তাকে নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয়। টিলাগড় গ্রুপের নামেও কয়েকটি বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দেয় আলী নিজেই। এ কারণে আলী হয়ে উঠেছিল সিলেট জেলা ছাত্রলীগের অস্বস্তির কারণ। আর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে আলী কোনো গ্রুপেই ঠাঁই পাচ্ছিল না। এই অবস্থায় সে নিজেই তার বলয় তৈরি করে। পুলিশ জানায়- কয়েক মাস আলী হোসেন জোরপূর্বক নগরীর সুবহানীঘাট এলাকায় এক প্রবাসীর বাসা দখলে নেয়। এরপর ওই বাসা তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। প্রবাসীর পক্ষ থেকে বাসা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করলে সে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। নিরুপায় হয়ে হারুন উর রশীদ নামের ওই প্রবাসী সিলেটের শাহপরান ও কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছিলেন। মামলা দায়ের করা হলেও আলীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করছিল না। আর আলীও প্রবাসীর বাসার দখল ছাড়ছিল না। এদিকে- আলীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে আদালতে। সিলেটের কোতোয়ালি থানা পুলিশের ওসি সুহেল আহমদ গতকাল সন্ধ্যায় মানবজমিনকে জানিয়েছেন- আলী হোসেনের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা রয়েছে। সে পুলিশের তালিকাভুক্ত। কিন্তু তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। গতকাল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ আলীর দখল করা বাসায় অভিযান চালায়। আর ওই বাসা থেকে তারা আলীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে। তিনি বলেন- আলী সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। এদিকে- আলীর কর্মকাণ্ডে বিব্রত সিলেট জেলা ছাত্রলীগ। এবারের জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা অনেকটা পরিচ্ছন্ন। এরপরও বার বার বিতর্কিত নেতাদের কর্মকাণ্ডে দল পড়েছিল ইমেজ সংকটে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কাজ শুরু করেছেন সিলেটের শীর্ষ নেতারা। এই অবস্থায় আলীর কর্মকাণ্ড নিয়ে তারা ক্ষুব্ধ। সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ গতকাল জানিয়েছেন- আলীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে সেগুলো তারা কেন্দ্রের কাছে জানাবেন। এরপর কেন্দ্রীয় নেতাদের পরামর্শক্রমে তার বিরুদ্ধে দলীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন- সিলেট জেলা ছাত্রলীগ পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করে। কোনো একক নেতার কারণে দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হোক সেটি কেউ চায় না। সূত্রঃ মানবজমিন