জকিগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে ওষুধ প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ ডিসেম্বর ২০১৬, ১:১০ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
জকিগঞ্জ উপজেলার সরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন অখ্যাত ওষুধ কোম্পানিগুলোর ওষুধ প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রোগীদের সরকারি হাসপাতাল থেকে ডাক্তারের চেম্বারে নিতেই যেন তারা মরিয়া। ডাক্তারের চেম্বার হতে রোগীরা বের হলেই চিকিৎসাপত্র নিয়ে টানাটানি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। অখ্যাত কোম্পানির ওষুধ প্রতিনিধিদের এ দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ চিকিৎসা নিতে আসা লোকজন। বেশি লাভের আশায় চিকিৎসকরাও যেন এসব কোম্পানির প্রতিনিধিদের খুশি করতে ব্যস্ত। প্রয়োজন ছাড়াই এসব কোম্পানির ওষুধ জুড়ে দেন চিকিৎসাপত্রে। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা সেবাপ্রত্যাশী রোগীদের চেয়ে ওষুধ প্রতিনিধিদের পেছনে সময় ব্যয় করার কারণে উপজেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জেলা সদর থেকে সবচেয়ে দূরের জকিগঞ্জ উপজেলাবাসীর একমাত্র হাসপাতালে একজন মুমূর্ষু রোগী চিকিৎসার জন্য হাসাপাতালে গেলেও ওষুধ প্রতিনিধিদের কবলে পড়তে হয়। ওষুধ প্রতিনিধিদের জন্য সরকারকর্তৃক সময় নির্ধারিত থাকলেও ডাক্তার ও ওষুধ প্রতিনিধি কেউই মানছেন না বরং ওষুধ প্রতিনিধিদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন খালেদ আহমদ নামের একজন ডাক্তার চেম্বারে রোগী সংগ্রাহককারী চক্র। হাসপাতালের বেশিরভাগ ডাক্তার জিম্মি হয়ে পড়েছেন প্রভাবশালী এ ডাক্তারের ক্ষমতার কাছে। জানা গেছে, হাসপাতালে রোগীর চাইতে ওষুধ প্রতিনিধিদের উপস্থিতি বেশি। হাসপাতালে কর্তব্যকালীন সময়েই প্রভাবশালী ওই ডাক্তার খালেদ আহমদ ওষুধ প্রতিনিধিদের প্রেরিত রোগী চেম্বারে দেখে ব্যস্ত সময় পার করেন। অফিস চলাকালে হাসপাতালে কোনো রোগী চিকিৎসা নিতে গেলে ডাক্তার খালেদের চুক্তিবদ্ধ ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি শাহাদাৎ হোসেন, রিপন আহমদ ও লিয়াকত শিকদার রোগীদের জোর করে ভালো চিকিৎসার প্রলোভন দিয়ে তার চেম্বারে নিয়ে যান। রোগীদের চেম্বারে পাঠানোর সময় সঙ্গে ওষুধ প্রতিনিধিরা একটি স্লিপ ধরিয়ে দেন। এই স্লিপ দেখে ডাক্তার সে কোম্পানির ওষুধ ওই ব্যবস্থাপত্রে লিখে দেন। আর রোগীকে গুনতে হয় ডাক্তারের ভিজিট বাবদ ৫০০ টাকা। হাসপাতালের সময়ে ভিজেটের টাকা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলে ওষুধ প্রতিনিধি ও ডাক্তারের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। মাইজকান্দি গ্রামের আবদুল হাদি বলেন, খালাকে নিয়ে সোমবার দুপুরে হাসপাতালে যাওয়া মাত্রই ওষুধ প্রতিনিধি লিয়াকত শিকদার আমাকে হাসপাতালে না গিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে শুরু করেন। কিন্তু আমি তার কথায় সাড়া না দিয়ে হাসপাতালে যাই। সেখানে গিয়ে জরুরি বিভাগে কোনো ডাক্তার পাইনি। দেখি জরুরি বিভাগে ওয়ার্ডবয় আবু বক্কর রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। আমার রোগী বেশি অসুস্থ হওয়ায় পরে বাধ্য হয়ে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির কথায় ডাক্তারের চেম্বারে যাই। ডাক্তার কোনো কোম্পানির ওষুধ আমার রোগীর ব্যবস্থাপত্রে লিখবেন তা নিয়েও শুরু হয় তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি। পরে ডাক্তার শুধু তাদের কথায়ই নিম্নমানের ওষুধ লিখলেন ব্যবস্থাপত্রে। বেকার আমাকে দিতে হয় ৫০০ টাকা ভিজিট। চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসা মাত্রই আবারও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ব্যবস্থাপত্র দেখানোর জন্য টানাটানি শুরু করে। আমার রোগীর অবস্থা খারাপ সেটা তারা বুঝতেই চায় না। তারা রোগীর অবস্থার দিকে না চেয়ে প্রতিটা রোগীরা ব্যবস্থাপত্রের ছবি রাখে। নিুমানের কোম্পানির ওষুধ লেখার কারণে ডাক্তারের এই ব্যবস্থাপত্রে রোগীরও অবস্থার উন্নতি হয়নি। পরে সিলেটে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয় বলে তিনি জানান। নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন চিকিৎসক জানান, কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী মার্কেটিং নীতির ফলে দেশে অপ্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবহার বেড়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি ওষুধ বাজারজাতকরণ নীতিমালা থাকলেও তা কেউই মানে না। ফলে অসাধু ও অর্থলোভী ডাক্তার, হাতুড়ে ডাক্তার ও ফার্মাসিস্টদের ফাঁদে পড়ে অশিক্ষিত ও দরিদ্র রোগীরা ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ সেবন করে প্রতারিত হচ্ছেন।