ভালোবাসার দেয়াল
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ ডিসেম্বর ২০১৬, ৪:১৭ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজঃ স্কুলের দেয়াল বা কলেজের বেঞ্চগুলোর কথা মনে আছে? কলমের আঁচড়ে, স্কেলের কাটাকুটিতে নানাভাবে, নানা ভঙ্গিমায় কতবারই না প্রথম প্রেম ও ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করেছেন আপনি। শুধু কি আপনি! এই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে প্রায় সবাইকে। কিন্তু কৈশোর, তারুণ্যের সেসব ব্যাক্তিগত ভালোলাগা লাজুক প্রকাশের ভেতরেই সীমাবদ্ধ ছিল। কজনই বা আর জেনেছে আপনার সে কীর্তি? যাকে ভালোবাসা, হয়তো শেষ পর্যন্ত তারও জানা হয়নি সে খবর। কিন্তু এই প্রতিবেদনে ভালোবাসা প্রকাশের যে স্থানটির কথা বলা হয়েছে তার ঠিকানা শুধু এর স্রষ্টাই নয়, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ জানে। এই ভালোবাসা নিয়ে, ভালোবাসার জন্য ও ভালোবাসা দিয়ে গড়ে তোলা স্থানটির নাম ভালোবাসার দেয়াল। প্যারিসের লে মূর দেস যে টেইম বা আই লাভ ইউ দেয়াল। শুরুটা হয়েছিল ফ্রেডরিক ব্যারনের হাত দিয়ে।
তবে আগ্রার তাজমহলের নির্মাতা শাহজাহানের মতো কোনো মমতাজ তার ছিল না। একান্ত ব্যাক্তিগত শখ থেকেই পৃথিবীর তাবত ভাষার ‘ আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বাক্যটি সংগ্রহ করতে শুরু করেন তিনি। একটি নোটবুক রাখেন সঙ্গে। তবে এজন্য পৃথিবীর দেশে দেশে ঘুরতে হয়নি তাকে। বাড়ির পাশের সব প্রতিবেশীদের কাছ থেকেই একে একে বিভিন্ন দেশের আমি তোমাকে ভালোবাসি বলার পদ্ধতি সেই দেশের ভাষায় লিখে নিতে থাকেন ফ্রেডরিক নিজের নোটবুকে। একে একে এক হাজার বারের মতো লেখা হয় বাক্যগুলো। তাও আবার এক-দুটো ভাষার নয়, পুরো তিনশ ভাষার। ভাবছেন এটুকুতেই শেষ? না, ফ্রেডরিকের পাগলামি থামেনি এখানেই। বাক্য সংগ্রহের পর তিনি হাজির হন ক্যালিওগ্রাফি বিশেষজ্ঞ ক্লেয়ার কিটোর কাছে। কিটো ফ্রেডরিকের কথানুযায়ী তৈরি করেন তিনশ ভাষার ভালোবাসা প্রকাশে ব্যবহৃত তিনশটি বাক্য।
ফ্রেডরিকের পরিকল্পনার বিশেষত্বের প্রতি মুগ্ধ হয়ে কাজটি শেষ করে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন আরেক ব্যাক্তি ড্যানিয়েল বোলোগ। শেষমেশ ৬১২টি অ্যানামেল লাভা দিয়ে তৈরি টাইলসের ওপর ৩০০টি ভাষায় আমি তোমাকে ভালোবাসি কথাটি লেখা পরিপূর্ণতা পায় এই মানুষগুলোর অক্লান্ত সাধনায়। বর্তমানে প্যারিসের মন্টমার্ট্রের আবিসেস উদ্যানের ভেতরে ভালোবাসার প্রতীক হৃদয়ের বেশকিছু চূর্ণ অংশ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে দেয়ালটি। বলা হয়, এর মাধ্যমে ভেঙে যাওয়া হৃদয় আর মানবতাকে বোঝানো হয়েছে। যেটি কিনা দেয়াল আবার জোড়া লাগানোর চেষ্টা করছে।