সিলেটের ডাউকি ফল্ট পয়েন্ট দিয়ে বড় ধরণের ভুমিকম্পের সন্নিকটে বাংলাদেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জানুয়ারি ২০১৭, ৮:৩৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজঃ বড় ধরনের ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশের উত্তর-পূর্ব কোণের ও ইন্দো-বার্মা সাব বেল্টে ৫ থেকে ৬ মিটারের চ্যুতি ঘটানোর মতো শক্তি অর্জন করেছে ভূ-গর্ভ। এতে যে কোনো সময় ভূমিকম্প হলে তার মাত্রা ৭ দশমিক ৫ থেকে ৯ মাত্রা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগ ও বুয়েটের পুর কৌশল বিভাগের গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, বাংলাদেশের ভেতরে ভূমিকম্প হওয়ার মতো অনেক পয়েন্ট রয়েছে। এর মধ্যে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে দুটি পয়েন্ট। একটি দেশের উত্তর-পূর্ব কোণ সিলেট অঞ্চলের ডাউকি ফল্ট, আরেকটা হলো দেশের পূর্বে চট্টগ্রাম-ত্রিপুরা বেল্টে (ইন্দো-বার্মা) পাহাড়ি অঞ্চল।
এই দুইটি পয়েন্টে বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। উত্তর প্রান্তের ডাউকি ফল্টে সংকোচনের হার প্রতি একশ’ বছরে এক মিটার। গত ৫০০ থেকে ৬০০ বছরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের কোনো রেকর্ড নেই এই পয়েন্টে। তার মানে ৫-৬ মিটার চ্যুতি ঘটানোর মতো শক্তি অর্জন করেছে এ ফল্ট। এখানে ভূমিকম্প হলে রিখটার স্কেলে মাত্রা হবে ৭.৫ থেকে ৯ পর্যন্ত। আর এখান থেকে ঢাকা শহরের দূরত্ব মাত্র ১৫০ কিলোমিটার। আর ইন্দো-বার্মা সাব বেল্টে যে পরিমাণ শক্তি জমা আছে তাতে এই মুহূর্তে ভূমিকম্প হলে রিখটার স্কেলে তা হতে পারে ৮ দশমিক ৩ থেকে ৯ মাত্রার। দুটি অংশের প্লেট বাউন্ডারি হলো সুনামগঞ্জ/কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে। তিনি বলেন, ঢাকার মধ্যে বড় ভূমিকম্প সৃষ্টির মতো ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থা না থাকলেও সিলেট এবং চট্টগ্রামে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাজধানী ঢাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণাকারী নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ববিদ মিশায়েল স্টেকলার ন্যাচার জিওসায়েন্সে প্রকাশিত এক জার্নালে উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের ভূপৃষ্ঠের নিচে বড় ধরনের ভূমিকম্প দানা বাঁধছে। সম্ভাব্য ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দুর একশ’ কিলোমিটার ব্যাসের মধ্যে বাংলাদেশ এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলের ১৪ কোটি মানুষ বসবাস করে যা বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র এবং সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। বাংলাদেশের যে অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ সেখানে সস্তা নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তৈরি অপরিকল্পিত ভবনসহ ভারী শিল্প, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। যা ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
ভূমিকম্প সহনশীল ভবন নির্মাণ নিয়ে গবেষণাকারী বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ঢাকা শহরে সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে চার লাখের বেশি ভবন। রাজউক এলাকায় যে সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি যার অধিকাংশই ভূমিকম্প সহনীয় নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২৫ থেকে ২৮ শতাংশ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যার সংখ্যা প্রায় ৭২ হাজার। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ ভবন ঢাকায় এবং বাকি ১০ শতাংশ ভবন চট্টগ্রামে অবস্থিত। আমরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বলেছিলাম আপনারা সরকার থেকে ভবন মালিকদের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরীক্ষা করাতে। হাতে হাতে ধরে ভবনগুলো পরীক্ষা করিয়ে আসলে যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলো ভেঙে দিলে ঝুঁকি অনেকটা কমবে। এটা করতে গেলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০টি ইউনিটের মাধ্যমে ২ বছর সময় লাগবে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।