সিলেটের উসমানপুরের গায়েবী মসজিদ আজো বিস্ময় : জায়গা হয়নি প্রত্নতত্ত্বে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ নভেম্বর ২০১৬, ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রায় সহস্রাধিক বছরের পুরনো সিলেটের ওসমানীনগরের উসমানপুর গায়েবী মসজিদ। ঐতিহ্যের ধারক এই মসজিদটি আজো মানুষের কাছে বিস্ময় । কম সময়ের স্থাপনাগুলো প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকায় জায়গা করে নিলেও সুলতানী আমলে নির্মিত এই মসজিদটির জায়গা হয়নি । এলাকাবাসীর দাবী সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সহস্রাধিক বছরের পুরোনো এই মসজিদটিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করবেন।
পুরনো নির্মান শৈলীতে রঙের প্রলেপ দেয়া হলেও ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম মসজিদের অবকাঠামো পরিবর্তন করেননি এলাকাবাসী। পুরনো ঐতিহ্যেকে লালন করার প্রচেষ্টায় পরিবর্তনের কথা ভাবা হয়নি। মসজিদটি কে বা কারা নির্মান করেছিলেন, তা এত বছর কেটে গেলেও আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পারেননি বা জানার কোন উপায় নেই।
বিভিন্ন সুত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, সিলেটের তৎকালীন শাসক নাজিম উদদৌলার আমলে এ মসজিদটি জঙ্গলাচ্ছাদিত টিলা কেটে বের করা হয়। এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, টিলা খুঁড়ার পর মসজিদটিকে অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, হযরত শাহজালাল (রঃ) আগমনের আগে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। নতুবা হযরত শাহজালাল (রঃ) সিলেট বিজয়ের পরে নির্মিত হলে তা পরবর্তিতে লোক চক্ষূর অন্তরালে চলে যেত না। হযরত উসমান বোগদাদীর (রঃ) মাজার উক্ত মসজিদের একশ গজের মধ্যে এবং হযরত সৈয়দ উমর সমর কান্দির (রঃ) আওলাদ হযরত খন্দকার তাহির উদ্দিন (রঃ) সহ বেশ কিছু আউলিয়ার মাজার এ এলাকায় অবস্থিত। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্টিত মসজিদ ব্যবহার না হয়ে জঙ্গলে ঢাকা পড়ে যাবে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আউলিয়ারা এখানে অবস্থান করার পর থেকে এ অঞ্চল একেবারে মুসলিমশূন্য ছিলোনা কখনো।
এলাকার বিজ্ঞ মহলের অনুমান, হযরত শাহজালালের (রঃ) গৌড় বিজয়ের আগে কোন আরবীয় বণিক বা ধর্ম প্রচারক দল বুড়ী বরাকে নৌ পথে এসে এখানকার বৌদ্ধ বা হিন্দু বসতির কাছেই আস্তানা স্থাপন করেন এবং তাদের দ্বারাই মসজিদটি নির্মিত হয়। পরবর্তিতে বিভিন্ন রোগ বালাই, ভয়াবহ বন্যা-খরাজনিত দূর্ভিক্ষ, বিধর্মী লোকজন দ্বারা নির্যাতন ও জুলুম অত্যাচারের ভয়ে ভীত মুসলমানরা এই স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর সম্পুর্ণ মসজিদটিই ঘন জঙ্গল ও সম্ভবত উইপোকার মাটিতে ঢাকা পড়ে যায়। পরবর্তীতে গাছ কাটতে গিয়ে সন্দেহবশত মাটি খনন করা হলে মসজিদটি বেরিয়ে আসে।
এও জানা যায়, এটা মসজিদ না হিন্দু-বৌদ্ধ উপাসনালয় তা নিয়ে তর্কের পর সালিশ বৈঠকে মসজিদের কাঠামো, সুলতান খানা ও পূর্বমূখী দরজা দেখে বিষয়টির নিষ্পত্তি ঘটে। এবং তা অদ্যাবধি গায়েবী মসজিদ নামেই পরিচিত। গ্রামবাসী জানান, এখনো দূর দূরান্ত থেকে মসজিদ দেখার জন্য মানুষজন আসেন। মসজিদটির ঐতিহ্য ধরে রাখতে পুরো গ্রামবাসীর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের দাবী সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মসজিদটি তাদের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকায় জায়গা দিয়ে এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি সংরক্ষনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।